গুজরাতের (Gujarat) বরোদায় এক দল উচ্চবর্ণের লোকের হাতে এক দলিত (Dalit) যুবকের মার খাওয়ার ভিডিও এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, ভারতে খ্রিস্টানদের ওপর আক্রমণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ভিডিওটিতে।
বুম বরোদার গ্রামীন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরা দাবিটি উড়িয়ে দিয়ে জানান, ঘটনাটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের এবং ভিডিওটিতে যাঁকে মার খেতে দেখা যাচ্ছে. তিনি খ্রিস্টান নন, তিনি একজন দলিত।
৪১ সেকেন্ডের ভিডিওটি শিরিন খান নামের টুইটার হ্যান্ডেল (@Shirinkhan0) থেকে টুইট করা হয়। সেটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “ভারতে একজন খ্রিস্টানের ওপর উচ্ছৃঙ্খল হিন্দু জনতার নৃশংস আক্রমণ। এই দেশে গণপিটুনির সংখ্যা বেড়ে চলেছে।”
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
এর আগে, @SAHR_Watch নামের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ওই একই ভিডিও টুইট করা হয়। তার সঙ্গে দেওয়া বিভ্রান্তিকর ক্যাপশনে বলা হয়, “ভারতে ক্রমবর্ধমান গণপিটুনির দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে যখন মারমুখী হিন্দু জনতা একজন খ্রিস্টানকে নৃশংস ভাবে আক্রমণ করে। সাম্প্রদায়িক হিংসা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ছে। এই পরিস্থিতির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর রাখা উচিত। মবলিঞ্চিং #ইন্ডিয়া #রিলিজিয়াস ইনটলারেন্স”।
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, ভাইরাল ভিডিওটি ডিসেম্বর ২০২২-এ তোলা। সেই সময়, গুজরাটের বরোদায় এক দল উচ্চবর্ণের লোক এক দলিত যুবককে পেটায়।
আমরা ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলি দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তার ফলে, ওই ঘটনা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন সামনে আসে। ওই সার্চের ফলাফল থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ডিসেম্বর ২০২২-এ তোলা। বরোদায় রাজপুত ও ওবিসি সম্প্রদায়ের সাত ব্যক্তি একজন দলিত যুবককে মারধোর করার সময় সেটি তোলা হয়।
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ওই প্রহারের দৃশ্য অভিযুক্তরা সোশাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করে। এবং আক্রান্তের উদ্দেশে বিদ্বেষমূলক উক্তি করতে শোনা যায় তাদের। বরোদা তালুক থানার অধীনে ভায়েলি গ্রামে ১১ ডিসেম্বর, ২০২২-এ ঘটনাটি ঘটে।
বরোদা তালুক থানায় দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, আক্রান্ত ব্যক্তি হলেন ভয়েলি গ্রামের দলিত সম্প্রদায়ের অপলেশ পারমার। তিনি অভিযোগ করেন যে, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২-এ, সেবাসি ক্যানাল রোডের কাছে একটি মেয়ের সঙ্গে তিনি যখন বসে ছিলেন, তখন সাতজন তাঁকে মারধোর করে।
২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, বরোদার পুলিশ সুপার রোহন আনন্দ হিন্দুস্থান টাইমস-কে বলেন, “আমরা সাত জনের পাঁচজনকে আটক করেছি। তাদের শীঘ্রই গ্রেফতারও করা হবে। প্রাথমিক তদন্ত থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, অভিযোগকারী আক্রান্তকারীদের চিনতেন না। মনে হচ্ছে এটা পিছু নেওয়ার ঘটনা। আক্রান্ত ব্যক্তিটি সোশাল মিডিয়ায় মেয়েটি সম্পর্কে কটূক্তি করেছিল।” চার জন অভিযুক্তকে মহিপাল চাভদা, তুষার সোলাঙ্কি, পীযুষ রাঠোড় ও প্রণব সোলাঙ্কি বলে শনাক্ত করা হয়।
২২ ডিসেম্বর, ২০২২, কংগ্রেস বিধায়ক জিগ্নেশ মেবাণী-ও একই ভিডিও টুইট করেন। ঘটনাটিকে উনি “জনসমক্ষে একজন দলিত যুবককে গণপ্রহার করার চেষ্টা” বলে বর্ণনা করেন।
বরোদা তালুকের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তাঁরা ভাইরাল দাবিটি নস্যাৎ করে বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি খ্রিস্টান নন। এবং ঘটনাটি ডিসেম্বর, ২০২২-এ ঘটে। “সাত জন অভিযুক্তকেই সেই সময় গ্রেফতার করা হয়। আক্রান্তের নাম অপলেশ পারমার। তিনি একজন দলিত। তিনি খ্রিস্টান নন। একটি প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়াই ওই মারধোরের কারণ। আদালতে এখন মামলা চলছে,” বরোদা তালুক থানার এএসআই নিরুবেন বুমকে এই কথা বলেন।