মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh) সাধুর (Sadhus) বেশে চোরদের পেটাচ্ছে স্থানীয় মানুষ – এমনই এক ভিডিওকে একাধিক সংবাদ সংস্থা (News Agency) মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) সাঙ্গলি'র (Sangli) ঘটনা বলে প্রচার করেছে। সাঙ্গলিতে, ছেলে ধরা সন্দেহে এক দল সাধুর ওপর চড়াও হয় জনতা।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে, মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলি জেলার এক গ্রামের বাসিন্দারা চার সাধুকে ছেলেধরা সন্দেহ করে মারধোর করে। ওই সাধুরা গাড়িতে করে, সাঙ্গলি হয়ে পান্ধারপুর-এর মন্দিরে যাচ্ছিলেন। সেই সময় রাস্তা জানার জন্য লাভাঙ্গি গ্রামে থামেন তাঁরা। পুলিশ জানায়, এক স্থানীয় যুবক তাঁদের ছেলেধরা বলে সন্দেহ করেন। তিনি বাচ্চা চুরির ওপর একটি ভিডিও দেখে ছিলেন এক সময়। সেই কারণেই তাঁর সন্দেহ জাগে ও তিনি গ্রামের লোকজনকে খবর দেন। ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিন্তু সংবাদ সংস্থাগুলি আসলে মধ্যপ্রদেশের একটি ভিডিও দেখায়, যেটির সঙ্গে সাঙ্গলির ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
টাইমস নাও, ইন্ডিয়া টুডে, মিরার নাও, আজতক, এবিপি নিউজ, নিউজ ১৮, ইন্ডিয়া টিভি, নিউজ নেশন-এর মতো সংবাদ সংস্থাগুলি দাবি করে যে, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা চার সাধুকে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে ভিডিওটিতে। গ্রামবাসীরা তাঁদের ছেলেধরার একটি দল বলে মনে করে।
অনেকগুলি চ্যানেল, গাড়িতে আসা সাধুদের সাঙ্গলিতে মারধোর করার দৃশ্য সমেত মধ্যপ্রদেশের ভিডিওটিও সম্প্রচার করে।
ভিডিওটি নীচে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে আবার তাদের 'এক্সক্লুসিভ' জলছাপ সমেত পুরনো ভিডিওটি দেখায় এবং একই দাবি করে।
টেলিভিশনে সম্প্রচারটি নীচে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: "ফ্রিডম মার্চের" ভিডিও বিভ্রান্তি সহ ছড়াল "ভারত জোড়ো যাত্রা" বলে
তথ্য যাচাই
ওই ঘটনার ওপর মহারাষ্ট্রে তোলা অন্য কোনও ভিডিও আছে কিনা, তা দেখার জন্য আমরা টুইটারে হিন্দি কি-ওয়ার্ড 'সাধু পকড় জনতা' (साधु पकड़ जनता) দিয়ে সার্চ করি। দেখা যায়, ৭ অগস্ট ২০২২ সাংবাদিক অনুরাগ অমিতাভ একটি ভিডিও টুইট করেছিলেন। তাঁর ভিডিওর অনেক দৃশ্য, সংবাদ চ্যানেলগুলির সম্প্রচার করা দৃশ্যগুলির সঙ্গে মিলে যায়।
টুইটটি দেখুন এখানে
অমিতাভ তাঁর রিপোর্টে অবশ্য বলেন যে, ভিডিওটি মধ্যপ্রদেশে তোলা হয়। সাধুর বেশে কয়েকজন দুষ্কৃতি এক মহিলার মূল্যবান জিনিস ছিনতাই করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে, মার খায়। ভাইরাল ভিডিও ও মধ্যপ্রদেশের ভিডিওটির মধ্যে মিলগুলি নীচে দেখা যাবে।
ওই সূত্র ধরে, মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলার মান্ডিদীপ-এ যে ঘটনাটি ঘটেছিল, সেটি সম্পর্কে জানতে আমরা হিন্দি কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে ৬ অগস্ট, ২০২২ দৈনিক ভাস্কর-এর একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। তাতে ভাইরাল ভিডিওটির একটি অংশ 'জিআইএফ' হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, পোলাহা গ্রামে ছয় দুষ্কৃতি এক মহিলার কাছ থেকে গয়না ছিনতাই করে পালানোর সময় ঘটনাটি ঘটে। ওই ছিন্তাইকরীরা সাধু সেজে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে চাইছিল। এক মহিলার বাড়িতে গিয়ে তারা সেই মহিলাকে বলে যে, তাঁর অলঙ্কারের ওপর অশুভ আত্মা ভর করেছে। তাই সেগুলিকে নিয়ে পুজো করতে হবে। ভয় পেয়ে মহিলাটি তাঁর গয়না পুজো করার জন্য তাদের হাতে তুলে দেন এবং পুজোর কাজ চালানোর জন্য আরও পাঁচ হাজার টাকা দেন ওই 'সাধুদের'। পরে তারা ওই মহিলাকে কিছু একটা খেতে দেয়। তা খেয়ে উনি অজ্ঞান হয়ে যান।
ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয় জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এ বিষয়ে আরও জানতে বুম রাইসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট আমরাত মিনা'র সঙ্গে যোগাযোগ করে। মিনা বুমকে বলেন, "মান্ডিদীপ-এর কাছে, নূরগঞ্জ থানার অন্তর্গত এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ওই দুষ্কৃতিরা মহিলাকে ভুল বুঝিয়ে গয়নাগুলিকে পুজো করার জন্য রাজি করায়। পরে তারা পালিয়ে যায়। মহিলার স্বামী ফিরে এলে, তিনি বুঝতে পারেন তাঁর স্ত্রী প্রতারিত হয়েছেন।"
মিনা আরও বলেন, "ওই জেলায় আগেও ওই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল তাঁর স্বামী তা জানতেন। পরে গ্রামবাসীরা ওই প্রতারকদের ধরে ফেলে মারধোর করে গয়নাগুলি উদ্ধার করে। লোকগুলিকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। তবে তারা ছেলেধরা ছিল না।"
আরও পড়ুন: ক্ষীর ভবানী মন্দিরে পুজো মেহবুবা মুফতির? পুরনো ছবি ছড়াল বিভ্রান্তি