পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পুরী সফর ও শ্রী জগন্নাথ দেবের (Puri Temple) মন্দির দর্শন সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত গ্রাফিক সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো দাবি (fake claim) সহ ছড়ানো হচ্ছে। এই সময় (Ei Samay) গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন (misleading claim) প্রকাশ করে। বিভ্রান্তিকর গ্রাফিক পোস্ট করে আরেক গণমাধ্যম উত্তরবঙ্গ সংবাদ (Uttarbanga Sambad)।
বুম যাচাই করে দেখে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কারণে বিগ্রহের পুজো-অর্চনার বিশেষ রীতি সকালে সেরে নেওয়া হয়। বিকেলে মন্দির দর্শনে কোনও বিঘ্ন ঘটেনি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
সোশাল মিডিয়ায় ভইরাল হওয়া মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সহ ‘এই সময়’ গণমাধ্যমের গ্রাফিকটিতে লেখা রয়েছে, “মমতার পুজো দেওয়ার দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বন্ধ পুরীর মন্দির”।
ফেসবুকে এই গ্রাফিকটি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “জয় জগন্নাথ”।
ফেসবুক পোস্টের গ্রাফিকটি দেখুন এখানে।
বুম গ্রাফিকটিতে ‘এই সময়’ লেখা থাকায় ওই গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গ্রাফিকটির খোঁজ করে।
২২ মার্চ ২০২৩ গ্রাফিকটি পোস্ট করে ‘এই সময়’-এর ফেসবুক পেজে লেখা হয়, “বুধবার বন্ধ থাকবে পুরীর জগন্নাথ মন্দির, কিন্তু কেন? জানতে অবশ্য়ই পড়ুন... বিস্তারিত”।
বুম ওই পোস্টের সঙ্গে দেওয়া ২২ মার্চ প্রকাশিত এই সময়ের প্রতিবেদনটি পড়ে দেখে। প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়, ‘বানাকা লাগি’ রীতি পালনের জন্য বুধবার (২২ মার্চ) ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিগ্রহ দর্শন বন্ধ থাকবে। ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার শৃঙ্গার অনুষ্ঠানের জন্য গর্ভগৃহ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। আর্কাইভ প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ তাদের ফেসবুক পোস্টের গ্রাফিকে লেখে, “মমতার পুজো দেওয়ার দিন বন্ধ থাকরে পুরীর জগন্নাথ মন্দির জল্পনা তুঙ্গে”।
তথ্য যাচাই
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কারণে সময়সূচি রদবদল করে বিগ্রহের পুজো-অর্চনার বিশেষ রীতির সকালে সেরে নেওয়া হয়। বিকেলে মন্দির দর্শনে কোনও বিঘ্ন হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বুম গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরীতে পুজো’ কিওয়ার্ড সার্চ করে এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন দেখতে পায়।
২২ মার্চ প্রকাশিত ওড়িশা বাইটস গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর পারিবারিক পুরোহিত জগন্নাথ স্বৈন মহাপাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে পূজাঅর্চনা করেন। প্রায় ২০ মিনিট ধরে মন্দিরে গর্ভগৃহে বিগ্রহদের উদ্দেশ্য মুখ্যমন্ত্রী পুজো দেন।
২১৪ মিটার উচ্চতার ‘নীলচক্র’ পতাকা উন্মোচন দেখেন। মন্দির প্রাঙ্গণের অন্যান্য বিগ্রহ যেমন বিমলা, মহালক্ষীর উদ্দেশেও পুজো দেন। মন্দির চত্ত্বরে তিনি ১ ঘন্টা সময় কাটান।
শ্রী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ সেবায়তদের সঙ্গে আলোচনা করে বিকেলের আচারক্রিয়ার সকালে সেরে নেন যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকেলে মন্দির দর্শন করতে পারেন। সেকারণে সকালে ৫ ঘন্টার জন্য পুরীর মন্দির ভক্তদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এই বিষয়টি ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ ও ‘এই সময়’ গণমাধ্যমের গ্রাফিক ও প্রতিবেদনে উল্লেখ না করে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হয়।
আনন্দবাজার পত্রিকায় ২৩ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনেও (ই-পেপার পৃষ্ঠা ৩) প্রবীণ সেবায়েত তথা বড়গ্রাহী জগন্নাথ দয়িতাপতিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রী জগন্নাথদেবের শ্রীবিগ্রহের দর্শনের পাশাপাশি, বিমলা মন্দির, লক্ষী মন্দির, নবগ্রহ মন্দির দর্শন ও পরিক্রমা করেন”।
মন্দির দর্শনের দৃশ্য দেখুন নিউজ ১৮ ওড়িশা ও কলিঙ্গ টিভির রিপোর্টেও। ওই রিপোর্টগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীর মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে পুজো দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।