পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে সাম্প্রতিক এক ভাষণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) দাবি করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) দুর্গাপুজোর জন্য ছুটি দিতে অস্বীকার করলেও রমজানের সময় মুসলমানদের জন্য ছুটি বরাদ্দ করেন।
বুম দেখে অমিত শাহের দাবিটি ভুয়ো। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেবল দুর্গাপুজোর জন্যই নয়, অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্যও ছুটি দেয়।
শ্রীরামপুরে সেই ভাষণের ১৮:১৪ মিনিট অংশে শাহ বলেন, "[মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়] রাম মন্দিরের বিরোধিতা করেন। তিনি দুর্গা বিসর্জনের অনুমতি দেন না কিন্তু রমজান মাসে মুসলিম কর্মীদের জন্য ছুটি দেন। এতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই, আপনি চাইলে ছুটি দিন। কিন্তু আমরা জানতে চাই আমাদের দুর্গাপুজোর জন্যও কেন আপনি ছুটি দেন না? কেন এই বৈষম্য?"
প্রথমবার শাহ বা বিজেপি শাসিত সরকারের কোনও নেতা এধরণের সাম্প্রদায়িক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন এমনটা নয়। এর আগে ছত্তীসগঢ়ে শাহ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাদের ইস্তাহারে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পত্তি পুনর্বণ্টনের কথা উল্লেখ করার বিভ্রান্তিকর দাবি করেছিলেন। একইভাবে, রাজস্থানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেন কংগ্রেস মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পত্তির সমানভাবে পুনর্বণ্টন করার অভিপ্রায় নিয়ে মহিলাদের সোনাসহ দেশের সমস্ত সম্পত্তির একটি বিস্তৃত সমীক্ষা করবে। তবে, বুম দেখে কংগ্রেস তাদের ইস্তাহারে সম্পদ পুনর্বণ্টনের কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেওয়ার পরিবর্তে কেবল নীতিগত মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তার পরামর্শ দেয়।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের ওয়েবসাইটে দেখে সরকারি ছুটি কেবল দুর্গাপুজোর জন্যই নয়, অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্যও দেওয়া হয়।
অর্থ দফতরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, সরকারি ছুটির দিনগুলি দুটি তালিকার আওতায় পরে: তালিকা-১ (এন. আই আইনের অধীনে ২০২৪ সালে সরকারি ছুটির দিন) এবং তালিকা-২ (২০২৪ সালে রাজ্য সরকারের অধীনে দেওয়া ছুটি)।
তালিকা-১ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দুর্গাপুজোর জন্য সরকারি ছুটির দিনগুলি হল— দুর্গাপূজা, মহা সপ্তমী ১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার), দুর্গাপূজা, মহা অষ্টমী এবং মহা নবমী ১১ অক্টোবর (শুক্রবার) এবং দুর্গাপূজা, দশমী ১২ অক্টোবর। (শনিবার)।
দ্বিতীয় তালিকায় রাজ্য সরকারের নির্দেশে দেওয়া ছুটিগুলি দেখা যায়। এই তালিকার অধীনে, দুর্গাপুজোর ছুটি ৭ থেকে ৯ অক্টোবরের মধ্যে এবং ১৪ থেকে ১৫ অক্টোবর অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে।
উপরন্তু, বিজ্ঞপ্তি থেকে আরও জানা যায়, "কলকাতার অ্যাসুরেন্সের রেজিস্ট্রার এবং কলকাতার স্ট্যাম্প রেভিনিউ কালেক্টরের কার্যালয় ব্যতীত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে থাকা অফিসগুলি ২০২৪ সালে দ্বিতীয় তালিকায় উল্লিখিত দিনগুলিতে বন্ধ থাকবে, যেগুলি সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি।"
এছাড়াও, পশ্চিমবঙ্গ সরকার গুড ফ্রাইডে, ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উদ-জোহা (বকরি), মহরম এবং বড়দিনেও সরকারি ছুটি দিয়েছে।
২০১৭ সালে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের দিন এবং মহরম একই তারিখে পড়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মহরমের দিন প্রতিমা বিসর্জনের অনুমতি দেয়নি যদিও রাজ্যের হাইকোর্ট একই দিনে প্রতিমা বিসর্জন এবং মহরমের শোভাযাত্রা উভয়ই শান্তি ও ভিন্ন পথ অনুসরণ করার শর্তে অনুমতি দেয়।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বিজয়া দশমীতে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বিসর্জনের কাজ শেষ করতে হবে কারণ তারপর মহরমের মিছিল বের করা হবে। যদি উভয়ই একই সময়ে ঘটে, তাহলে সমস্যা হতে পারে। এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। কিছু লোক এই সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে এবং হিন্দু ও মুসলমানদের হাতিয়ার করে নানা ধরনের উস্কানি সৃষ্টি করবে"। তিনি টুইট করে জানান, "মহরমের দিন ছাড়া, ২,৩ এবং ৪ অক্টোবর ২৪ ঘন্টাই বিসর্জন দেওয়া যাবে।"
ইন্ডিয়া টুডে আরও জানায়, ২০১৬ সালে মহরমের ঠিক একদিন আগে বিজয়া দশমী উদযাপিত হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতিমা বিসর্জনের উপর বিধিনিষেধ জারি করেছিল।