সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পশ্চিমবঙ্গে শিশু অপহরণের ভুয়ো দাবিসহ একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ব্যবহারকারীরা ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করেছেন লোকাল ট্রেনে একটি অপহৃত শিশুকে এক মহিলার ব্যাগে বন্দী অবস্থায় পায় যাত্রীরা এবং তাদের দুজনকেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই একই ঘটনার ছবি শেয়ার করে নেটিজেনদের একাংশ বাচ্চাটির সাথে থাকা মহিলাকে অপহরণকারী হিসাবেও দাবি করেছেন।
বুম বারাসাত রেল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা নিশ্চিত করে জানায় শিশুটি অপহৃত নয়, শিশুটির সাথের মহিলাই তার মা। ওই মহিলার কিছু মানসিক অসুস্থতার কারণেই শিশুটিকে ব্যাগে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
বাচ্চা চুরির কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার জেরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শিশু অপহরণ সংক্রান্ত সমাজমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সম্প্রতি। বুম এই ভুয়ো দাবিগুলির তথ্য যাচাই করে। পড়ুন এখানে ও এখানে। এরই মধ্যে, ২৬ জুন ২০২৪-এ বিরাটি স্টেশনে বাচ্চা চুরির অভিযোগে এক মহিলাকে আটক করে পুলিশে দেন যাত্রীরা এবং এই ঘটনার ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয় ফেসবুকে।
ভাইরাল পোস্টগুলিতে ট্রেনে ওই মহিলাকে মারধরের দৃশ্য ও এক মহিলা পুলিশকর্মীর কোলে উদ্ধার হওয়া শিশুটি ও ঘরের কোণে অপহরণকারী হিসাবে অভিযুক্ত মহিলাকে বসে থাকতে দেখা যায়।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, "বাচ্চা টাকে ট্রেন এর মধ্যে পাওয়া গেছে ..মুখ বেধে bag এর মধ্যে করে নিয়ে যাচ্ছিল .. ভিড় ট্রেন এ ধাক্কা লেগে বাচ্চা টা কেঁদে ওঠে তারপর ওকে উদ্ধার করে ট্রেন যাত্রীরা ...এখন বিরাটি থানায় আছে ..ভিডিও টি অনেক বেশি পরিমাণে share করো যাতে বাচ্চা টা ওর মা বাবার কাছে ফিরে যেতে পারে ..."
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এই একই ঘটনা কেন্দ্র করে শিশুটি ও তার সাথের মহিলার ছবি পোস্ট করে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লিখেছেন, "এই ছোট্ট বাচ্চাটিকে এক মহিলা চুরি করে বাজারের ব্যাগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বিরাটি থেকে বাচ্চাটি পাওয়া গেছে। সবাই একটু শেয়ার করে দাও যাতে বাচ্চাটি মায়ের কাছে যেতে পারে।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে ট্রেন থেকে অপহৃত শিশু উদ্ধার সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে। আমরা ফেসবুকে ২৬ জুন ২০২৪-এর ক্যালকাটা নিউজের এই ঘটনা সংক্রান্ত একটি লাইভ ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে পাই।
ক্যালকাটা নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় দত্তপুকুর থেকে শিয়ালদহগামী ডাউন ট্রেনে এক মহিলার বাজারের ব্যাগ থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পান যাত্রীরা। তারা শিশুটিকে উদ্ধার করেন এবং মহিলাকে অপহরণকারী সন্দেহে আটক করে বিরাটি স্টেশনে নেমে রেলপুলিশের হাতে তুলে দেন।
এই ঘটনা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে আমরা গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে আনন্দবাজার পত্রিকার ই-পেপারে ২৮ জুন ২০২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনটি পাই। "পরিচয় মিলল রাতে, নিগৃহীতাই শিশুটির মা" শীর্ষক প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায় অপহরণকারী হিসাবে অভিযুক্ত মহিলাই শিশুটির মা।
২৬ জুন রাতে বারাসাত জিআরপিতে পুলিশের কাছে রামেশ্বর পাণ্ডে নামক এক ব্যক্তি অভিযুক্ত মহিলার স্বামী বলে দাবি করেন এবং জানান মহিলার নাম বাসন্তী পাণ্ডে। রামেশ্বরের আদি বাড়ি বিহারে এবং বাসন্তীর ওড়িশায়। তারা বামনগাছিতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন এবং শিশুটি তাদের আট মাসের সন্তান। পুলিশ তদন্ত করে জানায় রামেশ্বর পাণ্ডে সত্যি বলছেন। রামেশ্বর পাণ্ডে জানান তার স্ত্রীর কিছু অসুস্থতা রয়েছে এবং এর আগেও কাউকে কিছু না বলে সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন আবার নিজেই ফিরে এসেছেন।
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায় বাসন্তী পাণ্ডে ছেলেকে নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে যাচ্ছিলেন যখন তার সাথে ওই ঘটনা ঘটে।
বুম ঘটনাটি যাচাই করতে বারাসাত জিআরপি থানায় যোগাযোগ করে তারা নিশ্চিত করে আমাদের জানায় শিশুটিকে অপহরণ করা হয়নি এবং ট্রেনে থাকা ওই মহিলাই শিশুটির মা। বারাসাত জিআরপির একজন আধিকারিক আমাদের জানান, "মহিলার স্বামী এবং বাড়ির লোক পুলিশকে বলেছে মহিলার একটু মানসিক সমস্যা আছে এবং বাংলা ভাষা বোঝেন না। এসব কারণেই অন্যান্য সহযাত্রীরা তাকে সন্দেহবশতঃ মারধর করেন।"