বাংলাদেশের কক্স বাজারে, উচ্ছেদ-হওয়া বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য তৈরি বাড়ির ছবি মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওই আবাসন প্রকল্পটি হল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় 'আমার বাড়ি' গৃহ প্রকল্পের অন্তর্গত।
একটি গ্রাফিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সহ একটি আবাসন প্রকল্পের ছবি রয়েছে। আর সেই সঙ্গে আছে তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে প্রশংসাসূচক একটি লেখা। গ্রাফিকটিতে বাংলায় লেখা হয়েছে, "সত্যি? এমনটাও বাস্তবে হয়? দিদির আমার বাড়ি প্রকল্পে ফ্ল্যাটের চাবি পেলেন গল্ফ গ্রিনের বস্তিবাসীরা; বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট বিষয়টা স্বপ্ন মনে হলেও বাস্তবে সত্যি করেছেন মমতা।"
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৩ সালে 'আমার বাড়ি' প্রকল্প শুরু করে। ওই প্রকল্পে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষদের বাড়ি তৈরি করার জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের অধীনে তৈরি বাড়িগুলিতে একটি ঘর, একটি রান্নাঘর, আর একটি বাথরুম থাকে। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়েবসাইট থেকে সরকারের বাকি আবাসন প্রকল্পগুলি সম্পর্কে জানা যাবে।
গ্রাফিকটি ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। সঙ্গে ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "দিদির সরকার গরিব মধ্যবিত্তের স্বপ্ন পূরণ করার সরকার - বিজেপির মতো কর্পোরেটদের দালাল নয়।"
তথ্য যাচাই
গ্রাফিকটি থেকে বুম আবাসনের ছবিটি কেটে নিয়ে সেটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। দেখা যায়, ২৩ জুলাই ২০২০ তে বাংলাদেশের খবরের ওয়েবসাইট 'বাংলা ট্রিবিউন'-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ওই একই ছবিই ব্যবহার করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের আবাসন বলে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে আর বাংলাদেশের কক্স বাজারের আবাসনের ছবি মিলিয়ে দেখানো হয়েছে নীচে।
ওই রিপোর্টটিতে বলা হয় যে, ওই আবাসনটি 'শেখ হাসিনা আশ্রয়ান প্রকল্প'-এর আওতায় পড়ে। এবং বাংলাদেশ সরকার সেটি গড়ে তুলেছে কক্স বাজার শহরে। ১৯৯১ তে কুতুবদিয়া ও মহেশখালিতে সমুদ্রের জল ঢুকে গেলে যাঁরা বাস্তুচ্যুত হন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য ওই প্রকল্প শুরু করা হয়। জীবিকা এবং ঘরবাড়ি খুইয়ে তাঁরা কক্স বাজারে এসে বস্তিতে থাকতে শুরু করেন। পরে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের জন্য সেখান থেকেও তাঁদের উৎখাত করা হয়।
আমরা একই ধরনের আরও সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেগুলিতেও বস্তিবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের তৈরি ওই আবাসনের বেশ কিছু ছবি ছিল। ২৩ জুলাই ২০২০ তে বাংলাদেশের ওয়েবসাইট 'যুগান্তর'-এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ওই প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলির চাবি ৬০০ বস্তিবাসীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বুম গুগল ম্যাপ থেকে আবাসনটির অবস্থান যাচাই করে নেয়। সেখানে ওই আবাসন কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকটি ছবি ছিল। আবাসনটির নাম ছিল 'খুরুশকুল শেল্টার প্রোজেক্ট'। ভাইরাল পোস্টের আবাসনের ছবির সঙ্গে ওই ছবিটি মিলে যায়।
তাছাড়া, কলকাতার গল্ফ গ্রিনে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য ফ্ল্যাট দেওয়াহয়েছে বলেকোনও খবর আমরা যাচাই করেতে পারিনি।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের গ্রাফিক ছড়াল পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দিন ঘোষণা বলে