রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য হিন্দু দেবতা রামের নাম ব্যবহার করার জন্য বেনারসের এক সন্ন্যাসীকে (Seer) একটি ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) সমালোচনা করতে দেখা গেছে। ভিডিওটি ভাইরালও হয়েছে। তবে এই ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর, কারণ ওই সন্ন্যাসী ভিডিওটির যে অংশে 'জয় শ্রীরাম' বলাতে বিরক্ত হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও (Mamata Banerjee) তীব্র সমালোচনা করেছেন, সেই অংশটি কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।
অভিমুক্তেশ্বরানন্দ একটি স্থানীয় চ্যানেলকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ওই সাক্ষাৎকারের ভিডিও থেকে শুরু এবং শেষের অংশ বাদ দিয়ে ভাইরাল হওয়া এই ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে অভিমুক্তেশ্বরানন্দ একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি তোলার বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জির প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে মন্তব্য করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে হেনস্থা করার জন্য কিছু দিন আগে মিছিলে কিছু বহিরাগত ওই স্লোগান দেয় এবং তিনি ওই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও শাহ যে ভাবে কৃষক বিক্ষোভের মোকাবিলা করছেন, ওই ভিডিওতে তিনি তার সমালোচনা করেন। তিনি সেই সঙ্গে আরও বলেন যে তিন জন নেতাই আসলে একই রকম, তিন জনই রাজনৈতিক লাভ ও নিজেদের সুবিধার জন্য রামের নাম ব্যবহার করছেন।
এডিট করা ভিডিওতে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে। ওই হিন্দি ক্যাপশনের অনুবাদ, "মোদীর কি অধিকার আছে রাজনীতিতে রামের নাম ব্যবহার করার? রাম সম্পর্কে এই সাধু কী বলছেন, তা শুনুন...।"
(হিন্দিতে লেখা মূল টেক্সটঃ क्या मोदी को राम के नाम की राजनीति करने का हक़ है ? एक बार इन संत से राम की परीभाषा सुन ले...)
ভোটের সময় রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের সুবিধার জন্য কী ভাবে জয় শ্রীরাম মন্ত্র জপ করেন, কিন্তু আসলে রামের প্রকৃত নীতিকে অনুসরন করেন না, ওই সন্ন্যাসী ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে সেই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, "ভোটের সময়ই কি শুধু রামের নাম মনে পড়ে? তাঁর নাম কি শুধুই ভোটের সময় ব্যবহার করার জন্য? যদি কেউ সত্যিই রামের নাম নিতে চায়, তাহলে সে প্রথম অনুরোধেই তা করবে। ৭০ দিন ধরে কৃষকরা প্রবল শীতের মধ্যে প্রতিবাদ করছেন। হাড়কাঁপানো শীত ছিল কিন্তু তবু সরকার তাঁদের কথা শুনছে না, আর এ দিকে রাম নাম করছে। যারা রাম নাম করছে, তাদের কি কোনও অধিকার আছে রামের নাম উচ্চারণ করার? রামের নাম উচ্চারণ করার অধিকার তাদেরই আছে, যারা মানুষের সাহায্যের আর্তিতে প্রথম ডাকেই সাড়া দেয় এবং তাদের প্রাসাদ থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। তোমাদের রামের নাম নেওয়ার কোনও অধিকার নেই! লক্ষ লক্ষ কৃষক মারা যাচ্ছে ... তারা কি অবস্থায় রয়েছে দেখো... আর তোমরা তাদের জন্য রাস্তায় পেরেক পুঁতে রেখেছ! আর তোমরা জয় শ্রীরাম জপ করতে চাও। যারা রাজনীতিতে রামের নাম ব্যবহার করছে, তাদের মুখে আমি থুতু দিই। নরেন্দ্র মোদীই হোক বা অমিত শাহ ... দুজনেই একই ধরনের... ভুল ভাবে রামের নাম ব্যবহার করছেন...।"
