এক পুলিশ সহ এক দল লোক এক মহিলাকে মুসলিম (Muslim) ছাত্রে ভর্তি একটি শ্রেণিকক্ষের বাইরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) এমন একটি ভিডিওকে ভুয়ো ও সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে ভাইরাল করা হয়েছে যে, একটি সরকারি স্কুলকে মাদ্রাসায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে।
তবে বুম দেখেছে, ভাইরাল ভিডিওটি গাজিয়াবাদের একটি সরকারি স্কুলের এবং তার বিষয়ে প্রচার করা সাম্প্রদায়িক তথ্যটি ভুয়ো।
২ মিনিটের কিছু বেশি সময়ের ভিডিওটি গত সপ্তাহের শেষ দিকে ভাইরাল করা হয় এবং সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী দক্ষিণপন্থীরা দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির সরকারকে হেয় করতে এতে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়েছে।
ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল একটি ক্যাপশনে লেখা হয়, "দিল্লির সরকারি স্কুলগুলো একে-একে মাদ্রাসায় রূপান্তরিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠপোষকতা করাই মনে হচ্ছে আম আদমি পার্টির ভোটব্যাংক রাজনীতির মূল লক্ষ্য?"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বুম এই ভিডিওটিই তার হোয়াটস্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯০৬১১১) সত্যতা যাচাইয়ের অনুরোধ সহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন: পুরভোট বন্ধের দাবিতে আদালতে বিজেপি? গ্রাফিকের দাবি বিভ্রান্তিকর
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল নিয়ে। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখেছি, ৩ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের মাথায় ভিডিও ক্লিপে হিন্দিতে লেখা স্কুলের নামটি পড়া যাচ্ছে—'প্রাথমিক বিদ্যালয়, মির্জাপুর, উত্তরপ্রদেশ'।
অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি, বিজয় নগর নামে ওই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলও রয়েছে।
এই সূত্র অনুসরণ করে এবং ভিডিওতে এক ব্যক্তির মুখে ফেসবুক লাইভ-এর কথা শুনে আমরা আরও খোঁজখবর করে দেখি, গাজিয়াবাদের এক বিজেপি কর্মী আশুতোষ গুপ্তা এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।
পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে তিনি পুলিশকে সতর্ক করেছেন এবং স্কুলের ভিতরে বেআইনি কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে এবং মাংসও পরিবেশন করা হচ্ছে। ভিডিওতে আশুতোষ গুপ্তাকেও দেখা যাচ্ছে।
গুপ্তার বিবরণের অনুবাদ করলে দাঁড়ায়- "গাজিয়াবাদের মির্জাপুরে বুদ্ধভারত নগরে এই স্কুলটি আপত্তিকর ইসলামি ক্রিয়াকলাপের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। সেখানে দীপাবলি, গঙ্গাস্নান ও গুরু পরবের পুণ্য তিথিতে মাংসের বিরিয়ানি পরিবেশন করা হচ্ছে। আপত্তিকর কাগজপত্রও পাওয়া যাচ্ছে। শুধু পুরুষরা নয়, মহিলা ও শিশুরাও সেখানে বিপুল সংখ্যায় জমায়েত হচ্ছে। সমাজকর্মী ডঃ আশুতোষ গুপ্তা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়ে ঘটনাটির ভিডিও তুলেছেন এবং পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছেন।"
বুম এরপর গাজিয়াবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, স্কুলটি উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের বিজয় নগর এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলই বটে।
পুলিশ অফিসার যোগেন্দ্র মালিক জানান—ঘটনাটি ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বরের যখন এক স্থানীয় বিজেপি নেতা দাবি করে বসেন যে, ওই স্কুলের ভিতরে নামাজ পড়া হচ্ছে।
তবে তদন্ত করে পুলিশ দেখেছে, ওখানে কোনও বেআইনি কার্যকলাপ ঘটেনি, তাই কোনও মামলাও করা হয়নি, কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।
তাঁর কথায়, "ঘটনাটি বিজয় নগরের, যেখানে কিছু রাজনৈতিক কর্মী প্রাথমিক স্কুলটিতে নামাজ পড়া হচ্ছে দাবি করে এলাকায় প্রবেশ করে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সেখানে যায় এবং দেখে যে, স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সেখানে রিয়াজুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি গত কয়েক বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করছে। ওই দিন অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর তাঁর স্ত্রী সন্তানদের মঙ্গল কামনায় একটি কোরান পাঠের অনুষ্ঠান রেখেছিলেন। স্বভাবতই তাঁর কিছু আত্মীয়া এবং শিশু সহ কয়েকজন শিক্ষক এবং একজন মৌলবি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। আমন্ত্রিতদের খাওয়াতে সেখানে চাল-ডাল রান্না হচ্ছিল, যখন পুলিশ গিয়ে সেখানে পৌঁছয়।"
ভিডিওতে পুলিশকে কয়েকজনকে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে, সেই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে অফিসারটি জানান, "দুই সম্প্রদায়েরই কিছু লোক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিল। কিছু লোককে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ছেড়েও দেওয়া হয়। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাদের নিরাপত্তার জন্যেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ অন্তত ওখানে আইনবিরুদ্ধ কিছু দেখতে পায়নি।"
আরও পড়ুন: বেজিং বিমানবন্দর হল নয়ডার, ছবি বিতর্কে সরকারি হ্যান্ডেল, বিজেপি মন্ত্রীরা