সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচার করতে গেলে লকেট চট্টোপাধ্যায় ও তার দলের সহকর্মীদের গ্রামবাসীরা তাড়িয়ে দিয়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল এই দাবি বিভ্রান্তিকর কারণ ভিডিওটি ২০১৭ সালের অগস্ট মাসের এবং তার সাথে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
সমাজমাধ্যমে ছড়ান সেই ভিডিওতে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় ও তার দলের অন্যান্য কর্মীদের একটি নদীর পারে নৌকায় দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রামের মহিলাদের কিছু বোঝানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। তবে তাদের গ্রামবাসীদের বোঝানোর সেই চেষ্টা দৃশ্যতঃ অসফল হয় এবং গ্রামবাসীদের তাদের নৌকা থেকে না নামতে দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতেও দেখা যায়। লকেট চট্টোপাধ্যায় এমতাবস্থায় সেখানে উপস্থিত গ্রামের মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আসবো না, শুনুন, আসবো না, আসছি না, আসছি না।"
এবছরের ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচন। হুগলিতে এবার বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রচনা ব্যানার্জী। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, রাজনীতির ময়দানে বর্তমানে যুযুধান হুগলির দুই প্রার্থীই একসময় টলিউডে পরস্পরের সহ-অভিনেতা ছিলেন। পঞ্চম দফায় মে মাসের ২০ তারিখে হুগলিতে হবে ভোটদান পর্ব।
পুরনো এই ভিডিও আসন্ন নির্বাচনের সাথে যুক্ত করেই বিভ্রান্তিকর দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে ফেসবুকে। এক ফেসবুক পেজের তরফ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়, "প্রচারে বেরোলেই এমনি করে সবাই আমাদের তাড়া করছে কেনো।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফেসবুকে একজন ব্যবহারকারী এই একই ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, "প্রচারে বেরোলেই এমনি করে সবাই।"
ভিডিওটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ইউটিউবে কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০১৭ সালের এবিপি আনন্দের প্রকাশিত এক ভিডিও রিপোর্ট পায়। আমরা "সন্দেশখালি বৃদ্ধা খুন মামলা: বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় সন্দেশখালির স্থানীয় মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন " শিরোনামসহ প্রকাশিত ওই ভিডিওতে ভাইরাল ভিডিওর মতন একই রকম দৃশ্য দেখতে পাই।
আমরা লক্ষ্য করি ৩ অগস্ট ২০১৭ তারিখে আপলোড করা ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ ওই ভিডিওতেও এক নদীর পারে দাঁড়িয়ে গ্রামের মহিলারা লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। লকেট চট্টোপাধ্যায় ও তার দলের সহকর্মীদেরও নৌকার থেকে নামতে গ্রামবাসীদের বাধার সম্মুখীন হতে দেখা যায়।
সেই ভিডিও রিপোর্ট দেখুন এখানে।
এই ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমরা গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করি। সেখান থেকে ৩ অগস্ট ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত আনন্দবাজার অনলাইনের একটি প্রতিবেদন আমরা পাই।
"সন্দেশখালি গেলেন লকেট, ফিরতে হল বিক্ষোভের মুখে" শিরোনামসহ প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সন্দেশখালিতে ধর্ষণের শিকার ৬২ বছরের বৃদ্ধার মৃত্যুর পর তার বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভের মুখে পড়েন লকেট চট্টোপাধ্যায়। বিক্ষোভের কারণে মাঝপথ থেকেই ফিরে যেতে হয় তাকে। ওই প্রতিবেদন থেকে আমরা আরও জানতে পারি লকেট চট্টোপাধ্যায় ও তার সঙ্গে থাকা বিজেপির কর্মীরা নৌকো থেকে নামতে পারার আগেই তাকে দেখে মহিলা গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তারা বিজেপি নেত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তোলেন বৃদ্ধাকে আগে দেখতে না এসে মারা যাওয়ার পর তিনি কেন এসেছেন সেখানে। লকেট চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন গ্রামের সাধারণ মহিলারা নন, তাকে বৃদ্ধার বাড়িতে যেতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল কর্মীরা।
আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
অতএব, এর থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায় ২০১৭ সালের এই ভিডিওর সাথে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে চলা লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের কোনও সম্পর্ক নেই।