শুক্রবার জি নিউজ (ZEE News) মিথ্যে দাবি করে যে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi) উদয়পুরের (Udaipur) বীভৎস হত্যাকাণ্ডের দুই অভিযুক্তকে 'বাচ্চা' (Kids) বলে বর্ণনা করেছেন।
তাঁর লোকসভা কেন্দ্র কেরলের ওয়েনাড-এ, তাঁর কার্যালয়ে ভাঙচুর সম্পর্কে তাঁর মন্তব্যকে উদয়পুরের হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত উক্তি বলে চালায় হিন্দি সংবাদ চ্যানেলটি। গত মাসে, উদয়পুরে এক দর্জিকে ক্যামেরার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জি নিউজ পরে ভিডিওটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরিয়ে নেয় এবং টুইটটিও ডিলিট করে দেয়।
এক বীভৎস ঘটনায়, অভিযুক্ত গৌস মহম্মদ ও মহম্মদ রিয়াজ আনসারি, কানাহাইয়ালাল নামের উদয়পুরের এক দর্জিকে কুপিয়ে হত্যা করে। কারণ, পয়গম্বর মহম্মদের বিরুদ্ধে প্রাক্তন বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার মন্তব্য সমর্থন করেছিলেন কানাহাইয়ালাল। তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দুই অভিযুক্ত যে দু'টি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন, তারই ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। একটিতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি দেখানো হয়। অন্যটিতে, হত্যার দায় স্বীকার করতে ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হুমকি দিতে দেখা যায় তাঁদের। ওই হত্যার পর উদয়পুরে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফলে, সেখানে কারফিউ জারি করা হয়, ও বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট।
কেরলে কংগ্রেস অফিস যাঁরা ভাঙচুর করেন, তাঁদের সম্পর্কে রাহুল গাঁন্ধীর মন্তব্য দেখান জি নিউজের সঞ্চালক রোহিত রঞ্জন। কিন্তু তিনি মিথ্যে দাবি করেন যে, উদয়পুরের হত্যাকারীদের 'বাচ্চা' বলে আখ্যা দেন রাহুল গাঁধী এবং বলেন তাদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।
জি নিউজের সম্প্রচারিত ভিডিওটি নিচে দেখুন।
জি নিউজ ওই মিথ্যে দাবি করার পর, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বেশ কিছু নেতা সেটিকে শেয়ার করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠোর, অজয় শেরাওয়াত ও সুব্রত পাঠক। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁদের টুইটগুলি পরে তুলে নেন।
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
দক্ষিণপন্থী টুইটার ব্যবহারকারী অভিজিৎ আইয়ার-মিত্রও মিথ্যে দাবিটি শেয়ার করেন। সঙ্গে লেখেন, "আর কত নীচে নামা যায়। আপনি যদি রাহুল গাঁধী হন, তাহলে গহ্বরের কোনও তল থাকে না।"
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো দাবি: মুসলমান শিশুদের হাসপাতালে জন্মের হার অন্য ধর্মের চেয়ে বেশি
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, ২৪ জুন ২০২২ রাহুল গাঁধীর কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় যারা জড়িত ছিল রাহুল গাঁধী তঁদের সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেন।
জি নিউজের ক্লিপে তাঁকে বেশ কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সেই সূত্র ধরে, আমরা সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান করি। দেখা যায়, ওই একই ভিডিও, ১ জুলাই, ২০২২তে 'এশিয়ানেট' আপলোড করে। রাহুল গাঁধী ওয়েনাড়ে তাঁর পার্টি অফিসে গিয়ে ছিলেন। এবং ওই ভাঙচুরের ঘটনার সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
এশিয়ানেট-এর আপলোড করা ভিডিওটির ৪৪ সেকেন্ড সময়চিহ্নে, একজন সাংবাদিক গাঁধীর কাছে জানতে চান যে, তাঁর কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়ে গিয়ে তিনি কি দেখেন।
উত্তরে রাহুল গাঁধী বলেন, "প্রথমত, ওটা আমার অফিস। কিন্তু আমার অফিস হওয়ার চেয়েও বড় কথা, ওটা ওয়েনাডের জনগনের অফিস। ওটা ওয়েনাডের জনসাধারণের কণ্ঠস্বরের অফিস। যা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দেশের সর্বত্র এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে, হিংসার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু হিংসা কোনও সমস্যারই সমাধান করতে পারে না। কিন্তু যে বাচ্চারা এ কাজ করেছে, তারা ঠিক কাজ করেনি। এটা ভাল কাজ নয়। ওরা দায়িত্বহীন কাজ করেছে। কিন্তু তাদের ওপর আমার কোনও রাগ নেই বা তাদের প্রতি আমার কোনও শত্রুতা নেই।"
রাহুল গাঁধীর যাচাই করা নিজস্ব ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি আপলোড করা হয়।
নূপুর শর্মা সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্ট-এর মতামত সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে রাহুল গাঁধী বলেন বর্তমান শাসক দল দেশে ক্রোধ ও ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
ওই কথোপকথনে, উদয়পুর সম্পর্কে তাঁকে কোনও প্রশ্ন করা হয়নি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৪ জুন, সিপিএম পার্টির ছাত্র শাখা স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া'র একশ'রও বেশি কর্মী, ওয়েনাড়ের কালপেট্টায় রাহুল গাঁধীর অফিসে পৌঁছন। তাঁরা দাবি করছিলেন যে, পরিবেশ সংক্রান্ত সুপ্রিমকোর্টের একটি নির্দেশের ব্যাপারে তিনি হস্তক্ষেপ করুন, যাতে মানুষের মনে আশঙ্কা দূর হয়। সুপ্রিমকোর্ট বলেছে যে, প্রতিটি সংরক্ষিত বনভূমির চারপাশে এক কিলোমিটার চওড়া 'ইকো সেনসিটিভ জোন' বা পরিবেশ-সংবেদনশীল জায়গা তৈরি করতে হবে।
বলা হচ্ছে, এসএফআই-এর কর্মীরা পাঁচিল টপকে, স্লোগান দিতে দিতে কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। তারপর সেখানকার আসবাবপত্র ভাঙেন। পরের দিন, ওই ঘটানার পরিপ্রেক্ষিতে কেরল পুলিশ ২৫ জনকে গ্রেফতার করে।
আরও পড়ুন: উদয়পুরে দর্জি খুনের ঘটনায় সম্পর্কহীন পুরনো ছবি বিভ্রান্তি সহ ছড়াল