চারটি আলাদা এবং পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কহীন (Unrelated) ভিডিওর মন্তাজ ভুয়ো দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, এটি দুবাইয়ে (Dubai) ট্যাঙ্ক ট্রাক বিস্ফোরণের ভিডিও।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটি আসলে ইতালি, কায়রো এবং আজমনে ঘটা চারটি আলাদা আলাদা দুর্ঘটনার ভিডিওর মন্তাজ।
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে ভিডিওটি আসে এবং সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "দুবাই ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণ।"
পাঠকদের নিজস্ব বিবেচনা প্রযোজ্য : এই লেখায় গ্রাফিক ছবির বিবরণ রয়েছে যা অস্বস্তিকর হতে পারে
ভিডিওটিতে চারটি আলাদা আলাদা দুর্ঘটনার ক্লিপ রয়েছে। প্রথমটিতে একটি ট্রাক ট্যাঙ্কারকে আগুন ধরে যাওয়া অন্য একটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারতে দেখা যাচ্ছে। তার পরই এক ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়। দ্বিতীয়টিতে দেখা যাচ্ছে একটি গাড়িতে আগুন ধরে গিয়ে পিছনে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ছে। তৃতীয় ক্লিপটিতে একটি বাণিজ্যিক ভবনে আগুন ধরে যেতে দেখা যাচ্ছে। চতুর্থটি একটি সিসিটিভি ফুটেজ, যাতে বিস্ফোরণের ফলে লোকজনকে দৌড়ে পালাতে দেখা যাচ্ছে। বিস্ফোরণটি ক্যামেরা ধরা পড়েনি। দু'জন লোককে পালাতে দেখা যাচ্ছে যাদের গায়ে আগুন ধরে গেছে।
যে ভিডিওটিতে দুবাই ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে তার তথ্য যাচাই
প্রথম ক্লিপ
প্রথম ক্লিপটিতে ইউএসএ টুডের লোগো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তার পরই প্রবল বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। আমরা " ইউএসএ টুডে ট্রাক বিস্ফোরণ" দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে, দুর্ঘটনাটি ইতালিতে ঘটে। এই ঘটনায় ৭০ জন আহত হন, এবং দু'জনের মৃত্যু হয়।
আমরা বিবিসির একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিস্ফোরণটি বলগানায় ঘটে এবং বিস্ফোরণের ফলে সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে।
নীচে হোয়্যাটসঅ্যাপে পাওয়া ভিডিও (বাঁ দিকে) এবং ইউএসএ টুডের (ডানদিকে) ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেওয়া হল।
দ্বিতীয় ক্লিপ
দ্বিতীয় ক্লিপে একটি গাড়িতে আগুন ধরে যেতে দেখা যাচ্ছে। এই ক্লিপটি আগেও অন্য একটি দাবির সাথে ভাইরাল হয়েছিল।
বেইরুট বিস্ফোরণের পর যখন এই একই ক্লিপ ভাইরাল, হয় তখন ফরাসি তথ্য যাচাই সংস্থা এএফপি ক্লিপটির তথ্য যাচাই করেছিল।
এএফপি ভিডিওটির তথ্য যাচাই করে জানিয়েছিল যে, ২০২০ সালের ১৪ জুলাই মিশরের রাজধানী কায়রোতে তেলের পাইপলাইনে লিক হওয়াতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই দুর্ঘটনার সময় এই ভিডিওটি তোলা হয়েছিল।
তৃতীয় ক্লিপ
ইনভিডের উইভেরিফাই টুল ব্যবহার করে বুম হোয়্যাটসঅ্যাপে পাওয়া ভিডিওটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেমে ভাগ করে নেয় এবং তার পর রিভার্স ইমেজ সার্চ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির পোর্টাল এরেম নিউজের ২০২০ সালের ৫ আগস্টের সংবাদ প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাই, যাতে ইউএই'র আজমনে একটি শপিং কমপ্লেক্সে আগুন ধরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরেম নিউজ তাদের প্রতিবেদনে উৎস হিসাবে ইউএইর ইংরেজি সংবাদসংস্থা দ্য ন্যাশনালের উল্লেখ করেছে।
আমরা গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং আগুন ধরে যাওয়ার বিষয়ে দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদনটি দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদনের একটি ছবিতে দমকল কর্মীদের আগুন নেভানোর কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটি হোয়্যাটসঅ্যাপে পাওয়া ভিডিওর একটি ছবির সঙ্গে একদম মিলে যায়।
দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুসারে ৫ অগস্ট ভোরে আজমন স্পেশালিটি হাসপাতালের কাছে একটি জনপ্রিয় বাজারে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে।
নীচে হোয়্যাটসঅ্যাপে পাওয়া ভিডিও (বাঁ দিকে) এবং দ্য ন্যাশনালের (ডানদিকে) ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেওয়া হল।
চতুর্থ ক্লিপ
আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি এবং ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির একটি টুইট দেখতে পাই যাতে এই একই ক্লিপ দেওয়া হয়েছে। কায়রোর একটি রেল স্টেশনে দুর্ঘটনা বিষয়ক একটি টুইটার থ্রেডের অংশ হিসাবে এই ক্লিপটি দেওয়া হয়েছিল।
আল জাজিরার এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কায়রোর রামেজ স্টেশনে একটি ট্রেন ব্যারিয়ারে গিয়ে ধাক্কা মারে ফলে আগুন ধরে যায়। এই দুর্ঘটনার ফলে ৫০ জন আহত এবং ২০ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: প্রেমিকার জন্য উপহার 'দাঁত বাঁধানো নেকলেস'? ভুয়ো দাবিতে ছড়াল কৌতুক