একটি ভাইরাল অডিও ক্লিপে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) (Citizenship amendment Act) বিরুদ্ধে যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ও আইনটার বিরোধিতা করছেন, সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) আইনজীবী হরিশ সালভে (Harish Salve) তাঁদের সমালোচনা করেছেন। বুম দেখে অডিওটি রেকর্ড করেছেন সুরেশ কোচাট্টিল। তাঁর সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলে, কোচাট্টিল নিজেকে হায়দ্রাবাদে ভারতীয় জনতা পার্টির সোশাল মিডিয়া টিমের এক প্রাক্তন সদস্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
অডিও ক্লিপটি হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করা হচ্ছে। সেটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আমাদের সাবধান করছেন। মন দিয়ে শুনুন।"
পাঁচ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, সিএএ-র বিরোধিতা করছেন যাঁরা, তাঁরা সবাই বিরোধী দলের সদস্য। এবং কী কারণে তাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদের কাছে তা স্পষ্ট নয়। বক্তা আরও বলছেন যে, বিরোধীরা ক্রমাগত 'গোল পোস্টগুলি' সরিয়ে দিচ্ছেন। ওই অডিওটিতে রাহুল গান্ধী ও আসাদউদ্দিন ওয়েসির নাম করে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন আইনটি ভাল করে পড়ার পর, স্পষ্ট করে বলেন, কেন তাঁরা সেটির বিরোধিতা করছেন।
ভাইরাল অডিওটি নীচে দেওয়া হল।
বুম প্রথমে অডিওটি শোনে। দেখা যায় তাতে বক্তা সুরেশ কোচাট্টিল হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। ওই নামটি দিয়ে সার্চ করলে, আমরা একটি 'লিঙ্কডইন' প্রোফাইল দেখতে পাই। তাতে কোচাট্টিল জানান যে, তিনি 'জনম টিভি'র চিফ এক্সিকিউটিভ। জনম টিভি হল কেরলের একটি দক্ষিণপন্থী টিভি চ্যানেল।
তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর উনি নিয়মিত অডিও ক্লিপ পোস্ট করেন। সেগুলিতে প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে উনি আলোচনা করেন। আমরা ১৩ অগাস্ট ২০২০-র একটি পোস্ট দেখতে পাই। তাতে ভাইরাল ক্লিপটি সম্পর্কে উনি বলেন যে, সেটির বক্তা উনি নিজে, সালভে নন।
পোস্টটিতে লেখা হয়, "আমার একটি পুরনো অডিও ক্লিপ হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়েছে। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় সেটি রেকর্ড ও প্রচার করা হয়। বিগত কয়েকদিনে, বেশ কিছু বন্ধু আমায় ফোনে বা মেসেজ করে নিশ্চিত হতে চান যে, বক্তাটি আমিই নাকি হরিশ সালভে, যেমনটি দাবি করা হয়েছে। যদি মন দিয়ে শোনেন, তাহলে দেখবেন, ১.৩৪-এ আমি আমার নাম ঘোষণা করি। আশা করি এর পর বিভ্রান্তি কেটে যাবে।"
আমরা সালভের অফিসের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। সেখান থেকে জানানো হয় যে, অডিওটি সালভে রেকর্ড করেননি। সালভের টিমের এক সদস্য বলেন, ভাইরাল পোস্টটি ভুয়ো এবং সেটি সম্পর্কে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। "সালভের গলা নকল করা হয়েছে" বলে জানানো হয়। কিন্তু অভিযোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয় না। বা কোন পুলিশ স্টেশনে সেটি দায়ের করা হয়েছে, তাও জানা যায়নি।
সুরেশ কোচাট্টিল কে?
লিঙ্কডইনে সুরেশ কোচাট্টিল নিজেকে একজন মিডিয়া প্রোফেশনাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি এও বলেছেন যে, বর্তমানে উনি জনম টিভি'র
চিফ অপারেশন্স অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। জনম টিভি হল কেরলের একটি দক্ষিণপন্থী টিভি চ্যানেল। ফেসবুকের 'অ্যাবাউট' বিভাগে কোচাট্টিল নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, "ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাক্তন সোশাল মিডিয়া।" তাঁর টুইটার ও
ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায় যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মিডিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে নিজের মতামত ও অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়মিত প্রকাশ করেন উনি।
কোচাট্টিলের অডিও ক্লিপ আগেও ভাইরাল হয়েছে। ২০১৮-য় কেরলের বিধ্বংসী বন্যার সময়, কোচাট্টিলের একটি অডিও ভাইরাল হয়। তাতে উনি বন্যা পীড়িতদের জন্য ত্রান সামগ্রী না পাঠানোর পরামর্শ দেন। কারণ, তিনি বলেন, যাঁরা বন্যার শিকার হয়েছেন, তাঁরা "বেশ ধনী পরিবারের" লোক। এ কথা বলার জন্য ভাইরাল ক্লিপটি ও কোচাট্টিল নিজে প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়েন।
সিএএ সম্পর্কে হরিশ সালভের মত
অডিওটি হরিশ সালভের না হলেও, এ বিষয়ে তাঁর মতামত একই। সালভে একজন প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল। অতীতে তিনি সিএএ-র পক্ষেই সওয়াল করেন এবং বলেন সেটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অযৌক্তিক।'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'র সম্পাদকীয় বিভাগে একটি লেখায় উনি বলেন, "আমি বুঝতে পারছি না যে, কি করে একটি আইন, যেটি যুক্তিসঙ্গত মানদণ্ডের ভিত্তিতে, এক শ্রেণীর মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার সুবিধে করে দেবে, সেটিকে বৈষম্যমূলক বলা হচ্ছে এই অজুহাতে যে, সেই শ্রেণীভুক্ত করার মানদণ্ডটি আরও অনেক গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথেষ্ট বড় করা হয়নি।" এবং ওই আইনের বিরেুদ্ধে প্রতিবাদ সম্পর্কে বলেন, "নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সম্পর্কে বিতর্ক ধূমায়িত হচ্ছে। এবং সম্প্রতি সেটিকে কেন্দ্র করে দাঙ্গাও হয়ে গেছে। বিতর্কটা যে কী নিয়ে, তা বুঝতে আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি।"