মিশরে (Egypt) পুরনো প্রতিবাদের এক ভিডিও আবারও ভুয়ো দাবি সহ ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয় কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা কিভাবে সাম্প্রতিক ইজরায়েল (Israel) ও প্যালেস্টাইনের (Palestine) সংঘাতের প্রাণহানির সাজানো ঘটনা তৈরী করছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওতে একাধিক কাফনে মোড়া মৃতদেহকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই ভিডিওর এক অংশে দেখা যায় একটি লাশ কাফনের নিচে নড়াচড়া করছে। পরের মুহুর্তেই যখন একজন সেই কাফন তুললেন, তখন এক ব্যক্তিকে তার তলায় হাসতে দেখা যায়। ফের তার মুখে কাফন চাপা দিয়ে দেওয়া হয়।
বুম দেখে এই ভিডিওর সাথে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের যোগ নেই। এই ভিডিও ২০১৩ সালের মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদের দৃশ্য।
সম্প্রতি ইজরায়েল সরকার প্যালেস্তাইনের সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। হামাস ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের ইজরায়েলে হামলা চালায় যার কারণে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এই মুহূর্তে ইজরায়েল যুদ্ধবিরতির সমস্ত বার্তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে কাফনে মোড়া দেহের এই ভিডিও ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এই ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়,"এই ভিডিও আল-জাজিরা তৈরি করেছে। এমন কিছু মৃতদেহের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে যা মৃতদেহও নয়। জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। রোজ সকাল-সন্ধ্যা আপনাদের চড় খাওয়া উচিত।"
এই পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বেশ কিছু ডানপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরাও এই দৃশ্যগুলি হিন্দি ক্যাপশন সহ শেয়ার করেছেন তাদের এক্স প্রোফাইলে।
এই ধরণের একটি পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম এর আগেও এই একই ভিডিওর তথ্য যাচাই করেছে। ২০২১ সালে একই ধরনের মিথ্যা দাবি সহ এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সময় আসল প্রেক্ষাপটটি প্রকাশ করে বুম। আমরা তখন দেখি এই ভিডিও ২০১৩ সালের মিশরের কায়রো শহরে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদের দৃশ্য।
ভাইরাল ভিডিওর অংশগুলি রিভার্স সার্চ করে আমরা লক্ষ্য করি আল-বাদিল নামক মিশরীয় সংবাদপত্র, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে একই ভিডিওর এক দীর্ঘ সংস্করণ পোস্ট করে। ভিডিওটি এক আরবি ক্যাপশন সহ আপলোড করা হয় যার বাংলা অনুবাদ হল, "আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মৃতদেহের উপস্থাপনা"।
এই ভিডিওর সাথে থাকা আরবি ভাষার বর্ণনায় বলা হয় আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য মুসলিম শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক বিক্ষোভের আয়োজন করে।
আরও জানা যায়, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংগঠনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকেও প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এছাড়াও, কয়েকজন ছাত্র মোমবাতি জ্বালায় এবং আকাশে আতশবাজি উড়িয়ে দেয়।
এই সূত্র ধরে আমরা এই প্রতিবাদ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন খোঁজার চেষ্টা করি এবং এই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখতে পাই।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও তার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ৩১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে এই প্রতিবাদের এক ভিডিও পোস্ট করেছিল।
মিশর-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আহরাম অনলাইনের ২৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, "একটি "সামরিক বিদ্রোহের" বিরুদ্ধে ছাত্রদের দল প্রতিবাদ করছে যা ইসলামপন্থী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। ছাত্ররা সেদেশের অন্তর্বর্তী নেতৃত্বকে খারিজ করেছে এবং আবারও মুরসিকে নিজের পদে ফেরানোর দাবি করছে।" এই প্রতিবেদনে মিশরের সামরিক বিদ্রোহ এবং মুরসির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঘটনার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়।






 
                               
                               
                               
                               
                              
