আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (RG Kar Medical College and Hospital) জুনিয়র চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম প্রতিবাদী জুনিয়র চিকিৎসক ডাঃ দেবাশিস হালদারের ছবি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সমালোচক সৌতাজ বিশ্বাস বলে ভুয়ো দাবি করে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল পোস্টে সৌতাজ বিশ্বাস নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা কিছু পোস্টের স্ক্রিনশট ও সৌতাজ বিশ্বাস দাবি করে এক ব্যক্তির ছবি দেখা যায়।
বুম ডাঃ দেবাশিস হালদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করে বলেন সৌতাজ বিশ্বাস ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি তার নয়।
৯ অগাস্ট, ২০২৪-এ আরজি কর হাসপাতালে চেস্ট মেডিসিন বিভাগের তরুণী জুনিয়র চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর জুনিয়র চিকিৎসকেরা ন্যায়বিচার ও দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন জনসাধারণের সমর্থনে। এই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও পুলিশকে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। ৪২ দিন কর্মবিরতি চলার পর, জুনিয়র চিকিৎসকেরা পুনরায় কাজে যোগ দেন গত ২১ সেপ্টেম্বর।
কর্মবরতি চলাকালীন বেশ কয়েকবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করার আহ্বান পান জুনিয়র চিকিৎসকরা তবে, তাদের বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করার দাবি নিয়ে মতবিরোধের ফলে বৈঠকগুলি হয়না। অবশেষে, ১৬ সেপ্টেম্বর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। এই পরিস্থিতিতে পোস্টটি ভাইরাল হয়।
ফেসবুকে একজন ব্যবহারকারী ক্যাপশন হিসাবে লিখেছেন, "এই হল অতি বাম পন্থী হার্মাদ Soutaj Biswas.. এটা ডাক্তারের ভাষা? প্রত্যেকবার এই ছেলেটার জন্যেই ভেস্তে যাচ্ছে। এটাকে আগে বয়কট করা হোক। এরপরও যারা ডাক্তারদের সমর্থন করবে তাদের জন্য রইল সমবেদনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি এই নোংরা ভাষার জন্য ডাক্তারদের জানাই ধিক্কার। ছিঃ ছিঃ...."
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম বিভিন্ন সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে ইউটিউবে টিভি৯ বাংলার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এর একটি সরাসরি সম্প্রচার দেখতে পায় যেখানে ভাইরাল ছবির ব্যক্তিকে ডাঃ দেবাশীস হালদার বলে পরিচয় করিয়ে দেন অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক। ওই অনুষ্ঠানে, ডাঃ হালদারের সঙ্গে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদী আরও একজন জুনিয়র চিকিৎসক ডাঃ অনিকেত মাহাতও উপস্থিত ছিলেন।
দেখুন এখানে।
নীচে টিভি৯ বাংলার সরাসরি সম্প্রচার থেকে নেওয়া ডাঃ হালদারের স্ক্রিনশট ও ভাইরাল ছবির একটি তুলনা দেওয়া হল।
এছাড়াও, বুম আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। উনি বুমকে নিশ্চিতভাবে জানান সৌতাজ বিশ্বাস ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি তার নয়।
এরপর, আমরা ফেসবুকে বিতর্কিত সৌতাজ বিশ্বাস অ্যাকাউন্টটি খুঁজে বের করি।
আমরা ওই প্রোফাইলে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ করা একটি পোস্ট দেখতে পাই যেখানে তিনি ভাইরাল দাবিটি নস্যাৎ করেছেন। ডাঃ হালদারকে সৌতাজ বিশ্বাস বলে চিহ্নিত করা একটি পোস্ট শেয়ার করে তিনি ক্যাপশনে লেখেন, "১,২,৩...নতুন পরিচয় সবেমাত্র পেলাম পরিবারগণ, টিএমসি আমাকে প্রধান চরিত্র মনে করছে। মানুষ বদলায় ঠিকই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বদলাতে তো আমিও চাইনি।"
তার পোস্টের এই বিদ্রূপাত্মক ক্যাপশন থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় দুজন আলাদা ব্যক্তি। পোস্টটি দেখুন এখানে।
উপরন্তু, আমরা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আপলোড করা একটি প্রোফাইল চিত্র থেকে নিশ্চিত হই সৌতাজ বিশ্বাস ও ডাঃ দেবাশিস হালদার দুজন ভিন্ন ব্যক্তি।