সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল একটি পোস্টে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে কলকাতায় (Kolkata) চিকিৎসকের (doctor) ধর্ষণ ও খুনের (rape and murder) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল থেকে ফেরার সময় একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে।
বুম দেখে দাবিটি ভুয়ো। পূর্ব বর্ধমান পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করে জানায় অঙ্কিতা বাউরি নামের কোনও মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার কোনও অভিযোগ তারা পাননি।
গত ৯ আগস্ট রাতে, কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনার প্রেক্ষাপটে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয় এই দাবি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নির্যাতিতা চেস্ট মেডিসিন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এমডি ছাত্রী ছিলেন এবং তার মৃতদেহ হাসপাতালের সেমিনার হলে পাওয়া যায়। চিকিৎসক সম্প্রদায়সহ দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষ ভয়াবহ এই মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নামে।
২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট রাতে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে মহিলারা "রাত দখল" বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অঙ্কিতা বাউরি নামক একটি মেয়ের "রাত দখল" বিক্ষোভ থেকে ফেরার সময় নিখোঁজ হওয়ার দাবিতে কিছু পোস্ট ভাইরাল হয়।
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি দাবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, "অঙ্কিতা বাউরি প্রতিবাদ মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার সময় নিখোঁজ। এর শেষ নেই।"
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফেসবুকে একই দাবি শেয়ার করে পোস্ট করেছেন আরও একজন ব্যবহারকারী।
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে দাবিটি ভুয়ো। পূর্ব বর্ধমান পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পারভেজ হাসান বুমকে জানিয়েছেন, "আমরা এই ধরণের কোনও অভিযোগ পাইনি। এমন কোনও নিখোঁজের ডায়েরি আমাদের কাছে করা হয়নি।"
ভাইরাল দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে, বুম এক্সে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে একটি পোস্ট পায় যেখানে দাবি করা হয় অঙ্কিতা বাউরি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি ভুয়ো এবং আক্রান্তের আসল নাম প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা। এছাড়াও, স্পষ্ট করা হয় ওই ঘটনার সঙ্গে আরজি করের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এরপর, আমরা গুগলে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে ১৫ আগস্ট, ২০২৪-এর আনন্দবাজার পত্রিকার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাই। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বর্ধমান পুলিশ স্টেশনের আওতাধীন পূর্ব বর্ধমানের নান্দুর গ্রামের এক আদিবাসী ছাত্রীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। ওই ছাত্রীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা "দু’বছর আগে ব্যাঙ্গালুরুর শপিং মলে কাজ করতে যান। দু’দিন আগে তিনি গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন।" তিনি বাথরুমে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন এবং পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
দ্য টেলিগ্রাফের ১৭ আগস্ট, ২০২৪-এর একটি প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় পূর্ব বর্ধমান পুলিশ মেয়েটির ধর্ষণ ও হত্যার ভাইরাল দাবি সংবাদ সম্মেলনে অস্বীকার করেছে। এসপি আমনদীপ বলেন ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃতার উপর যৌন নির্যাতনের কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি।
এছাড়াও, আমরা পূর্ব বর্ধমান পুলিশের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেখতে পাই যেখানে তারা অঙ্কিতা বাউরির সাথে জড়িত ঘটনাটি ভুয়ো হিসাবে নস্যাৎ করেছে। পুলিশের তরফ থেকে পোস্টে লেখা হয়, "কিছু অসাধু ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে যে অঙ্কিতা বাউরি নামে একটি মেয়ে 14ই আগস্ট যখন আরজি কর ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সমাবেশে অংশ নিয়ে বাড়ি ফিরছিল তখন তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। আসল ঘটনা হল অঙ্কিতা বাউরি নামের কোনো মহিলা কে ধর্ষণ ও খুনের মতো কোনো ঘটনা বর্ধমানে ঘটেনি । এ ধরনের গুজব যারা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের প্ররোচনায় পা দেবেন না। পূর্ব বর্ধমান পুলিশ মহিলাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
(Additional Reporting by Srijit Das)