'পিতৃতান্ত্রিক' বিয়েতে বেনারসি শাড়ি (Banarasi Saree) পড়ার প্রথাগত নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে লখনৌয়ের (Lucknow) এক পাত্রী বিকিনি (Bikini) পড়ে বিয়ে (Wedding) করেছেন দাবিতে সম্প্রতি এক ছবি ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ান ওই ছবিতে একজন মহিলাকে বিয়ের মণ্ডপে হাতে চুড়ি, মাথায় ওড়নার পাশাপাশি হলুদ রঙের বিকিনি পরে পাঞ্জাবি পরা এক ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ছবিটি পোস্ট করে অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই 'পাত্রীর' এহেন আচরণের সমালোচনা, কটাক্ষ করেছেন সমাজমাধ্যমে।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিটি কাল্পনিক; বাস্তব কোনও দৃশ্য তাতে দেখতে পাওয়া যায় না। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকারী সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমরা নিশ্চিত হই ছবিটি AI এর প্রয়োগে তৈরি করা হয়েছে।
ফেসবুকে এক ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট করে লেখেন, "বিয়ের season চলছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ভাইরাল হওয়ার দৌড়। এবারে পাত্রী লখনৌ এর,ছক ভেঙে লেহেঙ্গা চোলি'র পরিবর্তে বেনারসি বিকিনি পরে বিয়ের আসরে লখনৌ এর কনে, পাত্র অবশ্য অতটা সাহসী হয়ে পাঞ্জাবি আর অন্তর্বাস পরে বিয়ের আসরে আসেননি। কিছুদিন আগেই বাঁকুড়ার উষসী ইমিটেশন গয়না পরে বিয়ে করবার জন্যে রীতিমতো লাইম লাইটে ছিলেন। এবারে তাকে পেছনে ফেলে আসরে হাজির "বেনারসি বিকিনি পাত্রী"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
অন্য এক ফেসবুক পেজের তরফ থেকেও ছবিটি পোস্ট করে কটাক্ষ করে লেখা হয়, "আদম ইভ -এর যুগে ফিরে যাওয়া হোক"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে এই ছবির উৎস জানতে তাকে গুগলে রিভার্স সার্চ করে। আমরা দেখতে পাই, একই ধরণের আরও কিছু ছবির পাশাপাশি ভাইরাল ছবিটি ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে দেশি অ্যাডাল্ট ফিউশন নামের এক সাব-রেডিটে পোস্ট করেছিলেন একজন ব্যবহারকারী।
লক্ষ্য করা যায়, যে সাব-রেডিটে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছিল তাতে স্পষ্টতঃ উল্লেখ করা হয়েছে, সাব-রেডিটটির উদ্দেশ্য তাতে AI-এর প্রয়োগে তৈরি দেশীয় সংস্কৃতির ছবি দেখা। এছাড়াও আমরা দেখি, যে রেডিট ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট করেছিলেন তিনি ওই পোস্টে অন্য একজন ব্যবহারকারীর 'AI-এর সবথেকে ভালো ব্যবহার' মন্তব্যের উত্তরে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
নীচে উক্ত রেডিট পোস্ট ও কথোপকথনের স্ক্রিনশট দেখতে পাওয়া যাবে।
এরপর আমরা আরও নিশ্চিত হতে ভাইরাল ছবিকে ট্রুমিডিয়ার AI-শনাক্তকারী টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করি। ওই পরীক্ষার ফলাফলেও বলা হয়, ছবিটিতে কারচুপি হওয়ার তথা জেনারেটিভ AI-এর প্রয়োগে তৈরি হওয়ার পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে।
উক্ত ফলাফলে ৯৮ শতাংশ দৃঢতার সাথে ছবিটি স্টেবল ডিফিউশন, মিডজার্নি, ডাল ই ২ -এর মতো বাস্তবের অনুরূপ দৃশ্য প্রস্তুতকারী কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যারের প্রয়োগে তৈরি বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশ সম্ভাবনা ছবিটি মিডজার্নির প্রয়োগে তৈরি বলেও জানান হয়।
ফলাফলটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ট্রুমিডিয়া ছাড়াও আমরা ছবিটি অন্য এক AI শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেসনে পরীক্ষা করি। তাতেও ফলাফলে ছবিটি AI নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯০.২ শতাংশ বলা হয়। ফলাফলটি নীচে দেখা যাবে।