সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত ভাবে একটি বহুতলের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার বীভৎস এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন ভিডিওতে ঢাকার (Dhaka) হিন্দু হোস্টেলে বাংলাদেশী (Bangladeshi) জামায়েতের সদস্যদের হিন্দু (Hindu) ছাত্রদের উপর আক্রমণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি ভুয়ো। ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত; ভিডিওতে ছাত্রলীগের ছাত্রদের বহুতলের ছাদ থেকে ফেলে দিতে বা কার্নিশ থেকে ঝুলতে দেখা যাচ্ছে।
১:২৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে একাধিক ব্যক্তিকে একটি বহুতলের কার্নিশ থেকে ঝুলে থাকতে দেখা যায় ও কয়েকজনকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছাদ থেকে ফেলে দিতেও দেখা যায়। সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের জেরে বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া অসহিষ্ণু পরিস্থিতির মধ্যে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাবিতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করেছেন, "*হিন্দু হোস্টেল ঢাকা তে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আক্রমণ এ, কিভাবে হিন্দু ছাত্রগুলো কার্নিশ ধরে ঝুলছে দেখুন । কতজন উপর থেকে পড়ে গেল দেখুন ।বেচেঁ আছে না মরে গেছে,ভগবান জানেন।*"
ভিডিওটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ইউটিউবে বাংলাদেশে বহুতল থেকে ছাত্রদের ইচ্ছাকৃত ভাবে ফেলে দেওয়া সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে।
সার্চ করে আমরা একটি বাংলাদেশী গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে ১৬ জুলাই ২০২৪-এ আপলোড করা একটি ভিডিওতে একটি বহুতল থেকে কিছু ব্যক্তিকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া এবং প্রাণ বাঁচাতে কার্নিশ ধরে ঝুলে থাকার মর্মান্তিক ভিডিওটি দেখতে পাই।
১: ৩০ মিনিটের ওই ভিডিও প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘটনাটি চট্টগ্রামের মুরাদপুরের এবং এখানে আক্রান্ত হচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
এরপর, আমরা গুগলে ছাত্রলীগ কর্মীদের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা পোস্টের ১৭ জুলাই প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদন পাই। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বিস্ফোরণও করা হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের কর্মীদের উপর পাল্টা আক্রমণ করে এবং মুরাদপুরের এলাকার একটি বহুতল থেকে ছাত্রলীগের কর্মীদের নীচে ফেলে দেওয়ায় উদ্যত হয় এবং বহুতলের কার্নিশ ও গ্রিল ধরে ঝুলতে থাকা ব্যক্তিদের উপর ইট বর্ষণ করা হয়। ছাত্রলীগের কর্মীরা গণপিটুনিরও শিকার হয় বলে জানা যায়।
ঢাকা ট্রিবিউনও এই একই ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৭ জুলাই। প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী বহুতল থেকে পড়ে আহত হন। ঢাকা ট্রিবিউনকে এক প্রতক্ষ্যদর্শী বলেন ঘটনাটি ভাইরাল ভিডিওর বহুতলটি মুরাদপুরের মির মনজিল বহুতল।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম দাবি করেছেন সংঘর্ষে তাদের ২৯ জন কর্মী আহত হয়েছেন এবং তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।