একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কর্নাটকের (Karnataka) কোপ্পালে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মেটাতে বললে, একজন বিদ্যুৎ কর্মীকে চড় মারা (Slapping) সহ নিগ্রহ করেন এক ব্যক্তি। সেই ভিডিও মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করে বলা হয়, কংগ্রেস (Congress) রাজ্যে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ (Free Electricity) সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় একজন গ্রাহক বিল মেটাতে অস্বীকার করেন।
সম্প্রতি আয়োজিত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস জয়লাভ করে। এবং সিদ্দারামাইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী করে নতুন সরকার গঠন করে তারা। কংগ্রেস তাদের প্রাকনির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলে যে, কর্নাটকে প্রতিটি পরিবার বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ পাবে। যদিও এই প্রতিশ্রুতি রূপায়নের খুঁটিনঁটি এখনও বিজ্ঞাপিত হয়নি, ওই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে, কিছু কিছু মানুষ ইতিমধ্যেই বিদ্যুতের বিল দিতে অস্বীকার করছেন।
খবরে প্রকাশ, কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতির দোহাই দিয়ে, বেলাগাভি ও গুলবর্গ জেলার গ্রামবাসীরা তাঁদের বর্তমান বিদ্যুৎ বিল মেটাতে অস্বীকার করছেন।
ভাইরাল ভিডিওটি একই ধরনের মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কোপ্পালের এক ব্যক্তি তাঁর বিদ্যুৎ বিল মেটাতে অস্বীকার করেছেন। বিদ্যুৎ বোর্ডের এক কর্মী বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে, তাঁকে মারধোর করা হয়।
দক্ষিণপন্থী টুইটার ব্যবহারকারী ঋষি বাগড়ি ভিডিওটি শেয়ায় করেন। তিনি মিথ্যে দাবি করে লেখেন, “মিটার রিডিং নিতে গেলে, কর্নাটকের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ কর্মীদের আক্রমণ করছেন। বাসিন্দারা বলছেন, কংগ্রেসের গ্যারান্টির ভিত্তিতে তাঁরা আর এখন থেকে বিদ্যুতের বিল মেটাবেন না।”
ভিডিওটিতে গুলবর্গ ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কম্পানি লিমিটেড-এর (জিইএসসিওএম) উর্দি-পরা এক কর্মীকে মারতে ও গালিগালাজ করতে দেখা যাচ্ছে একজনকে। অপর এক কর্মী, যিনি ওই নিগ্রহের ভিডিও রেকর্ড করছিলেন, তাঁকেও মারতে যান ওই ব্যক্তি।
একই মিথ্যে দাবি সমেত ভিডিওটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
আমরা ভিডিওটি শুনি। যিনি জিইএসসিওএম কর্মীদের মারধোর করছিলেন, তাঁকে এক বারও, ‘কংগ্রেস’ বা ‘সরকার’ শব্দগুলি উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি। নিগ্রহ ও গালমন্দ করার মাঝখানে, ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “আমি জিইএসসিওএম-কে মিটারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাল্টাতে বলেছিলাম। কিন্তু এখনও তা করা হয়নি। আমি টাকা দেব না। আপনাদের যা ইচ্ছে তা করে নিন।”
জিইএসসিওএম কর্মীদের নিগ্রহ করার ঘটনা সম্পর্কে সার্চ করলে, আমরা ‘সাউথফার্স্ট’-এর প্রতিবেদক অনুশা রবি সুদ-এর একটি টুইট দেখতে পাই। তাতে উনি বলেন, ঘটনাটি কোপ্পাল জেলায় ঘটে। এবং ভাইরাল ভিডিওটির সমালোচনা করে জানান যে, লোকটির ৯,০০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি পড়েছিল। সেটি উনি দিতে অস্বীকার করছিলেন।
আমরা কোপ্পাল জেলার পুলিশ সুপার যশোদা ভান্টাগোডির সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি জানান, গ্রেফতার-হওয়া অভিযুক্তর নাম চন্দ্রশেখর হিরেনাথ। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
ভান্টাগোডি বলেন, “অভিযুক্ত প্রায় ছ’ মাস তাঁর বিদ্যুৎ বিল মেটাননি। তার ফলে, ৯,০০০ টাকা বাকি পড়ে যায়। ওই পরিমাণ টাকা বাকি থাকায়, তাঁর বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয় কর্নাটক ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ড। তাছাড়া, উনি একটি বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিলেন। সে বিষয়ে জিইএসসিওএম কর্মীরা তদন্ত ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে, ওই ব্যক্তি তাঁদের মারধোর ও গালিগালাজ করেন।” উনি আরও জানান যে, ওই ঘটনার পর হিরেনাথকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়াও আমরা জিইএসসিওএম-এর কোপ্পাল ডিভিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা বলেন, ঘটনাটির পর স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। “সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার জন্য উনি অপেক্ষা করছেন, এমন কথা ওই ব্যক্তি বলেননি। উনি বকেয়া বিল মেটাতে অস্বীকার করেন। এবং আমাদের কর্মীরা তাঁর বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ কাটতে গেলে, উনি তাঁদের ওপর চড়াও হন,” বলেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আধিকারিক। উনি আরও জানান, “সরকারের প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে এখানে কিছু কৃষক বিদ্যুতের বিল মেটাতে অস্বীকার করছে। কিন্তু এই ঘটনাটি তার মধ্যে পড়ে না। আমরা গ্রাহকদের বলছি যে, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। সেই সময় পর্যন্ত সকলকে নিয়মিত টাকা দিয়ে যেতে হবে।”