সৈন্যদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার এবং কয়েকজন সেনাকে (Soldiers) বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার দুটি পুরনো তারিখহীন ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এগুলি অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং (Tawang) অঞ্চলে চিনা গণমুক্তি ফৌজের সঙ্গে গত সপ্তাহের সংগর্ষের ছবি।
তাওয়াং-এর ইয়াংতসে এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গত ৯ ডিসেম্বর চিনা ফৌজের সঙ্গে ভারতীয় জওয়ানদের সংগর্ষ ঘটে। সেই প্রসঙ্গেই এই ছবি শেয়ার করে টুইটার ও হোয়াটঅ্যাপে দাবি করা হয়েছে যে, "চিনারা ৩০০ জন ভারতীয় জওয়ানকে খতম করেছে"।
একই ছবি এবং ক্যাপশন বুম-এর কাছেও পাঠানো হয়েছে তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য।
কোনও গুরুতর জখমের ঘটনার খবর নেইঃ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং
১৩ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সংসদকে জানান, ভারতীয় ও চিনা ফৌজের জওয়ানদের সংঘর্ষে কারও গুরুতরভাবে আহত হওয়ার খবর নেই। লোকসভা ও রাজ্যসভা, উভয় কক্ষেই বিবৃতি দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, "আমি সভাসদদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনও জওয়ান এই সংঘর্ষে মারা যাননি কিংবা গুরুতরভাবে জখমও হননি"। বরং ভারতীয় জওয়ানরা সংঘর্ষের পর চিনা গণমুক্তি ফৌজের সেনাদের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করেছেন। ৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার জারি করা ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়—"চিনা সেনারা ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে একতরফা ভাবে স্থিতাবস্থা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। দু পক্ষের জওয়ানদের মধ্যেই হাতাহাতি বেধে যায় এবং ভারতীয় জওয়ানরা অত্যন্ত দৃঢভাবে অনুপ্রবেশকারী চিনা সৈন্যদের প্রতিরোধ করেন। এই হাতাহাতির প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষেই কয়েকজন আহত হন, তবে আমি সংসদের সঙ্গে এই বিষয়টি শেয়ার করতে চাই যে, কেউই এই সংঘর্ষে মারা যাননি কিংবা তত গুরুতর ভাবে আহত হননি।"
চিনা সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে সরে যায় এবং এলাকার স্থানীয় কমান্ডার ১১ ডিসেম্বর ফ্ল্যাগ-মার্চও করেন। ভারত চিনের কাছে আবেদন জানায় অনুপ্রবেশ থেকে বিরত থাকতে এবং এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে। "আমি এই সভাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, ভারতীয় সেনারা দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় কৃতসংকল্প এবং তা বানচাল করার যে কোনও প্রয়াস প্রতিহত করতে পারঙ্গম। আমার দৃঢ বিশ্বাস, এই সভা বাহিনীর সেই প্রয়াসের পিছনে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াবে এবং তাকে সমর্থন করবে।"
এই বিষয়ে আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
দ্য হিন্দু পত্রিকা চিনা ফৌজের পশ্চিমী কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র কর্নেল লঙ শাও হুয়ার একটি বক্তব্যের অংশও উদ্ধৃত করেছে। তার একটি অংশে লেখা হয়েছেঃ "চিনা সৈন্যরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার চিনের দিকে লঙঝাং এলাকায় একটি নিয়মমাফিক টহলদারি চালাচ্ছিল, যখন ভারতীয় জওয়ানরা চিনা ভূখণ্ডে ঢুকে এসে বেআইনিভাবে তাদের বাধা দেয়"।
বুম ভারতীয় বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেনান্ট কর্নেল এম এস রাওয়াতের সঙ্গেও যোগাযোগ করে, যিনি দুই পক্ষের সেনাদের সংঘর্ষে ৩০০ ভারতীয় জওয়ানের নিহত হওয়ার গুজবকে অসত্য বলে উড়িয়ে দেন। রাওয়াত বুমকে বলেন, "ভারতীয় সেনাবাহিনী সৈন্যদের মৃত্যুর বিষয়ে এমন কোনো খবর প্রকাশ করেনি। এটি অসত্য।"
ভাইরাল হয়েছে পুরনো ও তারিখহীন ছবি
বুম এ ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েছে যে ভাইরাল করা ছবিগুলি পুরনো এবং আলোচ্য সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন।
এই একই ছবিগুলি চিনা সাংবাদিক শেন শি-ওয়েই ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর টুইট করে জানিয়েছিলেন, এগুলি লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ২০২০ সালের জুন মাসে চিনা ফৌজের হাতে ভারতীয় জওয়ানদের গ্রেফতার হওয়ার ছবি। কিন্তু এই ছবিগুলির নির্ভরযোগ্যতা বুম স্বাধীনভাবে নির্ণয় করে উঠতে পারেনি।
২০২০ সালের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় চিনা ও ভারতীয় ফৌজের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর অনুযায়ী, তাতে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হন। বেজিং তার তরফে কোনও হতাহতের সংখ্যা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানায়নি।
বিভিন্ন ভারতীয় টুইটার অ্যাকাউন্টের জবাবি পোস্টে অবশ্য দাবি করা হয়েছে যে, এই ছবিগুলি সম্ভবত ভুয়ো এবং সাজানো, কেননা ধৃত জওয়ানদের উর্দি এবং তাদের চুলের ছাঁট কিছুই ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে মেলে না।