ভাইরাল হওয়া একটি চিঠিতে দাবি করা হয়েছে যে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল কুম্ভ মেলার ভাল ব্যবস্থাপনার জন্য উত্তরাখণ্ড সরকারের আধিকারিকদের প্রশংসা করেছেন। এটি আসলে একটি ভুয়ো দাবি।
টুইটারে যে চিঠিটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে দাবি করা হচ্ছে যে সেটি অজিত ডোভাল লিখেছেন এবং চিঠিতে তাঁর নাম সইও করা রয়েছে। চিঠিটি উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব ওম প্রকাশকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, এবং সেই চিঠিতে ডোভাল "কুম্ভ মেলা চলাকালীন পরিস্থিতি সামলানোর" জন্য তাঁর প্রশংসা করেছেন।
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ চিঠিটি টুইট করেছেন এবং সঙ্গে ক্যাপশন দিয়েছেন, "এনএসএ ডোভাল কুম্ভমেলার আয়োজনের জন্য উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিবের প্রশংসা করেছেন এবং নির্লজ্জ ভাবে তাঁকে আরএসএস-এরর আদর্শ প্রচার করতে বলেছেন!!"
আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ভাইরাল হওয়া চিঠিটিতে কুম্ভ মেলা চলাকালীন রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য প্রকাশ্য প্রশংসা করা হয়েছ, এবং তার পর "শান্তি বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে যে ভাবে যোগাযোগ রাখা হয়েছে ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মাবলি পালন করা হয়েছে," তার প্রশংসা করা হয়েছে। ২০০২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওম প্রকাশ কুম্ভমেলা অফিসার হিসাবে কাজ করেছেন, এবং এখন তিনি যে ভাবে তাঁর সেই অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেছেন, চিঠিতে তার তারিফ করা হয়েছে। চিঠির শেষে লেখা হয়েছে, "আমি নিশ্চিত যে ভবিষ্যতেও আপনার প্রচেষ্টায় ধর্মীয় আবহ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে, এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের আদর্শকে তুলে ধরা হবে।" চিঠিতে তারিখ রয়েছে ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল এবং চিঠিতে ডোভালের স্ট্যাম্প এবং সই রয়েছে।
আরও পড়ুন: কোভিড রুখতে এগিয়ে উত্তরপ্রদেশ? মিডিয়ায় প্রকাশ গরমিল জনস হপকিন্স জরিপ
তথ্য যাচাই
আমরা সংবাদ সংস্থা এএনআই'র একটি টুইট দেখতে পাই, যাতে ওই চিঠিটিকে ভুয়ো বলা হয়েছে, এবং ওই টুইটে এই বিষয়ে সরকারি আধিকারিকদের মন্তব্যও দেওয়া হয়েছে।
তার পর আমরা সার্চ করে দেখি যে, অতীতে ডোভাল অন্য কোনও রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখেছেন, কোনও সংবাদ প্রতিবেদনে তেমন কোনও উল্লেখ আছে কি না। এই সার্চের মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই, যাতে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বরে লেখা একটি চিঠির উল্লেখ করা হয়েছে। অযোধ্যা রায়ের পর ডোভাল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব রাজেন্দ্র তিওয়ারিকে উদ্দেশ্য করে ওই চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিওয়ারির প্রশংসা করা হয়েছে এবং কুম্ভমেলা প্রসঙ্গে চিঠিতে যে সব লাইন লেখা রয়েছে, এই চিঠিতেও ঠিক সেগুলিই লেখা রয়েছে। চিঠিতে লেখা হয়েছে যে, "রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার আমি প্রশংসা করি। শান্তি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য পুলিশের সঙ্গেও আপনি যে ভাবে যোগাযোগ রেখে কাজ করেছেন, তা প্রশংসাযোগ্য।" এই চিঠিটিতেও আশাপ্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, মুখ্যসচিবের প্রচেষ্টা "ভবিষ্যতেও শান্তির পরিবেশ এবং আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে"।
নীচে দুটি চিঠির মধ্যে তুলনা করা হল। প্রথমটি লেখা হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর, এবং সেই চিঠির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। অন্য চিঠির তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১। দুটি চিঠির মধ্যে যে বাক্যগুলি এক, তা লাল কালিতে চিহ্নিত করে দেওয়া হল।
কুম্ভমেলা সংক্রান্ত চিঠিতে যে বাক্যগুলি লেখা হয়েছে, তার সঙ্গে তিওয়ারিকে লেখা চিঠির বাক্যের মিল রয়েছে। তবে, পরের চিঠিটিতে স্থান হিসেবে অযোধ্যার পরিবর্তে কুম্ভ মেলার উল্লেখ করা হয়েছে। সেই চিঠিটিতে আরএসএস'র প্রশংসার অংশটিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর পর আমরা অজিত ডোভালের স্বাক্ষরের খোঁজ করি, এবং অজিত ডোভালের লেখা বলে দাবি করা অন্য একটি ভুয়ো চিঠির সন্ধান পাই। ওই চিঠিটি ডোভাল লেহ-লাদাখের কমিশনার সেক্রেটারি রিগজিন স্যাম্ফেলকে লিখেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। ওই চিঠিতে "গোপনীয়তা বজায় রাখার কাজে আইটিবিপি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, এবং নেপালিদের ছদ্মবেশে ভারতে চিনা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর" জন্য স্যাম্ফেলের প্রশংসা করা হয়েছিল।
২০২০ সালের ২৮ মে'র তারিখ দেওয়া এই চিঠিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিবকে লেখা ডোভালের চিঠি বলে ভাইরাল হওয়া চিঠিতে যে সব বাক্য লেখা হয়েছে, এই চিঠিতেও সেই একই কথা লেখা হয়েছে। শুধু এই চিঠিতে স্থান হিসেবে লাদাখের উল্লেখ রয়েছে, এবং ঘটনা হিসেবে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের কথা বলা হয়েছে।
আমরা উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব ওম প্রকাশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তাঁর কাছ থেকে উত্তর পেলেই আমরা এই প্রতিবেদন আপডেট করব।
দেশে যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ আয়োজিত হয়, তখনই ভারতে কোভিড-১৯'র দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়ছিল।
উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার, তেহরি গড়ওয়াল এবং দেহরাদুন জেলার বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে কুম্ভমেলা আয়োজিত হয়। এই মেলায় কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা ২০০০ জনেরও বেশি, এবং এক ধর্মগুরুর মৃত্যু হয়েছে কোভিড সংক্রমণের ফলে। যারা ওই মেলায় গেছেন তাদের মধ্যে প্রায় ২০০০ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গেছে এবং তাদের মধ্যে একজনের এই রোগে মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভাইরাল ছবিটি সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির পুত্র শোকের নয়