সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন কনটেন্ট নির্মাতার ছবি ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবির সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে। মুখে ক্ষতচিহ্ন সহ একজন মহিলার ছবি শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন ছবিটি একজন হিন্দু (Hindu) মহিলার (woman) যাকে তার আব্দুল নামক মুসলিম (Muslim) স্বামী (husband) শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করেছে।
বুমের যাচাই করে দেখে ভাইরাল দাবিটি অসত্য। ছবিটি শ্বেতা পুন্ডীর নামে একজন কনটেন্ট নির্মাতার যিনি স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টারের সাহায্যে করে তার মুখে ভুয়ো ক্ষত চিহ্ন তৈরি করেছেন।
ভাইরাল দাবি
ভাইরাল ছবিতে এক লাল শাড়ি পরিহিতা মহিলার মুখে চোখ ও সংলগ্ন জায়গায় কালশিটেতে পরিণত হওয়া ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়। ছবিটি শেয়ার করে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারিরা দাবি করেছেন ছবির হিন্দু মহিলা পালিয়ে গিয়ে এক মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে যে পরবর্তীকালে তার উপর শারীরিক নির্যাতন করে, ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের বলেও দাবি করা হয়। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখেন, " "আমার আব্দুলটা একেবারে 'বিশেষ', প্রেম ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না" — আর সেই কারণেই আজ এই পরিণতি। লাভ জিহাদের ফাঁদে পড়ে আরেকটা মেয়ে প্রেমের মায়াজালে জড়িয়ে, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে।...এখন মেয়েটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে, আর আব্দুলকেও গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলাম
বুম ভাইরাল দাবিটি যাচাই করে দেখে ছবিটি শ্বেতা পুন্ডীর নামক এক কনটেন্ট নির্মাতার এবং তার মুখে ছবিতে থাকা ক্ষত চিহ্নগুলি আসল নয়।
ভাইরাল ছবি একজন কনটেন্ট নির্মাতার: আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চে করে শ্বেতা পুন্ডীরের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মিম পেজে একই ছবি দেখতে পাই। ক্যাপশন থেকে বিশেষ কোন তথ্য না পাওয়া গেলেও, তার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম পেজ পর্যবেক্ষণ করে আমরা নিশ্চিত হই ছবির মহিলা শ্বেতা পুন্ডীর নিজেই। তিনি দিল্লির বাসিন্দা এবং নিয়মিত ভ্লগ তৈরি করে থাকেন।
মুখের ক্ষত চিহ্ন আসল নয়: পুন্ডীরের ফেসবুক পেজে আমরা একই লাল শাড়িতে তার একাধিক ছবি দেখতে পাই যেখানে তার মুখে কোনও ক্ষত চিহ্ন নেই। এছাড়াও, পুন্ডীরের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুকে কয়েকটি ভিডিওয় তার মুখে ছবির মতো ক্ষত চিহ্ন দৃশ্যমান। ভিডিওগুলিতে যেসব মহিলারা প্রেমের দোহাই দিয়ে গার্হস্থ্য নির্যাতনকে মেনে নেন তাদের প্রশ্ন করতে দেখা যায় পুন্ডীরকে।
এইধরনের ভিডিওয় তার মুখের ক্ষত চিহ্নগুলিকে ক্রমাগত বদলাতে বা স্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায় যা ভিডিওয় কোনও ফিল্টারের প্রয়োগের ইঙ্গিত করে। মুখে চিহ্নসহ ফেসবুকে আপলোড করা অন্য একটি ছবিতে তাকে হাসতেও দেখা যায়। আবার ওপর একটি ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন, 'একটু বুঝুন আমার বোনেরা।' এর থেকে বোঝা যায় ভিডিওগুলি সচেতনতা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি।
স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টারের দিয়ে তৈরি চিহ্ন
এরপর, আমরা তার স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্টে গিয়ে একই শাড়ি পরে ও ভাইরাল ছবির মতো ফিল্টার দিয়ে তোলা একটি ভিডিও দেখতে পাই। আর্কাইভ দেখুন এখানে। আমরা যাচাই করে দেখি, মুখে জখমের চিহ্ন স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টার ‘mmmooort9′ ব্যবহার করে তৈরি।
ওই ফিল্টার দিয়ে অন্যান্য স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারীদের তৈরি অনুরূপ ভিডিও (আর্কাইভ) দেখা যায়। আমরা নিজেরাও ফিল্টারটি ব্যবহার করে দেখি ভাইরাল ছবির মতোই আমাদের মুখেও একই চিহ্ন তৈরি হয়েছে।
এর থেকে স্পষ্ট হয় ফিল্টারের সাহায্যে তৈরি ক্ষত চিহ্নসহ শ্বেতা পুন্ডীরের ছবিটি ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। নিশ্চিত করার জন্য আমরা শ্বেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, তার প্রতিক্রিয়া পেলে আমরা প্রতিবেদনে তা সংযোজন করব।