এক চিত্রের পাশে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বর্ষীয়ান কংগ্রেস (Congress) নেতা এ কে অ্যান্টনির (A K Antony) স্ত্রী এলিজাবেথ অ্যান্টনির একটি ছবি এখন সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। ফটোটি এই দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকা কালে তিনি তাঁর স্ত্রীর আঁকা ছবি সরকারি অর্থ খরচ করে ২৮ কোটি টাকা দিয়ে কেনেন।
কিন্তু বুম দেখে দাবিটি মিথ্যে। ২০১২ সালে করা একটি ফেসবুক পোস্ট-এ এলিজাবেথ অ্যান্টনি দাবিটি খণ্ডন করে বলেন যে, তাঁর আঁকা ছবি এক জন ছবি সংগ্রাহককে ৯৫,০০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
এলিজাবেথ অ্যান্টনি হলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক পেশাদার। তাঁর অসরকারি সংস্থা (এনজিও) নাভুথান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর জন্য অর্থ সংগ্রহ করার জন্য উনি ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং শুরু করেন। তাঁর ওই সংস্থা ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের সাহায্য করে। তাঁর স্বামী এ কে অ্যান্টনি ২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
এ কে অ্যান্টনির ছেলে ও প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা অনিল অ্যান্টনি সম্প্রতি বিজেপিতে যোগদান করার জন্য খবরের শিরোনামে উঠে আসেন। তাঁর ছেলের সিদ্ধান্তে অ্যান্টনি দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করেন।
মিথ্যে দাবিটি সহ ছবিটি ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
ছবিটি আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বর ৭০০৯০৬৫৮৮-তেও আসে।
তথ্য যাচাই
অগাস্ট ২০১৮’য় বুম ওই দাবি পর্দাফাঁস করে। সেই সময় ইন্ডিয়া টুডে ও মেল টুডে মিথ্যে দাবি করে যে, এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ২৮ কোটি টাকা দিয়ে এলিজাবেথ অ্যান্টনির কাছ থেকে ছবি কেনে। সেই সময়েও ভাইরাল ছবিটি দুই প্রতিবেদনেই ব্যবহার করা হয়।
সেই সময় বুম এলিজাবেথ অ্যান্টনির সঙ্গে যোগাযোগ করলে, উনি ওই দাবি খণ্ডন করেন।
উনি বুমকে বলেন, “ওই গুজব যখন ছড়ায়, তখন আমার দলের একজন সদস্য আরটিআই-এর অধিনে তথ্য জানতে চান। এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া প্রশ্নের উত্তর দেয় এবং ছবিগুলির দামও তাতে উল্লেখ করা হয়।”
এয়ার ইন্ডিয়া কি তাঁর কোনও পেইন্টিং কিনে ছিল? তাঁকে এই প্রশ্ন করা হলে, তিনি তা অস্বীকার করেন। উনি বলেন, “আমার কোনও ছবি এয়ার ইন্ডিয়া কেনেনি।” উনি আরও বলেন যে, তাঁর আটটি ছবি কেনা হয়েছে বলে যে গুজব ছড়ানো হয়, তা তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই করা হয়।
“তাই আমরা আরটিআই করি, যাতে আসল তথ্য জন সমক্ষে আসে। আমার আর কিছু বলার নেই্,” বলেন এলিজাবেথ অ্যান্টনি।
২০১৬ সালে, আরটিআই-এর ভিত্তিতে দেওয়া এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র জবাব এলিজাবেথ অ্যান্টনি’র একজন কর্মীর দ্বারা পরিচালিত ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। আরটিআই-এ প্রশ্নটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট-এর আইনজীবী এসএস বিষ্ণু।
৪ জুলাই, ২০১৬, তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-এর তরফে আরটিআই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, নতুন আন্তর্জাতিক টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের আগমন ও প্রস্থান কক্ষে লাগানোর জন্য অ্যান্টনির নাভুথান চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন-এর কাছ থেকে দু’টি ছবি ১.২৫ লাখ টাকায় কেনা হয়। ১৯ অগাস্ট, ২০১৬ ডেকান ক্রনিকল-এর প্রতিবেদনে আরটিআই-করা প্রশ্নের উত্তরটি সম্পর্কে খবর করা হয়। তাতে বলা হয়, এ কে অ্যান্টনি’র স্ত্রীকে আরটিআই ক্লিন চিট দিয়েছে।
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
২০১২ সালেও এলিজাবেথ অ্যান্টনি ওই অভিযোগ খণ্ডন করেছিলেন। সেই সময় উনি জানান যে, তাঁর সব ছবি বিক্রি হয় ১৬ লক্ষ টাকায়। এবং ভাইরাল ছবিতে যে চিত্রটি দেখা যাচ্ছে, সেটি বিক্রি হয় ৯৫,০০০ টাকায়।