সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কাল্পনিক ঘটনার নাট্যরূপের ক্লিপ বিভ্রান্তিকর দাবিসহ ভাইরাল হয়েছে যেখানে বোরখা পরিহিত এক মহিলাকে একটি মণ্ডপে গিয়ে দুর্গা পুজো (Durga Puja) করতে দেখা যায়। ব্যবহারকারীরা ভিডিওটি সত্যি হিসাবে শেয়ার করে দাবি করেছেন এক মুসলিম (Muslim) মহিলা বোরখা পরে পুজো দিতে আসলে প্রথমে বাধা পেলে পরে, সে বোরখা খুলে দেবী দুর্গার কাছে পুজো দেয়।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ভিডিওটি সঞ্জনা গলরানি নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়। আমরা দেখি ওই পেজের বেশিরভাগ ভিডিও কোনো কাল্পনিক ঘটনার নাট্যরূপ। ভাইরাল ভিডিওটিরও দাবি পরিত্যাগ অংশে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভিডিওটি একটি কাল্পনিক ঘটনার নাট্যরূপ।
বুম এর আগেও এই ধরণের কাল্পনিক ঘটনার নাট্যরূপের তথ্য যাচাই করেছে। পড়ুন এখানে।
১:৩০ মিনিটের ভাইরাল ভিডিওতে প্রথমে এক বোরখা পরিহিত মহিলাকে ফুল নিয়ে মা দুর্গার একটি মণ্ডপের সামনে আসতে দেখা যায়। সেখানে উপস্থিত অন্য লোকেরা বাধা না দিলেও, পুরোহিত বাধা দেয়। তবে, মেয়েটি বোরখা খুলে পুজো দিতে আসলে, পুরোহিতও আর বাধা দেয় না।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, "এই ভিডিওটা দেখে সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ধর্ম যার যার উৎসব তার। একটা হিন্দু মেয়ে বোরকা আর হিজাব পরে মন্দিরে গেলে মন্দিরের পূজারীরা তাকে বাধা দেয়। সে যখন বোরকার হিজাব খুলে ফেলে তখন তাকে এগ্রি করে। হিন্দু সম্প্রদায়িক ভাই-বোনেরা চায় আমরা যেন তাদের পূজা মন্ডলে না যায় আর তারাও আমাদের কোন উৎসবে আসবে না। বিগত বছরগুলোতে স্বৈরাচারী সরকার বারবার বলেছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই পরিকল্পনাটা ছিল ভারতের মোদীর তারা চেয়েছিল পুরা বাংলাদেশে যেন হিন্দুদের উৎসব ছড়িয়ে পড়ে সেখানে মুসলমানরা গিয়ে দেখুক আর সারা বাংলাদেশে মুসলমানদের উৎসবগুলা আস্তে আস্তে বন্ধ করা হোক যেমন মাহফিল গুলা বন্ধ করা হোক যেমনটা বাংলাদেশ সরকার বিগত বছরগুলোতে করে আসছিল মাহফিল বন্ধ করা আলেমদের গ্রেফতার করা এটা কার পরিকল্পনা ছিল?"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অন্য এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করেন, "একটা বোরখা পরা মেয়ে দুর্গা পূজা করতে আসলো। পুরোহিত তাকে বাধা দেয় স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু আশেপাশের অন্য হিন্দুরা মেয়েটির পক্ষ নেয়। অবশেষে মেয়েটি মুখ দেখিয়ে বোরখা খুলে পূজা করার অনুমতি পায়। ঘটনাটা আমার কাছে পজেটিভ লাগলো যখন হিন্দু মুসলমান অনেক বেশি গোড়া হয়ে উঠেছে। বিশ্বনাথ মন্দিরে বসে বিসমিল্লাহ খাঁ সানাই বাজাতেন। এমন সহিষ্ণু সমাজই তো চাই। ধর্ম মানা ও না মানা, সর্বধর্মীয় বিশ্বাস, বৈচিত্র্যময় সমাজ পৃথিবী ফিরে আসুক অথবা প্রথমবারের মত প্রতিষ্ঠিত হোক। অন্যের ধর্মালয়ে গিয়ে নিজ ধর্ম প্রচার আর এটাকে গুলিয়ে ফেলবেন না।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাইঃ ভাইরাল ভিডিওর ঘটনা কাল্পনিক একটি গল্পের নাট্যরূপ
বুম ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সঞ্জনা গলরানি নামক একটি ফেসবুক পেজে দেখে ১০ অক্টোবর, ২০২৪-এ ভাইরাল ভিডিওটি সেখানে পোস্ট করা হয়।
আমরা দেখি ভিডিওটির ক্যাপশনে একটি দাবি পরিত্যাগ অংশে জানানো হয়েছে সেটি একটি কাল্পনিক ঘটনার নাট্যরূপ। ভিডিওটির ইংরেজি ক্যাপশন অনুযায়ী, "এটা অপ্রত্যাশিত ছিল! দাবি পরিত্যাগঃ দেখার জন্য ধন্যবাদ। দয়া করে মনে রাখবেন এই পেজটিতে চিত্রনাট্য, প্যারোডি ও সচেতনতামূলক ভিডিও দেখানো হয়। এই শর্ট ফিল্মগুলি বিনোদন এবং শিক্ষাগত উদ্দ্যেশে তৈরি করা হয়। ভিডিওগুলিতে দেখানো সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক এবং এর উদ্দেশ্য সচেতনতা, বিনোদন এবং শিক্ষা বৃদ্ধি করা।"
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
কন্টেন্ট নির্মাতারা সামাজিক বিভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে এধরণের কাল্পনিক গল্পের নাট্যরূপ বানিয়ে থাকে। এই নাট্যরূপগুলি কোনও সত্য ঘটনার উপর নির্ভর করে তৈরি হয় না, ভিডিওগুলি নির্মাতাদের নিজস্ব কল্পনা থেকে সৃষ্ট হয়। তবে, অনেকসময় এই ভিডিওগুলি সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে সত্য ঘটনা হিসাবে বিভ্রান্তিকর বা ভুয়ো দাবিসহ ছড়িয়ে পরে।
আমরা পেজটিতে এই ধরণের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনার নাট্যরূপ দেখতে পাই।
এছাড়াও, পেজটির বর্ণনায় আমরা দেখি 'দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী' ও জনপ্রিয় 'ব্লগার' হিসাবে পরিচয় দেওয়া আছে।