সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতের বেলায় তোলা একটি সিসিটিভি ফুটেজের (cctv footage) ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে হাতে রাইফেলের মতো কোনও নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে যা শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন ভিডিওটি মালদার (Malda) মিলকি(Milki) এলাকার এবং সেখানে এক সন্ত্রাসবাদী (terrorist) প্রকাশ্যে একে-৪৭ (AK-47) নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে।
মালদার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সম্ভব জৈন ভাইরাল দাবিটি খণ্ডন করে বুমকে নিশ্চিত করেন ভাইরাল দাবি ভুয়ো এবং ভিডিওর ব্যক্তি পেশায় একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান এবং তার হাতে তার সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি ছিল।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করেন, "এটি সিসিটিভি ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (একটি বাংলাদেশি মুসলিম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী) নামের এক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী পশ্চিমবাংলার মালদার #মিলকি অঞ্চলের কাছে একে-৪৭ নিয়ে এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় অন্তত ২ জন ব্যক্তি দাবি করেছেন যে "ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের" চাপে তারা এই ভিডিওটি মুছে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। অনেক মাননীয় ব্যক্তি দাবি করেছেন যে এনআইএ ইতিমধ্যেই "পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে"। এটি বাংলাদেশি ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে তৎপরতার আরও একটি প্রমাণ। স্থানীয় যেসব লোকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে তারা দাবি করেছেন যে স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ, রাজনীতিবিদ এবং অনেক পুলিশ কর্মকর্তা কেবল ইসলামপন্থীদের সন্ত্রাসবাদ এবং নৃশংসতার প্রতি চোখ বন্ধ করেই নেই বরং তাদের সন্ত্রাসী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে। ভারতের ভেতরে আরেকটি #পাকিস্তান রয়েছে এবং তথাকথিত ভারতীয় মুসলিমদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইসলামপন্থী। সরকার এবং সমাজ কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আমরা শীঘ্রই দ্বিতীয় #জম্মু ও কাশ্মীরের মতো পরিস্থিতি দেখতে পাব।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম মালদা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সম্ভব জৈনের সঙ্গে ভিডিওর সঙ্গে করা ভাইরাল দাবির বিষয়ে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানান, পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে ভিডিওর ব্যক্তি একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান এবং তার সঙ্গে ইলেকট্রিকের কিছু যন্ত্র ছিল, বন্দুক নয়।
জৈন বলেন, "দাবিটি ভুয়ো, পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে ভিডিওটি একজন স্থানীয় ইলেক্ট্রিশিয়ানের যিনি তার কাজের কিছু সরঞ্জাম যেমন ড্রিল মেশিন সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজটি ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ রাত এগারোটার দিকের যখন তার সঙ্গে কিছু যন্ত্রপাতি ছিল।"
আমরা ভিডিওর ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে জৈন বলেন ওই ব্যক্তি স্থানীয় একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান যিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের, কোনও বহিরাগত নয়।
এছাড়াও, মালদার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্থানীয় বাসিন্দা যারা পুলিশের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে পুলিশের কথোপকথনের দুটি ভিডিও পাঠান। ভিডিওয় অভিজিত ঘোষ এবং গোপাল পাঠক নামে দুই স্থানীয় বাসিন্দার বক্তব্য শোনা যায়।
অভিজিত বলেন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ভিডিওর ব্যক্তির হাতে বন্দুক ধরা রয়েছ অনুমান করে তারা পুলিশকে খবর দেয়। তবে, পরে দেখে আসলে ওই ব্যক্তির হাতে বন্দুক নয় ড্রিল মেশিন ও কিছু তার ছিল এবং তিনি সেখানকার স্থানীয় একজন বাসিন্দা।
অভিজিত আরও জানান, সিসিটিভি ফুটেজটি অস্পষ্ট হওয়ায় তিনি বন্দুক ও ড্রিল মেশিনের মধ্যে তফাৎ করতে সক্ষম হননি এবং ফুটেজটি পেছন থেকে নেওয়া বলে স্থানীয় ওই ইলেক্ট্রিশিয়ানকেও চিনতে পারেননি।
গোপাল পাঠককেও অভিজিতের বক্তব্য সমর্থন করতে দেখা যায়। তাদের বক্তব্য নীচে দেখা যাবে।