একটি পুরনো ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পিপল'স লিবারেশন আর্মির সৈন্যরা তাঁদের এক সঙ্গীর চার পাশে জড়ো হয়েছেন। সেই সৈনিকের মাথায় গভীর ক্ষত দেখা যাচ্ছে। অরুণাচল প্রদেশের (Arunachal Pradesh) তাওয়াংয়ে চলা ভারত ও চিনের সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ভিডিও বলে দাবি করে এই ভিডিওটি অনলাইনে শেয়ার করা হয়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি মিথ্যে। আসলে ভিডিওটি ২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে দুই পক্ষের মধ্যে চলা গুরুতর সংঘর্ষের ভিডিও।
২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২২ সালের ৮ ও ৯ ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী মধ্যরাত্রে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে দুই পক্ষ লাঠি এবং বেত নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গৃহমন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর লোকসভায় জানান যে, দুই পক্ষেই অনেকেই আহত হয়েছেন, কিন্তু ভারতীয় পক্ষে কেউ মারাত্মক আহত হননি বা গভীর চোট পাননি।
দুই পক্ষের এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু পুরানো ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
১০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একদল চিনা সৈন্য এক সৈনিককে দেখভাল করছেন, যাঁর মাথায় গভীর আঘাত রয়েছে। ভিডিওটির সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "রিচা চাড্ডাকে কেউ তাঁদের চিনা সৈন্যের অবস্থার খবর পৌঁছে দিক…।"
(হিন্দিতে লেখা মূল টেক্সট, कोई ऋचा चड्ढा तक पहुँचा दे उनके चीनी सैनिकों का हाल...!)
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ফেসবুকেও এই একই ভিডিও একই বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে দেখল যে, আসলে ভিডিওটি ২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে দুই পক্ষের মধ্যে চলা সংঘর্ষের, ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ের সংঘর্ষের ভিডিও নয়।
আমরা দেখতে পাই, ভিডিওটি আসলে একটি লম্বা ভিডিওর অংশ, যেটি চিনের একটি সরকারি সংবাদমাধ্যম থেকে পোস্ট করা হয়েছিল।
লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ২০২০ সালের ১৫ জুন রাত্রের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার প্রাণ যায় এবং বহু সৈন্য আহত হন।
চিন সরকারের স্বীকৃত চ্যানেল চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন) ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এই সংঘর্ষের একটি ফুটেজ পোস্ট করে এবং সঙ্গে ক্যাপশন দেয়, "২০২০ সালের বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের আসল সত্য।"
ভিডিওটির ১.৪৮ মিনিটের মাথায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওর একই দৃশ্য আমরা দেখতে পাই। ভিডিওটি ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "#ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের আসল সত্য চিন প্রকাশ করল, যা মানুষকে এই সব ঘটনার পিছনের সত্যি এবং ঠিক ও ভুল বুঝতে সাহায্য করবে। গত জুন মাসে ভারত এবং চিনের মধ্যে হওয়া সীমান্ত সংঘর্ষে চারজন সামরিক অফিসার এবং সৈন্য নিহত হন, এবং একজন রেজিমেন্টাল কম্যান্ডার মারাত্মক ভাবে আহত হন। #ভারত।"
ওই সংবাদমাধ্যম আহত চিনা সৈন্যকে রেজিমেন্টাল কম্যান্ডার কাই ফাবাও বলে উল্লেখ করে।
২০২২ সালের শীতকালীন বেজিং অলিম্পিক্সে কর্নেল কাই মশালবাহক নির্বাচিত নির্বাচিত হয়েছিলেন। চিন কর্নেল কাইকে নির্বাচিত করায় ভারত সরকার ক্ষুদ্ধ হয় এবং জানায় যে, বেজিং-এ তাদের দূতাবাসের শীর্ষ কূটনীতিক শীতকালীন অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী বা সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।
এই প্রতিবেদনে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ওই আহত চীনা সৈন্যের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তা চিনা সংবাদমাধ্যম সিসিটিভি চ্যানেলের দেওয়া ফুটেজ থেকে তৈরি এপি ফটোজ থেকে নেওয়া ছবি।
ছবির সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "গালওয়ান ভ্যালিতে ভারতীয় এবং চিনা বাহিনীর সম্মুখ সংঘর্ষে আহত চিনের পিপল'স লিবারেশন আর্মির রেজিমেন্টাল কম্যান্ডার কাই ফাবাও-এর মাথায় অন্য সৈন্যরা ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছেন।"
প্রতিবেদনটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।