কলকাতায় আসা নিহত বাংলাদেশী সাংসদ আনওয়ারুল আজিম আনারের মৃতদেহ দাবি করে একটি মৃতদেহের অসম্পর্কিত ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বুম যাচাই করে দেখে ছবির মৃতদেহটি আনওয়ারুল আজিমের নয় কারণ তার মৃতদেহ এখনও অবধি উদ্ধার হয়নি। ভাইরাল পোস্টের মৃতদেহের ছবি অন্য এক ব্যাক্তির।
বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সাংসদ আনওয়ারুল কলকাতা প্রায়শই চিকিৎসার জন্য আসতেন। গত ১২ মে ২০২৪ কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। আনওয়ারুল ব্যারাকপুরে তার পরিচিত গোপাল বিশ্বাস নামক এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন এবং ১৪ মে বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরনোর পর তিনি নিখোঁজ হন।
ফেসবুকে আনওয়ারুল আজিম আনারের ছবি এবং একটি মৃতদেহের ছবির কোলাজ শেয়ার করছেন ব্যবহারকারীরা। ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে সেই মৃতদেহ আওয়ামী লীগের তিন বারের জয়ী সাংসদ নিহত আনওয়ারুলের। পোস্টটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, কলকাতার নিউটাউন থেকে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি, আনোয়ারুল আজীম আনারের "লা'শ" উদ্ধার।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই মৃতদেহের ছবি এবং সাংসদের ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে হিসাবে লিখেছেন, "ঝিনাইদহ ৪ কালীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় সংসদ সদস্য মোঃ আনারুল আজিম আনার এমপি মহোদয়র মৃত দেহ উদ্ধার করা হয় কলকাতা থেকে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে আনওয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যু সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে। আমরা আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনে ২৪ মে ২০২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে কলকাতায় এসে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশী সাংসদের খুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি তদন্ত করে ২ মাস আগে মুম্বই থেকে কলকাতায় আসা জিহাদ হাওলাদার নামক এক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করে। তদন্তকারী সুত্রে জানা গেছে ধৃত জিহাদ পুলিশকে জানায় অভিযুক্ত আখতারুজ্জামানের নির্দেশে সে সব কাজ করে এবং তাদের সাথে আরও চার বাংলাদেশী নাগরিক যুক্ত ছিল। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, "আনওয়ারুলকে তাঁরা প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। মৃতের পরিচয় যাতে বোঝা না যায় তাই তাঁরা শরীরের হাড় এবং মাংস আলাদা করে ফেলেন। এর পর হাড় ও মাংস টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে সব কিছু পলিথিন ব্যাগে ভরে ফ্ল্যাটের বাইরে গিয়ে ফেলে দেন।"
আমরা আনওয়ারুল আজিমের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া সংক্রান্ত কোনও প্রতিবেদন পাইনি। আমরা সময় নিউজ টিভির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ২৬ মে ২০২৪ করা একটি পোস্টে সাংসদের মেয়ের সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি বক্তব্য দেখতে পাই। তিনি বলেন আনওয়ারুল আজিমের কোনও রোজকার ব্যবহার করা জিনিস বা খুনের অস্ত্র যার ডিএনএ পরীক্ষা সম্ভব এমন ধরণের কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন।
এরপর, ভাইরাল পোস্টের মৃতদেহের ছবির সত্যতা জানতে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করে একটি ফেসবুক পোস্ট পাই। জাভেদ ইকবাল জর্ডার্ন নামক এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই মৃতদেহকে ঝিনাইদহের সাংসদের বলে দাবি করা একটি পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, "ফরহাদ রেজা নামে আর একটা আইডি থেকে ঠিক একই কাজ করা হয়েছে আমার ভাগিনার লাশের ছবি নিয়ে ও একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে কালিগঞ্জ 4 আসনের এমপি আনারুল সাহেবের লাশের ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে আমি এর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এই ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইলে আমরা ২২ মে ২০২৪ করা একটি পোস্টে ভাইরাল পোস্টে ব্যবহৃত মৃতদেহের ছবি দেখতে পাই। এই পোস্ট অনুযায়ী ছবিটিতে ঝিনাইদহের বাসিন্দা, তার আত্মীয় আসিফ পারভেজের মরদেহ দেখা যাচ্ছে যিনি ২১ মে ২০২৪ মারা গিয়েছেন। পোস্টটির ক্যাপশন হিসাবে লেখা হয়েছে, "২১/০৫/২০২৪ আমার বড় বোনের একমাত্র ছেলে আসিফ পারভেজ আনুমানিক ৯/৩০ ঘটিকার সময় স্টক জনিত কারণে ইন্তেকাল করেছে, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর, ঝিনাইদহ হামদহ খন্ধকার পাড়া।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
বুম জাভেদ ইকবাল জর্ডার্নের সঙ্গে ছবিটির ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের নিশ্চিত করে জানান ছবিটি তার তোলা। তিনি বুমকে বলেন তার আত্মীয়, "মারা গেছে ২১-৫-২০২৪ এবং আমি ছবি উঠিয়েছি ২১-৫-২০২৪।"