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এই একই ভিডিও শেয়ার করেছেন।
আরও পড়ুন: কংগ্রেস কর্মীরা কি মিয়া খলিফাকে কেক খাওয়াচ্ছেন? না, তা নয়
তথ্য যাচাই
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে লাইভ ভিএনএস নামের লোগো এবং টিকার দেখা যাচ্ছে। এই সুত্র ধরে সার্চ করে আমরা দেখতে পাই এটি উত্তরপ্রদেশের বারানসীর একটি ইউটিউব চ্যানেল। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই চ্যানেল অভিমুক্তেশ্বরানন্দের ওই ভিডিওটি আপলোড করে এবং সঙ্গে বর্ণনায় জানানো হয় যে ওই সন্ন্যাসী কাশী বিশ্বনাথ করিডর বানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সমালোচনা করেছেন।
আসল ভিডিওতে অভিমুক্তেশ্বরানন্দ শুরুতেই জয় শ্রীরাম স্লোগান সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের সমালোচনা করেন। তার পর তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে কৃষক বিক্ষোভের মোকাবিলা করেছে তার সমালোচনা করেন এবং বলেন যে যারা কৃষকদের এই পরিস্থিতিকে অবহেলা করছে তাদের রামের নাম উচ্চারণ করার কোনও অধিকার নেই। এই ভিডিওর যে অংশে মমতা ব্যানার্জীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেই অংশটি কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিমুক্তেশ্বরানন্দ আবার মমতার নাম উল্লেখ করেন এবং বলেন যে রামের নাম করায় মমতা ব্যানার্জীরও বিরক্ত হওয়ার কোনও অধিকার নেই। তিনি আরও বলেন যে, মোদী, শাহ এবং ব্যানার্জী একই ধরনের রাজনৈতিক নেতা, যাঁরা রাজনৈতিক লাভের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে এই অংশটিও কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে অভিমুক্তেশ্বরানন্দ যা বলছেন, আসল ভিডিওর ২.৫৫ মিনিটের পর তাঁকে ওই মন্তব্য করতে শোনা যায়। তিনি আসলে মমতা ব্যানার্জী সম্পর্কে যা বলছিলেন এই অংশে সেই সম্পর্কেই বলে যাচ্ছিলেন। ভিডিওটির ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের পর তাঁকে বলতে শোনা যায়, "রামের নাম নেওয়ায় মমতার ভয় করছে, কিন্তু অন্যদের আনন্দও তো হচ্ছে...।" এর পর ভাইরাল ভিডিওতে যে অংশটি দেখা যাচ্ছে তা শুরু হয়েছে। মমতা ব্যানার্জী সম্পর্কে করা এই মন্তব্যটি ভাইরাল ভিডিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
যে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে তার শেষের দিকে অভিমুক্তেশ্বরানন্দ বলেন, "যারা রাজনীতিতে রামের নাম ব্যবহার করছে, তাদের মুখে আমি থুতু দিই। নরেন্দ্র মোদীই হোক বা অমিত শাহ ... দুজনেই একই ধরনের... ভুল ভাবে রামের নাম ব্যবহার করছেন...।" কিন্তু আসল ভিডিওতে তিনি বলেন, "যারা রাজনীতিতে রামের নাম ব্যবহার করছে তাদের মুখে আমি থুতু দিই। আমি মমতা ব্যানার্জীর মুখেও থুতু দিই, উনি তো বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বলছেন না, উল্টে যারা রামের নাম নিচ্ছে তাদের উপর বিরক্ত হচ্ছেন। মমতা ব্যানার্জীই হোন বা নরেন্দ্র মোদীই বা অমিত শাহ ... দুজনেই একই ধরনের... ভুলভাবে রামের নাম ব্যবহার করছেন... এক জন তাঁর নাম করে, আর অন্য জন তাঁর বিরোধিতা করে...।"
এই অংশটি কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে যাতে ভিডিওটি দেখে মনে হয় যে শুধু মোদী ও শাহের সমালোচনা করা হয়েছে।
নিচে সমগ্র ভিডিওটি দেখতে পাবেন।