এক গুচ্ছ ছবি ও ভিডিওতে ক্রায়োজেনিক অক্সিজেন ট্যাঙ্ক (oxygen tank) দেখা যাচ্ছে। সেগুলির গায়ে রিলায়ান্স ফাউন্ডেশনের (reliance foundation) লোগো লাগানো রয়েছে, কিন্তু সৌদি আরবের (Saudi Arabia) পতাকার একটা অংশও দেখা যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, সৌদি সরকারের পাঠানো অক্সিজেনের জন্য কম্পানিটি নিজে কৃতিত্ব নিচ্ছে।
কোভিড-১৯ অতিমারির (Covid-19) দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে, হাসপাতাল ও রোগীদের মধ্যে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে। অক্সিজেনের অভাব মেটাতে, ভারতের অনেকগুলি তেল ও ধাতু শিল্পের কম্পানি তাদের কারখানায় মেডিক্যাল অক্সিজেন তৈরি করছে। কিন্তু অক্সিজেন নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্যাঙ্কারের অভাবের কারণে সরকার ও কম্পানিগুলি বিদেশ থেকে ক্রায়োজেনিক অক্সিজেন ট্যাঙ্কার আমদানি করছে। সেই সব দেশগুলির মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, থাইল্যান্ড ও দ্য নেদারল্যান্ডস।
ছবি ও ভিডিওগুলি এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভাইরাল হয়েছে। ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, "ভারতে কেন তারা সৌদি পতাকাকে রিলায়ান্সের স্টিকার দিয়ে আড়াল করছে"।
ভিডিও ও ছবিগুলিতে রিলায়ান্স ফাউন্ডেশনের স্টিকারের নীচে সৌদি আরবের পতাকার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকেও ভাইরাল
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: না, ছবিতে সোনিয়া ও রাহুল গাঁধীর সঙ্গে ইনি নবনীত কালরা নন
তথ্য যাচাই
রিলায়ান্স ইন্ডাস্ট্রিজ ঘোষণা করেছে যে, ভারতের নানান জায়গায় অবস্থিত তাদের কারখানাগুলিতে তারা মেডিক্যাল অক্সিজেন তৈরি শুরু করে দিয়েছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই কোম্পানিটি জানিয়েছে যে, তারা প্রতিদিন ১০০০ মেট্রিক টন মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন করছে। এবং উৎপাদনের পরিমাণ যাতে দৈনিক আরও ৫০০ মেট্রিক টন বাড়ানো যায়, তার জন্য তারা ২৪টি ক্রায়োজেনিক অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বিমানে করে নিয়ে এসেছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিটিতে, রিলায়ান্স ফাউন্ডেশন সৌদি আরবের তেল কম্পানি অ্যারামকো, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম ও ভারতীয় বায়ুসেনাকে ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্কগুলি পাওয়া ও পরিবহন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে।
রিলায়ান্স ইন্ডাস্ট্রিজের এক মুখপাত্রর সঙ্গে বুম যোগাযোগ করলে, তিনি ভাইরাল পোস্টের দাবিটিকে উড়িয়ে দেন। উনি বলেন, রিলায়ান্স ফাউন্ডেশন সৌদি আরবের কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে কোনও অক্সিজেন বা অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নেয়নি।
"আমরা হাজার হাজার টন অক্সিজেন তৈরি করছি। কিন্তু সেই অক্সিজেন পরিবহনের জন্য ট্যাঙ্কের খুব অভাব। তাই আমরা আমাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি আরব, বেলজিয়াম, থাইল্যান্ড ও জার্মানি থেকে ট্যাঙ্ক আনাই। এই ট্যাঙ্কগুলি আমরা কিনেছি। এখন সেগুলির মালিক আমরা," বলেন ওই মুখপাত্র।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গের ভোট: ভোটারদের পছন্দ দাবি করে ভুয়ো গ্রাফিক্স ভাইরাল
"রাস্তায় যখন ট্যাঙ্কার দেখবেন, তখন দেখবেন সেগুলিতে মালিকের নাম লেখা আছে। তার কারণ, ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণ-প্রবণ। তাই সেগুলির ওপর মালিকের নাম লিখতে হয়। ভিডিওটিতে যে ট্যাঙ্কটি দেখা যাচ্ছে, সেটি সৌদি আরব থেকে কেনা হয়। এবং তাতে সৌদি আরবের পতাকা লাগানো ছিল। কিন্তু, যেহেতেু আসা মাত্রই সেগুলিকে কাজে নামিয়ে দিতে হয়, তাই তার ওপর আমাদের লোগোর স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়," বলেন মুখপাত্রটি।
মুখপাত্রটি আরও বলেন যে, বিমানে করে নিয়ে আসার সময় ট্যাঙ্কগুলি খালি ছিল।
"ক্রায়োজেনিক অক্সিজেন ট্যাঙ্কারগুলি বিদেশ থেকে বিমানে করে নিয়ে এসে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অক্সিজেন সরবরাহ করার কাজে লাগানো হচ্ছে। আমাদের জামনগর কারখানায় সেগুলিতে অক্সিজেন ভরে নানা দিকে সরবরাহ করা হচ্ছে," বলেন ওই মুখপাত্র।
বুমকে ভারতীয় বায়ুসেনার মুখপাত্র বলেন, প্রোটোকল অনুযায়ী, বিমানে করে আনার সময় ট্যাঙ্কগুলি খালি রাখতে হয়।
আদানি ইন্ডাস্ট্রিজ ও জাহাজ পরিবহন কোম্পানি লিন্ডের সঙ্গে যৌথ ভাবে সৌদি সরকার ৮০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন ভারতে পাঠিয়েছে।
একই ধরনের দাবি বুম আগেও খণ্ডন করেছে।
আরও পড়ুন: আফগান জ্বালানি ট্যাঙ্কারে আগুন লাগার পুরনো ভিডিও ছড়াল চিনের রকেট বলে