স্বাস্থ্য পরিষেবার (health service tax) ওপর কর বসানোর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে নারায়ন হেল্থ-এর প্রতিষ্ঠাতা ডঃ দেবী শেট্টি’র (Dr Devi Shetty) একটি পুরনো খোলা চিঠি (Open Letter) সোশাল মিডিয়ায় এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, সেটি সম্প্রতি লেখা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ওই চিকিৎসক ও উদ্যোগপতি, মোদী সরকারের দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া স্বাস্থ্য পরিষেবা করের প্রতিবাদ করেছেন ওই চিঠিতে।
বুম দেখে, চিঠিটি লেখা হয় ২০১১ সালে। সেই সময়, ইউপিএ-২ সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর কর বসালে, শেট্টি তার বিরোধিতা করেন। তা ছাড়া, ২০১৭ তে জিএসটি চালু হওয়ার পর, পরিষেবা কর তুলে নেওয়া হয়।
একাধিক টুইটার ব্যবহারকারী খোলা চিঠিটি শেয়ার করেছেন। তাঁদের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জহওর সরকারও আছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর মোদী সরকারের বসানো করের প্রতিবাদ করতেই উনি ওই চিঠিটি শেয়ার করেন।
‘আম আদমি’ বা সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে লেখা ওই চিঠিতে, শেট্টি ‘সাম্প্রতিক বাজেটে’ স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর ৫% সার্ভিস ট্যাক্স বসানোর কথা উল্লেখ করেন। সেটিকে উনি ‘মিজারি ট্যাক্স’ বা ‘দুর্দশা কর’ বলে আখ্যা দেন। যে রোগীরা বড় ধরনের অপারেশন করাবেন, তাঁদের ওপর ওই করের বোঝা কতটা হবে, তাও লেখেন ডাঃ শেট্টি।
জওহর সরকার চিঠিটির স্ক্রিনশট শেয়ার করে লেখেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর মোদী-নির্মলার সার্ভিস ট্যাক্স যে মধ্যবিত্ত ও গরিবদের সর্বস্বান্ত করবে, ডাঃ শেট্টির এই মতের সঙ্গে আমি এক মত। এই কর প্রত্যাহার করুন!@এআইটিসিঅফিসিয়াল @মমতাঅফিসিয়াল”
টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
সাম্প্রতিক বলে দাবি করে চিঠিটির স্ক্রিনশট ফেসবুক ও টুইটারে ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হয়।
তথ্য যাচাই
২০১৭ সালে জিএসটি চালু হওয়ার পর, ভারতে সার্ভিস ট্যাক্স বা পরিষেবা কর পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়া হয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে বুম দেখে, চিঠিটি পুরনো। এবং সেটিতে মোদী সরকারের সাম্প্রতিক বাজেটের কোনও উল্লেখ নেই।
তাছাড়া, জওহর সরকারের টুইটের ওপর মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, চিঠিটি ২০১১’য় লেখা হয়।
আমরা ‘দেবী শেট্টি হেল্থকেয়ার সার্ভিস ট্যাক্স মিজারি ট্যাক্স’ – এই কিওয়ার্ড সার্চ করি। ২০১১ সালের পোস্টও নজরে আসে।
তার ফলে আমরা, ‘মানি লাইফ’-এ প্রকাশিত ৮ মার্চ, ২০১১ প্রকাশিত একটি লেখা দেখতে পাই। তাতে শেট্টির খোলা চিঠির উল্লেখ ছিল। সেখানে উনি স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর ৫% সার্ভিস ট্যাক্স বসানোর সমালোচনা করেন। এবং জনসাধারণকে ওই করের বিরুদ্ধে ১২ মার্চ দিনটিকে ‘দুর্দশা দিবস’ হিসেবে পালন করার আহ্বান জানান।
৯ মার্চ, ২০১১ ‘ডেকান হেরাল্ড’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে, সরকারকে ওই কর প্রত্যাহার করানোর জন্য শেট্টির জনমত সৃষ্টির প্রয়াসকে তুলে ধরা হয়। সেই প্রসঙ্গে, বর্তমানে ভাইরাল হওয়া শেট্টির খোলা চিঠির উল্লেখ করা হয় লেখাটিতে।
ওই লেখায় বলা হয়, “‘এটা পরিষবা কর নয়। এটা দুর্দশা ট্যাক্স। কারণ, সরকার আপনার দুর্দশা থেকে টাকা বানাতে চাইছে’, নারায়ান হৃদয়ালয় ফাউন্ডেশন-এর ওয়েবসাইটে পোস্ট করা খোলা চিঠিতে তিনি এই কথা লেখেন।”
সেই সময়ের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাজেট ভাষণের ২৯ পৃষ্ঠায় আমরা দেখি স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর ৫% সার্ভিস ট্যাক্স বসানো হয়েছে।
২৩ মার্চ, ২০১১ প্রকাশিত টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র রিপোর্টে বলা হয়, হাসপাতাল ও তাঁর দলের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় স্বাস্থ্য পরিষেবা কর প্রত্যাহার করে নেন।
তাঁদের বক্তব্য জানার জন্য আমরা নারায়ন হেল্থ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাঁদের বক্তব্য জানা গেলে তথ্য-যাচাইটি সংস্করণ করা হবে।