বাংলাদেশে (Bangladesh) একটি দানের অনুষ্ঠানে এক স্থানীয় নেতার একজন বয়স্ক মহিলাকে মারার ভিডিও এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, কর্নাটকে নির্বাচনের (Karnataka Elections) আগে একজন ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) নেতা ওই মহিলাকে মারধোর করেন।
বুম দেখে ভিডিওটিতে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার (Satkhira) ঘটনা দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের রমজান মাস চলাকালীন বস্ত্র বিলির সময় স্থানীয় নেতা হাবিবুর রহমান বিটু (Habibur Rahman Bitu) ওই মহিলাকে মারেন।
১০ মে অনুষ্ঠিত হতে চলা কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের পটভূমিতে এই ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
হিন্দি ক্যাপশন সহ ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, “নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের অবস্থা। গরিবদের
মধ্যে পার্টি কর্মকর্তারা বস্ত্র বিতরণ করার সময়, বিজেপি নেতার আসল রূপ বেরিয়ে পড়েছে। নির্বাচন জেতার পর গরিবদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
ভিডিওটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
(হিন্দিতে মূল ক্যাপশন: #कर्नाटक चुनाव से पहले ये हाल है भाजपाइयों का असली रूम बीजेपी परवख्ता गरीबों को कपड़ा वितरण करते हुए। चुनाव जीतने के बाद आप समझ सकते हैं गरीबो के साथ इस तरह का व्यवहार दुःखद है)
বেশ কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী একই দাবি সমেত ভিডিওটি শেয়ার করেন। ফেসবুক পোস্টগুলি দেখুন এখানে ও এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম লক্ষ করে, ভিডিওর টিকারে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে, “হাবিবুর রহমান (বিটু), সদস্য ও সম্পাদক, ওয়ার্ড নং ২, আওয়ামী লীগ”।
বাংলা লেখাটি আমরা গুগলে সার্চ করি। দেখা যায়, বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ইউটিউব ব্যবহারকারী ভিডিওটি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আপলোড করেছিলেন। দেখুন এখানে ও এখানে।
ভিডিওটির ওপরের বাঁ দিকের কোণে, একটি লোগো ও ‘এসবি সাতক্ষীরা বুলেটিন’ লেখাটি দেখা যায়।
তাছাড়া, আমরা ফেসবুকে কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি। দেখা যায়, ‘সাতক্ষীরা বুলেটিন’ নামে বাংলাদেশের একটি একদম স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ভিডিওটি ২০ মার্চ, ২০২৩-এ ফেসবুকে প্রথম আপলোড করে। আর্কাইভ দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ক্যাপশন অনুযায়ী, “সাতক্ষীরা পৌরভার অন্তর্গত ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে হাবিবুর রহমান (বিটু) এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে সদস্য সচিব করায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা হতাশ। এ ধরনের কোনো ব্যক্তি তৃনমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হবে এবং কর্মী শূন্য হয়ে পড়বে দল এমন টি জানিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কর্মীরা”।
আওয়ামী লীগের বর্তমান জেলা প্রেসিডেন্ট ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলামের বক্তব্য উদ্ধৃত করে, বাংলাদেশের দৈনিক যুগান্তর ২ এপ্রিল, ২০২৩ ওই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদন ছাপে। ইসলাম বলেন, ভিডিওটি যে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, তা তিনি জানেন। এবং দাবি করেন, ভিডিওটি পুরনো।
রিপোর্টে ওই মহিলাকে সাতক্ষীরা শহরের মাজিতপুর এলাকার বাসিন্দা বাবুল-এর স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলে শনাক্ত করা হয়। অভিযোগ করা হয় যে, হাবিবুর রহমান (বিটু) ওই মহিলার মাথায় তিন বার মারেন। কিন্তু পরে তাঁকে শাড়ি দেওয়া হয়।
ভিডিওটি সম্পর্কে রহমানের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
২১ মার্চ, ২০২৩, ঢাকা টাইমস-ও ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে রিপোর্ট লেখে।
৩১ মার্চ, ২০২৩-এ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সাতক্ষীরা ট্রিবিউন-এ মর্জিনা বেগম-এর প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই আমরা। তিনি বলেন, ঘটনাটি পুরনো। “উনি (হাবিবুর) মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। কাপড় বিলি করার সময় হাত বাড়ালে, উনি আমায় তিন বার মারেন। আমি মাটিতে বসে পড়ি। আমার শরীর খারাপ লাগছিল। পরে উনি আমায় শাড়ি দেন। আমি পরে আর কিছু বলতে পারিনি।”