বুম যাচাই করে দেখে এই দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন। এই খবরে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই কেননা প্যারাসিটামল থেকে 'ম্যাচুপ' (Machupo) ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডাক্তাররা সাধারনত জ্বর ও ব্যাথা উপশমে প্যারাসিটামল গোত্রের ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
ম্যাচুপো ভাইরাস হচ্ছে একধরণের এরিনাভাইরাস, যা সংক্রমণের ফলে রক্তক্ষরণ, জ্বর, ব্যাথা এবং তড়িঘড়ি মৃত্যু হয়। এরোসল, খাবার এবং সরাসরি সংস্পর্শ থেকে এই রোগ সংক্রমিত হয়।
স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুধুমাত্র দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়াতেই সীমাবদ্ধ। বলিভিয়াতে
ম্যাচুপো ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গকে 'কালো টাইফয়েড' বলা হয়। ১৯৫৯-৬০ সালে বলিভিয়াতে (Bolivia) এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে মহামারীর (Endemic) ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাল পোস্টে তিনটি ছবি সহ একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করা হচ্ছে। স্ক্রিনশটে লেখা রয়েছে, "সাবধান !!!! বাজারে নতুন একটি ঔষুধ #প্যারাসিটামল P-500 নামের ঔষুধ আসছে। যাতে #ম্যাচাপু নামের মরণাত্বক ভাইরাস পাওয়া গেছে… ঔষুধ টি খাবার পর পরই আপনার শারীরিক অবকাঠামোত এবং পুরো শরীরটাতে পচন ধরে যাবে। জনস্বার্থে তথ্যটি পরিবার পরিজনদের জানানোর অনুরোধ রইলো… সেই সাথে আপনার নিকটস্ত ঔষুধের দোকান গুলো পর্যবেক্ষণ করেন যাতে এমন ঔষুধ কেউ বিক্রি করতে না পারে"
তথ্য যাচাই
বুম দেখে প্যারাসিটামল পি ৫০০ ট্যাবলেট থেকে মানুষের দেহে ম্যাচাপু ভাইরাস সংক্রমণের খবরটি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং এই নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
বুম ইন্টারনেটে খোঁজ করে দেখে ২০১৭ সাল থেকেই ভারত এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলি দেশেই প্যারাসিটামল পি ৫০০ ট্যাবলেট থেকে 'ম্যাচাপু' ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমণ হতে পারে, এরকম গুজব ছড়াচ্ছে।
প্যারাসিটামল থেকে ভাইরাস সংক্রমণের গুজব নিয়ে ২০১৭ সালের
দ্য হিন্দুর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে ,ভারতে ম্যাচাপু ভাইরাস সংক্রমণের কোনও ঘটনা নেই। "যদি এই তথ্য সঠিক হত তবে ভারতে এই রোগ ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ত কেননা ভারতে প্যারাসিটামল খুব বেশী ব্যবহার করা হয়।" দ্য হিন্দুকে এই কথা জানা হায়দরাবাদ বিটস পিলানি'র বায়োলজির অধ্যাপিকা সুমন কপূর।
সংক্রামক রোগ বিষেষজ্ঞ সুনীতা রেড্ডি দ্য হিন্দুকে জানান, "ভাইরাসের প্রজননের জন্য একটি জীবিত ধারক দেহের প্রয়োজন হয়। অনেক ভাইরাস তাদের ধারকের দেহের বাইরে বেশী সময় সক্রিয় থাকতে পারে না।"
সেন্টার ফর ডিজিজ ডায়নামিক্স, ইকোনোমিক্স এন্ড পলিসি এর ডঃ জ্যোতি যোশী জৈন এই বিষয়ে
দ্য কুইন্টকে বলেন যে ভারতে ম্যাচাপু ভাইরাসের কোনও সংক্রমণ হয়নি। ডঃ জৈন আরও বলেন প্যারাসিটামল ট্যাবলেটে ভাইরাসের সংক্রমণ থাকলে তা ইন্ডিয়ান ফারমাকোপিয়া কমিশনে রিপোর্ট করা হত কিন্তু এইরকম কোনও খবর নেই।
২০১৭ সালে সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াতেও প্যারাসিটামল নিয়ে একই ধরণের ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পরেছিল। তখন
সিঙ্গাপুর এবং
মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রকাশ করে এই গুজবকে খণ্ডন করা হয়।