বলিউড তারকা (Bollywood) আমির খান (Aamir Khan) অভিনীত পিকে (PK) ছবি মুক্তি পাওয়ার অব্যবহিত পরে বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের (Taslima Nasreen) ২০১৪ সালের একটি টুইট-কে ঘিরে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তিকর সম্পর্কহীন (fake context) উক্তি আবার জিইয়ে উঠল।
সম্প্রতি আমির খান ও তাঁর দ্বিতীয় পত্নী কিরণ রাও বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তারপর থেকে সোশাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের কটাক্ষের শিকার হয়েছেন এই যুগল। ২০১৫ সালে আমির খান অসিষ্ণুতার অভিযোগ তুললে আমিরখান বিজ্ঞাপিত পণ্য সংস্থার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে নেটিজেনদের একাংশ। পরে ওই বৈদ্যুতিন পণ্য পরিষেবা সংস্থা তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবীকরণ স্থগিত করে দেয়। পরের বছর অমির খান দেশ ছাড়ার কথা প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান খোলসা করেন। অসিষ্ণুতা প্রসঙ্গে আমিরের মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই তসলিমা নাসরিনের বিভ্রান্তিকর মন্তব্যটির বিকৃত করা সংযোজিত অংশটি ২০১৫ সালে জিইয়ে তোলা হয়। তসলিমা নাসরিনের নামে চলা সেই বিভ্রান্তিকর বক্তব্যটিই আবার সাম্প্রতিক মন্তব্য বলে জিইয়ে তোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজকুমার হিরানি পরিচালিত আমির খান ও অনুষ্কা শর্মা পরিচালিত বলিউড চলচ্চিত্র পিকের মূল বিষয়বস্তু ধর্ম বিশ্বাসকে কেন্দ্র করো কৌশলে জনতাকে বোকা বানানো ও অসাধুব্যক্তিদের ব্যাবসা করা। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর সিনেমাটি মুক্তি পায়।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই বার্তায় দাবি করা হয়েছে তসলিমা নাসরিন আজকে বলেছেন, "আমির খান ৩০০ কোটি টাকা উপার্জন করলেন পিকে-তে হিন্দু দেবতাদের উপহাস করে। আপনি যদি এটি পাকিস্তান ও বাংলাদেশে নির্মাণ করতেন অথবা মুসলমানদের ধর্ম নিয়ে তাহলে আপনাকে হয়ত ফাঁসি দেওয়া হতো। আর আপনি এখনও বলেন ভারত অসহিষ্ণু।"
ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
(মূল ইংরেজিতে লেখা: "Aamir Khan you earned 300 crores by mocking Hindu gods in PK if you would have done this in Pakistan, Bangladesh or on Muslim religion you would have been Hanged and still you say India is Intolerant")
তথ্য-যাচাইয়ের অনুরোধ সহ বুম এই বর্তাটি তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনেও পেয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে লেখিকা তসলিমা নাসরিন এই কথা বলেননি। তিনি বিষয়টি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে অস্বীকার করেন। ২৪ নভেম্বর ২০১৫ তসলিমা টুইট করে লেখেন ভাইরাল কথাটি তাঁর উক্তি নয়।
২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তসলিমা তাঁর টুইটে লখেন, "যদি পিকে বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তানে তৈরি হত তাহলে প্রযোজন, পরিচালক এবং অভিনেতা আমির খানকে হয়ত মেরে ফেলা হত অথবা জেলে থাকতেন এখন। ভালো যে এটা ভারত!"
(মূল ইংরেজিতে টুইট: "If PK was made in B'desh or Pakistan,producer,director & actor Amir Khan would have been killed or in prison by now. Good that it's in India!")
পরের বছর ২৪ নভেম্বর ২০১৫ তসলিমা নাসরিন আরেকটি টুইটে লেখেন, "আমরা পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশি অসহিষ্ণুতা পাই। চলচ্চিত্র তারকা আমির খান ও পরিবারের জন্য ভারত নিরাপদ দেশ হওয়া উচিত।"
তসলিমার এই দুটি টুইটকে ঘিরেই ওই মনগড়া উক্তিটি তৈরি করা হয়েছে। বুম তসলিমা নাসরিনের টুইটার ও ফেসবুকে আমির প্রসঙ্গে এছাড়া আর কোনও টুইট খুঁজে পায়নি। তসলিমা নাসরিনের উক্তি অস্বীকার প্রসঙ্গে ২৬ নভেম্বর ২০১৫ প্রকাশিত টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।
বর্তমানে সুইডেনের নাগরিক বাংলাদেশের নারীবাদী লেখিকা তসলিমা ২০১২ সাল থেকে ভারতে রয়েছেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে বই প্রকাশের পর কট্টরপন্থীদের প্রাণনাশের হুমকির শিকার হন তিনি। ২০০৭ সালে হায়দরাবাদে কট্টরপন্থীদের হাতে নিগৃহীত হন তিনি। তসলিমাকে নিরাপত্তার জন্য গৃহবন্দী করে রাখে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পরে রাজ্য ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতে যে কোনও বাণিজ্যিক সিনেমা প্রদর্শনের আগে ছাড়পত্র নিতে হয় কেন্দ্রীয় সার্টিফিকেশন বোর্ডের (CBFC) কাছ থেকে। বোর্ডের সদস্যরা সিনেমার অনুমোদন দিলে প্রযোজক সিনেমা দেখানোর অনুমতি পান। এর মাঝে কোনও ছবির ছাড়পত্র গত সমস্য হলে এতদিন ফিল্ম সার্টিফিকেট ট্রাইবুনালে আবেদন জানাতে পারতেন পরিচালক-প্রযোজক। ৪ এপ্রিল ২০২১ কেন্দ্রীয় সরকার অর্ডিনেন্স বলে ফিল্ম সার্টিফিকেট ট্রাইবুনাল ভেঙে দিয়েছে। এরপর শংসাপত্রজনিত সমস্যায় সরাসরি কোর্টের দারস্থ হতে হবে পরিচালক ও প্রযোজকদের।
আরও পড়ুন: সিংহ শাবক শুঁড়ে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে হাতি, "হাঁসজারু" ছবিটি ফোটোশপ করা