সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভিডিওতে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) রানাঘাটের (Ranaghat) একজন জিম প্রশিক্ষককে এক মহিলাকে নির্মমভাবে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে ভুয়ো সাম্প্রদায়িক (Communal) দাবি করা হচ্ছে যে একজন মুসলমান প্রশিক্ষক হিন্দু মহিলাদের উপর আক্রমণ করছে।
বুম রানাঘাট জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই ঘটনার সাম্প্রদায়িক দিক নস্যাৎ করে দেন এবং জানান নির্যাতিতা এবং আততায়ী দুজনেই হিন্দুধর্মাবলম্বী।
ভাইরাল ভিডিওটি একটি ৫৪ সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজ যেখানে আক্রমণকারী ব্যক্তিকে নির্যাতিতা পালানোর চেষ্টা করলে তার চুলের মুঠি ধরে আটকে মারধর করতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে মহিলাকে মাটিতে পরে যাওয়ার পর সাহায্য চাইতেও শোনা যায়।
এই মর্মান্তিক ভিডিওটির সাথে শৌর্য্য চলচ্চিত্রটি থেকে কে কে মেননের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করা হচ্ছে। স্ক্রিনশটের দৃশ্যে কে কে মেননকে অনুপ্রবেশকারীদের পতঙ্গ বলতে দেখা যায়।
এক্সে পোস্টটি শেয়ার করে ক্যাপশন হিসাবে লেখা হয়েছে, "অমানুষ আব্দুল হিন্দু মেয়েদের উপর নির্যাতন করছে রানাঘাট #পশ্চিমবঙ্গ বডিল্যাব পাওয়ার জিমে আমি যত জানতে পারি তত বুঝি যে ব্রিগেডিয়ার প্রতাপ ঠিক ছিল।" (অনুবাদ করা)
বুম পোস্টটির গ্রাফিক প্রকৃতির জন্য সেটি অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পোস্টটির আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে এই ঘটনা সংক্রান্ত জি নিউজের একটি প্রতিবেদন পায়। ৬ মে ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি রানাঘাটের বডিল্যাব পাওয়ার জিমে ঘটনাটি ঘটে। নির্যাতিতা মহিলার সঙ্গে জিম প্রশিক্ষকের কথা কাটাকাটি হয় এবং তারপরেই অভিযুক্ত প্রশিক্ষক মহিলার উপর আক্রমণ করে যদিও আক্রমণের কারণ জানা যায়নি। প্রতিবেদনটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এছাড়াও, আমরা টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ৬ মে ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে ঘটনার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারি। প্রতিবেদন অনুযায়ী ভাইরাল ভিডিও রানাঘাট জেলা পুলিশের নজরে আসলে তারা অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
আমরা এক্সে রানাঘাট জেলা পুলিশের একটি পোস্ট থেকে জানতে পারি পুলিশ ভিডিও থেকে দোষীকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করেছে। একজন এক্স ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে পোস্ট করলে সেখানে রানাঘাট জেলা পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, "ভিডিও থেকে দোষীকে চিহ্নিত করে রানাঘাট জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। দোষীর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিতা মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং বর্তমানে তিনি সুস্থ ও সুরক্ষিত আছেন।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বুম রানাঘাট জেলা পুলিশের সুপার কুমার সানি রাজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই বলেন এবং ঘটনাটি ৯ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখে ঘটেছে বলে জানান। তিনি বুমকে বলেন, "দোষীকে আমরা রাজদীপ দে বলে চিহ্নিত করেছি এবং নির্যাতিতার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দাবিগুলি ভুয়ো এবং দে আর নির্যাতিতা দুজনেই হিন্দু। নির্যাতিতা অভিযুক্তের প্রেমিকা বলে জানা গিয়েছে।"
কুমার সানি আমাদের আরও জানায় যে রাজদীপ দের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সে এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। তিনি বলেন, "এটি মারধরের ঘটনা এবং কোনও যৌন হেনস্থার ঘটনা নয়।"