সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অসম্পর্কিত ভিডিও ছড়িয়ে ভুয়ো দাবিতে বলা হয় ভিডিওটিতে কলকাতার (Kolkata) আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital) খুন হওয়া ডাক্তারের পোস্টমর্টেমের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। নেটিজেনদের অনেকে সেই ভিডিও শেয়ার করে লেখেন এভাবেই গত ৯ অগাস্ট খুন হওয়া নির্যাতিতার ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সেখানে উপস্থিত থাকা ডাক্তার।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে বিছানায় শুয়ে থাকা এক ব্যক্তির সামনে থেকে চোখের জল মুছতে মুছতে অন্য একজন ব্যক্তিকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়াও সেই ভিডিওতে সাদা অ্যাপ্রোন ও মুখে মাস্ক পড়ে কয়েকজন ব্যক্তির সেখানে তাদের দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যও লক্ষ্য করা যায়।
বুম দেখে সমাজমাধ্যমে ছড়ান এই ভিডিওর সাথে সাম্প্রতিক আরজি কর কাণ্ডের কোনও যোগ নেই; এবছরের জুলাই মাস থেকে ভিডিওটিকে ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়।
গত ৯ আগস্ট ভোররাতে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হলে ধর্ষণ ও খুনের শিকার হন চেস্ট মেডিসিন বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার। এই নৃশংস ঘটনা র্সবসমক্ষে আসলে ডাক্তারদের পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ জনতা ও সমাজের বিভিন্ন অংশের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা দোষীদের শাস্তি ও বিচার চেয়ে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই ঘটনার মামলার ভার নিয়েছে এবং বর্তমানে, কলকাতা পুলিশের থেকে তদন্তের দায়ভার নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদনকারী সংস্থা সিবিআই।
মর্মান্তিক এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিওটি শেয়ার করে তার ক্যাপশন দেওয়া হয়, "(নির্যাতিতার নাম) পোস্টমর্টেমে ডাক্তাররাও কেদেছে।" একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটিকে শেয়ার করে লেখেন, "অভয়া মরাদেহ পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে ডাক্তারও কেঁদেছে।"
(ভারতীয় আইনানুসারে নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করা নিষিদ্ধ)
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির তথ্য যাচাই করতে প্রথমে ভাইরাল ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। আমরা সেই অনুসন্ধানের সূত্র ধরে ভাইরাল ভিডিওটিকে ৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে করা এক ফেসবুক পোস্টে খুঁজে পাই।
ফেসবুকে আপলোড করা সেই ভিডিওর উপর আমরা ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় থাকা এক ক্যাপশন দেখতে পাই যার অনুবাদ, "ভগবানের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে ডাক্তাররাও সাধারণ মানুষ।"
জুলাই মাসে করা সেই ফেসবুক পোস্টের আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এছাড়াও আমরা ওই ভিডিওতে এক টিকটক অ্যাকাউন্টের নাম লক্ষ্য করি। এই সুত্রধরে, @moms.bimo08 অ্যাকাউন্টটি টিকটকে সার্চ করলে @syfira.gemoy অ্যাকাউন্টটিতে নিয়ে যায় যেখানে আমরা ভাইরাল ভিডিওটিকে খুঁজে পাই।
আমরা সেখানে দেখি, ভিডিওটি টিকটকে এবছরের জুলাই মাসের ৬ তারিখে আপলোড করা হয়। এর থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, গত ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালে হত্যা হওয়া চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের সাথে এই ভিডিওর কোনও সম্পর্ক নেই।
১২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনার রাতে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে কর্তব্যরত সাত জন ডাক্তারদের দেকে পাঠানো হয় লালবাজার থেকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, "এঁদের মধ্যে চার জন মৃতা জুনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। বাকি তিন জন ওই চার চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ওই দিন।"
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, "পুলিশের একটি সূত্রে খবর, ঘটনার রাতে ১১টা নাগাদ খাওয়াদাওয়ার পর দায়িত্ব সহকর্মীদের বুঝিয়ে দিয়ে জুনিয়র চিকিৎসক চলে যান সেমিনার হলে। পড়াশোনা করতে করতে খানিক বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। রাত ২টো নাগাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু কথা বলতে সেমিনার হলে আসেন হাসপাতালের এক জন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, দায়িত্বে থাকা আর এক চিকিৎসকের সঙ্গে ওই ব্যাপারে কথা বলতে বলে পড়াশোনা করতে থাকেন জুনিয়র চিকিৎসক। সেই কথার পর তিনি চলে যান।"