ব্যাংক ইন্দোনেশিয়ার (Bank Indonesia) দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ভগবান গণেশের (Lord Ganesha) ছবি সম্বলিত ২০ হাজারি ইন্দোনেশীয় রুপাইয়ার (Indonesian Rupaiyah) (আইডিআর) নোট ২০০৮ সালেই সে দেশে বাতিল হয়ে গেছে। ওই সব নোটের নকশায় গণেশ দেবতার যে ছবি ছিল, তা দেখিয়ে কিছু ভারতীয় নেতা ভারতীয় মুদ্রা (Indian Currency) বা নোটে ওই রকম দেবদেবীর ছবি ছাপার জন্য দাবি তুলেছেন।
২৬ অক্টোবর, ২০২২ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, নতুন করে ছাপানো ব্যাংক নোটে মহাত্মা গাঁধীর পাশাপাশি লক্ষ্মী এবং গণেশের ছবিও ছাপা হোক। তাঁর এই আর্জির পক্ষে যুক্তি, ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম-প্রধান একটি দেশের ২০ হাজার রুপাইয়ার নোটে যদি হিন্দু দেবতা গণপতির ছবি ছাপা হতে পারে, তবে ভারতীয় মুদ্রায় নয় কেন? কেজরিয়াল এই তথ্যটি চেপে গেছেন যে, ওই সব নোট অনেক আগেই সে দেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেl
এই সব কুড়ি হাজারি ব্যাংক নোট ইন্দোনেশিয়ায় চালু করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে 'হাজার দেবন্তর'-র আমলে, যা ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। যদিও তারপরেও ১০ বছর পর্যন্ত ওই সব নোট সে দেশের নাগরিকরা বিনিময় করতে পেরেছেন।
কেজরিওয়ালের মন্তব্যটি নীচের ভিডিওয় ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের মাথায় শোনা যাবে:
এরপরেই সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী আম আদমি পার্টির বহু সদস্য তাঁদের দলনেতার এই দাবির প্রতিধ্বনি করে ভারতীয় ব্যাংকনোটেও হিন্দু দেবদেবীর ছবি ছাপার আবেদন জানিয়ে পোস্ট করতে থাকেন। তাঁদের অধিকাংশেরই ধারণা, ইন্দোনেশিয়ায় এখনও গণেশের ছবি দেওয়া ব্যাংকনোট চালু রয়েছে।
গণেশের ছবি ছাপা ব্যাংকনোট 'দেবন্তর'-র নামাঙ্কিত মুদ্রায় নীচের ছবিতে দেখুন:
কেজরিওয়ালের মন্তব্যের আগেই অবশ্য সোশাল মিডিয়ায় এ কথা ভাইরাল হয়ে যায় যে ইন্দোনেশিয়ায় এখনও এ ধরনের নোট চালু রয়েছে।
আরও পড়ুন: কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর 'ভারত জোড়ো' যাত্রার এই ছবিটি সম্পাদিত
১৪ বছর আগেই বিমুদ্রাকরণ হয়ে গেছে
ইন্দোনেশীয় ব্যাংকের সূত্র অনুসারে এই সব নোট ১৯৯৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রবর্তন করা হয়েছিল। উপলক্ষ ছিল ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত শিক্ষাব্রতী "কি হাজার দেবন্তর"-র জন্মবার্ষিকী উদযাপন। এই 'দেবন্তর' ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষামন্ত্রীও ছিলেন। ব্যাংক নোটে তাঁর ছবির পাশেই গণপতি দেবতার একটি ছবিও ছাপা হয়। কুড়ি হাজারি এই নোটের বৈধতা ছিল ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবধি।
২০০৮ সালের নভেম্বরে ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সব নোটের বিমুদ্রাকরণ ঘটায়, যা দেখা যাবে এখানেl সেই সঙ্গেই ১৯৯৮ সালে প্রবর্তিত দশ হাজারি নোট এবং ১৯৯৯ সালে প্রবর্তিত পঞ্চাশ হাজারি ও এক লাখি রুপাইয়ার নোটও বিমুদ্রাকরণ করে ফেলা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর এই নোটগুলি আর ব্যবহারযোগ্য নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এই ধরনের নোটের বিমুদ্রাকরণ ইন্দোনেশীয় অর্থব্যবস্থার একটি নিয়মিত ব্যাপার, যা ব্যবস্থার নিরাপত্তার স্বার্থেই মাঝেমধ্যেই গৃহীত হয়ে থাকে।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে এ কথাও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, যাঁদের কাছে এই সব নোট রয়েছে, তাঁরা পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে (অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সেগুলো ভাঙিয়ে নিতে বা বিনিময় করতে সুযোগ পাবেন। যার মধ্যে প্রথম ৫ বছর যে-কোনও বাণিজ্যিক ব্যাংকে এই সুবিধা পাওয়া যাবে, আর পরবর্তী ৫ বছর শুধু ব্যাংক ইন্দোনেশিয়ায় এই সুবিধা মিলবে।
২০১৮ সালে ব্যাঙ্ক ইন্দোনেশিয়া জনসাধারণকে ব্যাঙ্কনোট বিনিময় করার সময়সীমা ঘনিয়ে আসার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে৷
২০১৮ সালের জুন মাসে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৫০ হাজারি রুপাইয়ার নোটের ছবি দিয়ে তার বিমুদ্রাকরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, যা দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া বিজ্ঞপ্তি জারি করে, যেহেতু বাতিল নোট বিনিময় করার চূড়ান্ত সময়সীমা আসন্ন, তাই ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ব্যাংকে একটি বিশেষ ডেস্ক চালু করা হচ্ছে পুরনো নোট বিনিময় করে নেওয়ার জন্য। বিজ্ঞপ্তিটি দেখুন এখানে।
কুড়ি হাজারি ইন্দোনেশীয় রুপাইয়ার বর্তমান অবস্থা কী রকম?
এখন ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া যে তিন ধরনের কুড়ি হাজারি রুপাইয়া চালু রেখেছে, তার কোনওটিতেই গণপতি দেবতার কোনও ছবি নেই।
২০১৬ সালে প্রবর্তিত নোটে "ড. জি.এস.এস. যে রাতুলাঙ্গি" নামক দেশনেতার ছবি রয়েছে, যা দেখা যাবে এখানে।
২০২২ সালে ওই একই নেতা 'ড. জি.এস.এস. রাতুলাঙ্গি'র ছবি দেওয়া অন্য কুড়ি হাজারি নোটটিও দেখা যাবে এখানে।
২০১১ সালে প্রবর্তিত একটি স্মারক নোটের ছবিও দেখা যাবে এখানে, যে কুড়ি হাজারি নোটে রয়েছে "অটো ইস্কান্দার ডি নাটা"-র ছবি।