মসজিদের (Mosque) দৃশ্য সমেত একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, এটি কেরলের (Kerala) একটি প্রাচীন মন্দির (Temple), যেটিকে মুসলমানরা দখল করে মসজিদ বানিয়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওতে যে মসজিদের ছবি দেখা যাচ্ছে, সেটি কেরলের নয়, মেঙ্গালুরুর। যে ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল থেকে ভিডিওটি প্রথম আপলোড করা হয়েছিল, বুম তার ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলে। তিনিও জানান যে, সত্যিই মসজিদটি মেঙ্গালুরুর।
অনেকগুলি ক্লিপকে একত্রে জুড়ে ভিডিওটি বানানো হয়েছে, এবং ক্লিপগুলিতে একটি ধর্মীয় প্রার্থনার জায়গার ছবি দেখা যাচ্ছে। ছবিতে ফেজ টুপি পরিহিত লোকেদের দেখা যাচ্ছে, যা দেখে মনে হচ্ছে যে এটি এক মসজিদের পরিসর। টুইটারে ভিডিওটির সঙ্গে হিন্দিতে লেখা যে ক্যাপশন লেখা হয়েছে তার অনুবাদ, "কেরলে মুসলমানরা একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির বেআইনি ভাবে দখল করে মসজিদ বানিয়েছে। হিন্দু সমাজ এর বিরোধিতা করা সত্ত্বেও কেরলের কমিউনিস্ট বামপন্থী সরকার এই ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ করছে না।"
(হিন্দি: केरल में अति प्राचीन हिंदू मंदिर पर अवैद्य कब्ज़ा करके मुसलमानो ने बनाई मस्जिद ... हिंदू समाज के विरोध के बावजूद केरल की वामपंथी कम्यूनिस्ट सरकार कोई भी कारवाई करने के लिए तैयार नहीं)
এখানে, এখানে ও এখানে আরো পোস্ট দেখতে পাবেন।
ভিডিওটি ফেসবুকেও একই দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
পোস্টটি এখানে দেখতে পাবেন।
আরও পড়ুন: তথ্য যাচাই: সবচেয়ে বেশিদিন একটানা মহাকাশে কাটিয়েছেন নসার নভশ্চর ক্রিস্টিনা কোচ?
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি খুব ভালো করে লক্ষ করে, এবং দেখতে পায় যে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভিডিওটিতে উপরের দিকে বাঁ কোণে ওয়াটারমার্কে টিএসওআই এবং থাউজ্যান্ড শেডস অব ইন্ডিয়া কথাটি লেখা রয়েছে।
এই সূত্র ধরে আমরা থাউজ্যান্ড শেডস অব ইন্ডিয়ার খোঁজ করি এবং ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল দেখতে পাই।
টিএসওআই'র ইউটিউব পেজের অ্যাবাউট সেকশনে লেখা হয়েছে, "আমরা আমাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ভারতের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং পরম্পরা, ইতিহাস এবং শিল্প ও শৈলী তুলে ধরি।"
বুম টিএসওআই'র সব ক'টি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যন্ডেল ভাল করে লক্ষ করে এবং দেখতে পায় যে, ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর এই একই ভিডিও তাদের ইনস্টাগ্রাম পেজে আপলোড করা হয়েছিল।
ভিডিওটির সঙ্গে যে লম্বা ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল, তার অনুবাদ, "কর্নাটকের সবচেয়ে পুরানো এবং ভারতের তৃতীয় প্রাচীনতম মসজিদের এক ঝলক। মেঙ্গালুরুর বন্দর এলাকায় ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রাচীনতম বসতি রয়েছে। প্রায় ১৪০০ বছর ধরে তাঁরা এখানে বসবাস করছেন। ১৪০০ বছর আগে তৈরি তাঁদের প্রাচীন প্রার্থনাস্থল জিনাত বক্স মসজিদ তাঁদের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। অষ্টাদশ শতকে টিপু সুলতান এই মসজিদটিকে সংস্কার করেন এবং এটির নতুন নামকরণ করেন। শান্ত এবং অনবদ্য নির্মানশৈলীর এই মসজিদে রয়েছে কাঠের সূক্ষ্ম কারুকাজ। শহরের দক্ষিণ বন্দর এলাকার ব্যস্ততার মধ্যে জিনাত বক্স মসজিদ যেন এক মরূদ্যান।"
ভিডিওটি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার জন্য আমরা থাউজ্যান্ড শেডস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক শফাত শাহবন্দরীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। শফাত বুমকে জানান যে, ভিডিওটি ২০২১ সালে ম্যাঙ্গালোরে তোলা হয়েছিল। শফাত বলেন, "আমরা এই ভিডিওটি একটি রিল হিসাবে রেকর্ড করেছিলাম, তাই এটি শুধু আমাদের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে রয়েছে। ভিডিওটিতে জিনাত বক্স মসজিদ দেখা যাচ্ছে। আমরা আমাদের স্টোরি হিসাবে মন্দির এবং চার্চের ভিডিওও তুলি।"
ম্যাঙ্গালোরের জীনাত বক্স মসজিদ
বুম জিনাত বক্স মসজিদ দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে এবং এই মসজিদ সম্পর্কে অনেকগুলি ব্লগপোস্ট এবং সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পায়।
২০১৬ সালে ২১ মে দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সেন্ট্রাল মুসলিম কমটির সেক্রেটারি হানিফ আলির একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়। তিনি বলেন যে, জিনাত বক্স মসজিদ সম্ভবতঃ ওই রাজ্যের একমাত্র মসজিদ, যেটি পুরো কাঠের তৈরি। ভিডিওতে যে সব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তা এই মন্তব্যকে সমর্থন করে।
কর্নাটক সরকারের পর্যটন দফতরের ব্লগপোস্টে উল্লেখ করা হয় যে, মেঙ্গালুরুর বন্দর অঞ্চলে অবস্থিত এই মসজিদটিতে নবী হজরত মহম্মদের জীবন কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। ওই ব্লগপোস্টে আরও উল্লেখ করা হয় যে, মসজিদটি ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে আরব ব্যবসায়ীরা তৈরি করেন। সপ্তদশ শতকে টিপু সুলতান এটির সংস্কার করেন এবং তাঁর মেয়ে জিনাত বক্সের নামে মসজিদটির নামকরণ করেন।
এছাড়াও বুম কেরলে মুসলমানদের হিন্দু মন্দির দখল করার বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদনের খোঁজ করে, কিন্তু এরকম কোনও প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মাথা নোয়ালেন আদানি সহধর্মিনী প্রীতি আদানির কাছে?