সোশাল মিডিয়ায় এক ব্যক্তিকে ব্যাপক মারধর (thrashed) করার ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তিটি মুসলিম (Muslim) এবং সাম্প্রদায়িক (communal claims) কারণেই হিন্দু কট্টরপন্থীরা তাকে এভাবে মারধর করছে।
বুম দেখে এই দাবিটা ভুয়ো, কারণ ওই ব্যক্তি ১৩ বছরের এক কিশোরীকে হেনস্থা করছিল বলেই শাহদারা এলাকায় গণপ্রহারের শিকার হয়। দিল্লির পুলিশ অফিসাররাও আমাদের জানান যে কিশোরীকে হেনস্থা করার দায়েই লোকটিকে মারধর করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে 'পকসো' আইনে (অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন নির্যাতনের) অভিযোগও দায়ের হয়েছে।
টুইটার ব্যবহারকারী সি জে ওয়ের্লেমান একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে এক ব্যক্তিকে মারধর করার এবং এক দল লোকের সেই দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখার ছবি রয়েছে। ভিডিওটিতে কোনও আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না, শুধু ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, "গতকাল দিল্লিতে হিন্দু উগ্রপন্থীরা এক মুসলমানকে নিগ্রহকরছে।"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
পোস্টটিতে ঘটনাটিকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দু কট্টরপন্থীদের সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০১২ সালে তুরস্কে ধর্নায় প্রশাসনের জলকামান ছড়াল ধর্মীয় রঙে ফ্রান্সের ঘটনা বলে
তথ্য যাচাই
পোস্টটির প্রতিক্রিয়ায় যে-সব জবাব এসেছে, তার পর্যালোচনা করে বুম দেখেছে, অনেকেই এটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা বলতে রাজি নন। তাঁদের মতে লোকটির জনতার হাতে মার খাওয়ার কারণ ওই কিশোরীকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ।
কেউ কেউ আবার ঘটনাটি বিশদ করতে এএনআই-এর একটি টুইটও উদ্ধৃত করেছেন।
মারধরে আহত ওই ব্যক্তিটি একটি ভিডিও কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বাও শেয়ার করেছেন। তাতে লোকটিকে শাহদারা থানার সামনে লোকজনের ঘেরাওয়ের মধ্যে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
বুম শাহদারা পুলিশ-এর ডিসিপি আর সত্যসুন্দরম-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কিশোরীকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগেই ওই লোকটিকে লোকজন পিটিয়েছে। তাঁর বয়ান, "গত মে মাসের ৭ তারিখে এম এস পার্ক থানা এক ১৩ বছরের কিশোরীর কাছ থেকে অভিযোগ পায় যে গত কিছু কাল ধরে টিউশন পড়তে যাওয়ার সময় ওই লোকটি তার পিছু নেয়। ৭ তারিখে মেয়েটি তার বাবা-মাকে সব জানিয়ে সঙ্গে করে পড়তে যায়l।বাবা-মা একটু দূরে দাঁড়িয়ে নজর রাখছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ওই লোকটি আসে এবং নাথু কলোনি চক-এর কাছে মেয়েটির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করে। এর পর যখন সে চলে যাওয়ার উপক্রম করে, তখনই তার বাবা-মা অন্য কিছু লোক জুটিয়ে তাকে ধরে ফেলেন এবং পেটাতে থাকেন। তখন বিট-অফিসার ঘটনাস্থলে পৌঁছে লেকটিকে বাঁচায়।"
তিনি জানান— "লোকটির পরিচয় জানা গেছে। ওর নাম ইরফান খান, বয়স ৩৭। তিনি একজন স্থানীয় লোক, বিবাহিত এবং ৩ সন্তানের বাবা। সে বেসরকারি অফিসে হিসাবরক্ষকের কাজ করে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির '৩৫৪-ডি' ধারায় এবং পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজত দেয়। তদন্ত চলছে।"
অতিরিক্ত রিপোর্টিং নিবেদিতা নিরঞ্জনকুমার
আরও পড়ুন: মিথ্যে দাবি সহ ছড়াল সিরিয়ায় ২০১৩ সালের গণহত্যার দৃশ্য