একসাথে বহু মানুষের কাঁটাতারের বেড়া পেরোনোর একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর অবৈধ (illegal) বাংলাদেশিদের (Bangladeshi) ভারত ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্ত (border) দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও বলে ভুয়ো দাবি করে ভাইরাল হয়েছে।
বুম দেখে ভিডিওটি নদিয়ার শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় মাথাভাঙ্গা নদীর নিমতলা ঘাটে ফুনকাতলার শ্যামা কালী প্রতিমা বিসর্জনের। মুরুতিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর নির্মাল্য দত্ত বুমকে নিশ্চিত করেন, ভাইরাল ভিডিওটি এবছরের ৩০ অক্টোবরের।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে গত ৪ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে। ইতিমধ্যেই, সমাজমাধ্যমে এসআইআরের জেরে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যাওয়ার দাবিতে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পরেছে। বুম দাবিগুলি খণ্ডন করে তথ্য যাচাই করেছে; দেখুন এখানে ও এখানে।
দাবি
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করেছেন, "SIR এর এফেক্ট ....যারা বলেছিল কাগজ দেখাবো না তারাই আজ তল্পি - তপ্লা নিয়ে ভারত বাংলাদেশ বর্ডারে ভিড় জমিয়েছে বাংলাদেশে পালানোর জন্য।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলাম
১. ভিডিওটি কালী প্রতিমা নিরঞ্জনের: আমরা দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওটিকে একাধিক কিফ্রেমে ভেঙ্গে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। সার্চের মাধ্যমে আমরা এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর ৩০ অক্টোবর, ২০২৫-এ পোস্ট করা একটি ভিডিওয় কাঁটাতারের বেড়া ও কালো গেট দেখতে পাই যা ভাইরাল ভিডিওর মতোই বহু মানুষ একসঙ্গে পার করছেন। ভিডিওর ক্যাপশন অনুসারে, সেটি ফুনকাতলার শ্যামা কালীর বিসর্জনের।
এছাড়াও, আমরা ওই ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে ৩০ অক্টোবরে একটি লাইভ ভিডিও পাই যেখানে প্রতিমা নিরঞ্জন দেখতে আসা মানুষদের ভিড় জমাতে দেখা যায়। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
নীচে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশটের সঙ্গে একটি তুলনা দেওয়া হল।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা আরও এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পোস্টে ফুনকাতলার শ্যামা কালীর বিসর্জনের দৃশ্য দেখতে পাই। এই ভিডিওয় ভক্তদের মা কালীর মূর্তি কাঁধে নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে নদীতে বিসর্জন দেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।
২. পুলিশের নিশ্চিতকরণ: পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে ভাইরাল দাবিটি খণ্ডন করে জানায়, ভিডিওটি নদিয়া জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মাথাভাঙ্গা নদীতে মুরুতিয়া থানার আওতায় ফুনকাতলার কালী ঠাকুর বিসর্জনের।
কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশও ভাইরাল দাবিটি খণ্ডন করে এক্স পোস্ট করে। দেখুন এখানে।
বুম মুরুতিয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর নির্মাল্য দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ভাইরাল দাবিটিকে ভুয়ো বলে খণ্ডন করেন। তিনি জানান, ভিডিওটি ৩০ অক্টোবর, ২০২৫-এ নিমতলা ঘাটে ফুনকাতলার কালী প্রতিমা বিসর্জনের। ফুনকাতলায় কালী পুজো উপলক্ষে ১১ দিনের মেলা হয় এবং মাথা ভাঙ্গা নদীতে বিসর্জনের সময় আশেপাশের থানা থেকে কয়েক হাজার লোকের জমায়েত হয়।
এসআই আরও বলেন, "আগে ওখানে কাঁটাতারের বেড়া ছিল না এবং লোকে সহজেই বিসর্জন দিত। কিন্তু এবছর বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে সীমান্তে একটি কাঁটাতারের বেড়া ও গেট লাগানো হয়েছে যার ফলে নদীটি বেড়ার অপরপ্রান্তে পড়ে এবং বিসর্জন দিতে গেলে গেট পেরিয়ে যেতে হয়। প্রত্যেক বারের মতো এবছরও যখন প্রচুর লোক বিসর্জনের সময় জড়ো হয় সেসময় ভিডিওটি কেউ তোলে এবং সেটিই ভুয়ো দাবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।"
এসআই নির্মাল্য দত্ত আমাদের সঙ্গে মাথাভাঙ্গা নদীতে কালী প্রতিমা নিরঞ্জনের কিছু ভিডিওও শেয়ার করেন। এছাড়াও, তিনি আমাদের পুলিশের তরফে তোলা কাঁটাতারের বেড়া ও গেটের ছবি পাঠান যা ভাইরাল ভিডিওয় দৃশ্যমান। ছবিগুলি দেখুন নীচে।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: শ্রীজিৎ দাশ)






