গোয়া (Goa) মুক্তি দিবসের (Liberation Day) এক অনুষ্ঠানে, ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) দাবি করেন যে, যখন পোর্তুগিজরা (Portuguese) গোয়া দখল করে, তখন ভারতের এক বিরাট অংশে রাজত্ব করছিলেন মুঘলরা (Mughal Empire)।
"গোয়া পোর্তুগিজ শাসনের অধীনে আসে এমন এক সময়, যখন দেশের এক বৃহৎ অংশে মুঘলরা রাজত্ব করছিলেন। তারপর থেকে ভারত অনেক রাজনৈতিক ঝড় ও পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। কিন্তু সময়ের ও রাজনীতির নানান পরিবর্তন সত্ত্বেও গোয়া তার ভারতীয়ত্ব ভুলে যায়নি, আর ভারতও গোয়াকে ভোলেনি," বলেন মোদী।
সংবাদ সংস্থা এএনআই, পিটিআই ও একাধিক সংবাদ সংস্থা মোদীর মন্তব্য কোনও যাচাই না করেই প্রকাশ করে।
বুম নথি ঘেঁটে ও ইতিহাসবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রী ভুল বলেছেন।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথি অনুযায়ী, পোর্তুগিজরা গোয়া দখল করে ১৫১০ সালে, বা প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর (Babur) দিল্লির সিংহাসেনে বসার ১৬ বছর আগে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো দাবিতে ছড়াল হলিউড অভিনেত্রী কেটি হোমসের ম্যাগাজিন ফোটোশ্যুট ছবি
পোর্তুগিজরা কবে গোয়া দখল করে?
বই ও ঐতিহাসিক নথি বলছে, পোর্তুগিজরা ১৫১০ সালে গোয়া দখল করে।
বেশ কিছু ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যাচ্ছে যে, থিম্মোজা (থিম্মাইয়া) নামের এক জলদস্যুর সাহায্যে ১৫১০ সালে পোর্তুগিজরা গোয়া দখল করেন। কিংবদন্তী অনুযায়ী, ওই জলদস্যু বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কাজে নিযুক্ত ছিল।
পোর্তুগিজ ইতিহাসবিদ দুয়ার্তে বারবোসা তাঁর 'বুক অফ দুয়ার্তে বারবোসা' বইতে লিখেছেন যে, ভারতে নিযুক্ত পোর্তুগিজ গভরনর আলফনসো ডি আলবুকার্ক গোয়া আক্রমণ করে তা দখল করে নেন।
ইলেইন স্যানসিউ তাঁর 'ইন্ডিজ অ্যাডভেঞ্চার: দ্য অ্যামেজিং কেরিয়ার অফ আলফনসো ডি আলবুকার্ক, ক্যাপ্টেন জেনারেল অ্যান্ড গভরনর অফ ইন্ডিয়া' বইতে লিখেছেন যে, মিশরের মামলুক সুলতানাতের সঙ্গে লোহিত সাগরে যুদ্ধ করতে যাওয়ার সময়, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৫১০, থিম্মাইয়ার সঙ্গে আলবুকার্কের দেখা হয়। থিম্মাইয়া ছিলেন এক ভারতীয় জলদস্যু। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কর্মচারি হিসেব উনি মিরজান'এ থাকতেন।
থিম্মাইয়া আলবুকার্ককে গোয়ার দুর্গ আক্রমণ করে ভারতে পোর্তুগিজ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করার পরামর্শ দেন। স্যানসিউ লিখেছেন, থিম্মাইয়া পোর্তুগিজদের জানান যে, বিজাপুরের ইয়ুসুফ আদিল শাহ বিজয়নগর সাম্রাজ্য থেকে গোয়া ছিনিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ওখানকার বন্দর আসলে পরিচালনা করে তুর্কি ও ফারসিরা। তারা মিশরের মামলুক সুলতানাতের জন্য সেখানে জাহাজ তৈরি করছে।
গোয়া কেন সেই সময় সুরক্ষিত ছিল না, সে বিষয়ে স্যানসিউ তাঁর বইতে লিখেছেন, গোয়ার বাসিন্দারা প্রায় সবাই হিন্দু ছিলেন। এবং তাঁদের "কৃতদাসের মতো কাজ করানো হত" আর "করের ভারে তাঁরা মাটিতে মিশে থাকতেন"।
থিম্মাইয়া আলবুকার্ককে বলেন, গোয়া একটি চমৎকার বন্দর। সেটি পশ্চিম উপকুলের কালিকটের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে।
তার কিছু দিন পরেই আলবুকার্কের নেতৃত্বে, পোর্তুগিজরা সহজেই পাঞ্জিম'র দুর্গ দখল করে নেয়। স্থানীয় মানুষ দুর্গের পতনকে স্বাগত জানান্।
ভাগমন্ডলা সীতারাম শাস্ত্রী তাঁর 'গোয়া-কানারা পোর্তুগিজ রিলেশনশিপ,১৪৯৮-১৭৬৩' বইতে বলেছেন, আদিল শাহ এপ্রিল-মে ১৫১০ সালে পোর্তুগিজদের আক্রমণ করেন ও গোয়া পুনর্দখল করেন। ২৫ নভেম্বর ১৫১০ পোর্তুগিজরা আবার গোয়া দখল করে ভারতে তাঁদের ঘাঁটি তৈরি করেন।
গোয়া সরকারের তথ্য ও প্রচার দফতরের ওয়েবসাইটে বলা আছে যে, পোর্তুগিজরা ১৫১০ সালে গোয়া দখল করেন।
মুঘলরা কি ওই সময় রাজত্ব করতেন?
না।
বাবর দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদিকে প্রথম পানিপতের যুদ্ধে হারানোর পরই ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন লার্নিং'এর তথ্য অনুযায়ী, তাইমুর ও চেঙ্গিস খানের বংশধর বাবর, ১৫১৭ সালে সমরখন্দ ত্যাগ করে ভারতের ওপর নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৫২০ সালে তিনি শিয়ালকোট দখল করেন। ১৫২৪ সালে লাহোর দখল করে নেন। তারপর ১৫২৬ সালে দিল্লি সুলতানি যুগের পতন ঘটান।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নাজাফ হায়দার মনে করেন মুঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয় ১৫২৬ সালে। পোর্তুগিজরা গোয়া দখল করে তার অনেক আগে।
"উত্তর ভারতে ১৫২৬ সালে মুঘলরা ক্ষমতায় আসেন। তাঁরা গুজরাত দখল করতে সক্ষম হন ১৫৭২ সালে। তারপর তাঁরা পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের দিকে অগ্রসর হন। পোর্তুগিজরা যখন গোয়া দখল করেন, তখন মুঘলরা ক্ষমতায় ছিলেন না," প্রফেসর হায়দার বুমকে বলেন।
আরও পড়ুন: মন্দিরের পুরোহিতদের জন্য ১৫ হাজার টাকা অসম সরকারের এককালীন অনুদান