সম্প্রতি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবসে ভাষণ দেওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেন ১৯৯৮ সালের মে মাসে পোখরান-২ হওয়ার সময় তিনি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ছিলেন। তিনি তার জন্য পাইপগুলির ব্যবস্থাও করেছিলেন বলে দাবি করেন। কিন্তু সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালের মার্চ মাস থেকে নীতীশ কুমার ১৯৯৯ সালের অগাস্ট মাস পর্যন্ত রেলমন্ত্রী ছিলেন।
ওই অনুষ্ঠানের ভিডিওর ২ ঘন্টা ৪৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ড অংশে তিনি বলেন, "অটল বিহারী বাজপেয়ীও করেছেন পোখরান; আমি জানি, আমি তখন রেলমন্ত্রী ছিলাম। পাইপগুলি কোথা থেকে গেছে আমাকেও জোগাড় করতে হয়েছে। ভিতরকার ব্যাপার বলবো কেন।" মমতা তার বক্তব্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণকেও গুরুত্ব দেন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে সরকারী নথি অনুসারে ১৯৯৮ সালের মে মাসে রেলমন্ত্রী ছিলেন নীতীশ কুমার, মমতা নন। বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও তৃণমূল নেত্রী ১৯৯৮ সালের ১৯ মার্চ থেকে ১৯৯৯ সালের ৫ অগাস্টের মধ্যে সংক্ষিপ্তভাবে রেলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ সামলান। ১৯৯৯ সালের অগাস্টে তিনি গাইসাল ট্রেন দুর্ঘটনার পরে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, "গাইসালে অত্যন্ত মর্মান্তিক এক রেল দুর্ঘটনায় ভারতবাসী খুবই আঘাত পায় এবং এটি ভারতীয় রেলের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। দুর্ঘটনার ফলে সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ান সহ ২৮৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। নৈতিক দায়িত্ব পালন করে আমাদের রেল পরিবারের প্রধান শ্রী নীতীশ কুমার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনিচ্ছাসহকারে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।"
অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারত পাকিস্তান সীমান্তের কাছে রাজস্থানের পোখরান রেঞ্জে ১৯৯৮ সালের ১১ থেকে ১৩ মে 'অপারেশন শক্তি' নামের পাঁচটি পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছিল। ওই পরীক্ষাগুলি ছিল ভারতের প্রথম সফল পরমাণু পরীক্ষা তথা পোখরান-১-এর পরের পদক্ষেপ যা ১৯৭৪ সালে করা হয়েছিল। প্রথম তিনটি বিস্ফোরণ একই সাথে ১১ মে তারিখে দুপুর ৩টে বেজে ৪৫ মিনিটে করা হয়। এর জন্য একটি ৪৫ কিলোটন থার্মোনিউক্লিয়ার যন্ত্র, ১৫ কিলোটনের এক ফিশন ডিভাইস ও ০.২ কিলোটনের সাব-কিলোটন (অর্থাৎ ১ কিলোটনের কম) এক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৩ মে অনুষ্ঠিত পরমাণু সেই পরীক্ষায় দুটি সাব-কিলোটন যন্ত্র জড়িত ছিল ও একই সাথে বিস্ফোরণ ঘটান হয়েছিল।
পিআইবির এক রিপোর্ট অনুসারে,"১৯৯৮ সালের মে মাসের পরীক্ষাগুলি তাদের বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য ও ২০০ কিলোটন পর্যন্ত ফিউশন সহ ফিশন এবং থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরি করার ক্ষমতার ক্ষেত্রে সফল হয়েছিল।"
পোখরান-২ এর সাফল্যের সাথে যুক্ত ছিলেন ড. আর. চিদাম্বরম যিনি পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তার সাথে ছিলেন পরমাণু শক্তি বিভাগের সচিব ও ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. অনিল কাকোদকর। তাদের সাথে যুক্ত ছিলেন ড. এপিজে আব্দুল কালামও। কালাম তখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রধান ছিলেন।
১৯৯৯ সালের ৬ অগাস্ট রাম নায়েককে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার মেয়াদ ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর শেষ হয়।
মমতা বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকারের সমর্থন করেন এবং শুধুমাত্র ১৯৯৯ সালের ১৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী হন। ২০০১ সালের ১৫ মার্চ অবধি তিনি রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সামগ্রিকভাবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুইবার রেলমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারী রেকর্ড অনুসারে তার দ্বিতীয় মেয়াদ ছিল ২০০৯ ও ২০১১ এর মধ্যে।