একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে (seemingly) সংজ্ঞাহীন (unconscious) এক মহিলাকে মৌলবি-বেশী (maulavi) এক ব্যক্তি একটি ঘরের ভিতর টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ভাইরাল ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে মহিলাকে ভূত-তাড়াবার (exorcism) ছল করে নিগ্রহ (assault) করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি ভুয়ো। ভিডিওটির একটি দীর্ঘতর (longer) সংস্করণে (version) আমরা দেখতে পাই ভাইরাল অংশটুকুও আছে এবং স্পষ্ট বলা আছে যে এটি কোনও বাস্তব (real) ঘটনার চিত্ররূপ নয়, বরং সম্পূর্ণ কাল্পনিক (imaginary) এবং সাজানো (scripted) একটি চিত্রনাট্য। উপরন্তু, মৌলবির ভূমিকায় অভিনয় করা ব্যক্তিকেও আমরা বিভিন্ন সাজানো ভিডিও-এ অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখেছি।
সারা বছর ধরেই বুম এই ধরনের অনেক সাজানো, অভিনীত ভিডিওর তথ্য যাচাই করেছে । এই ধরনের অনেক ভিডিওতে যৌন নিগ্রহ বা অপহরণের মতো অপরাধের দৃশ্য সাম্প্রদায়িক, ইসলাম-বিদ্বেষী ক্যাপশন নিয়ে ভাইরাল হয়ছে। এই ধরনের সাজানো, ভাইরাল ভিডিওর উপর তথ্য যাচাই পড়ুন এখানে এবং সাম্প্রদায়িক দাবি সহ ভাইরাল হওয়া ভিডিওর তথ্য যাচাই পড়ুন এখানে।
ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে মৌলবি-বেশে এক প্রৌঢ়কে এক মহিলাকে টেনে একটি ঘরের ভিতর নিয়ে যেতে দেখা গেছে যখন তাঁকে বাধা দিয়ে ভিডিও ক্যামেরাধারী কিছু বলছেন। এরপর তিনি ওই মৌলবির কাছে জানতে চান সংজ্ঞাহীন মহিলাকে তিনি কী খাইয়েছেন এবং তাঁকে নিয়ে তাঁর কি উদ্দেশ্য? ভাইরাল হওয়া একই ঘটনার অন্য একটি হ্রস্বতর ফুটেজে কেবল মৌলবিকে জিজ্ঞাসাবাদের অংশটাই দেখা যাচ্ছে।
দক্ষিণপন্থী বিভিন্ন হ্যান্ডেল এই ভিডিওটিকে সম্পাদনা করে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে বিজেপির মুখপাত্র প্রশান্ত প্যাটেল, দক্ষিণপন্থী সংবাদ-চ্যানেল 'হিন্দি খবর'-এর সংবাদদাতা আঁচল যাদব এবং আর এক দক্ষিণপন্থী অরুণ পুদুর।
এদের করা টুইটগুলির আর্কাইভ যথাক্রমে এখানে, এখানে এবং এখানে দেখুন।
টুইটার ছাড়াও, ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকেই এই ফুটেজটি শেয়ার করেছে একই রকম ক্যাপশন সহ।
আরও পড়ুন: ক্ষীর ভবানী মন্দিরে পুজো মেহবুবা মুফতির? পুরনো ছবি ছড়াল বিভ্রান্তি
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিও ফুটেজের দীর্ঘতর সংস্করণ পায় ফেসবুক, টুইটার এবং গুগল-এ কীওয়ার্ড সার্চ করে। বুমের ব্যবহার করা কিছু কিওয়ার্ড— 'নেশাগ্রস্ত মৌলবি' বা 'মৌলবি ঝাড়ফুঁক' ইত্যাদি।
সার্চ করে আমরা দেখি ঘটনার ১১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে দীর্ঘ একটি ফুটেজ ফেসবুকে আপলোড করা হয়ছে। ওই ভিডিওটি পুরো দেখার পর আমরা একেবারে শেষ দিকে লক্ষ্য করি সতর্কতা বার্তা লেখা আছে — "এই ভিডিওতে যা-কিছু দেখানো হয়েছে, তার সবটাই কাল্পনিক। কারণ বাস্তব সত্যটা এর থেকে অনেক বেশি তিক্ত এখানে দেখানো বা বলার জন্য। এখানে দেখানো কাল্পনিক ঘটনার সাথে আমাদের মত দেশে যা বাস্তবে হয়ে থাকে তাঁর সাথে কোনও মিল নেই।"
এ থেকে স্পষ্ট এই ভিডিও ফুটেজের কাহিনী বাস্তব নয়, সাজানো চিত্রনাট্য। খুঁজতে-খুঁজতে আমরা এ রকম আরও একটি সাজানো চিত্রনাট্যের ভিডিও পাই যেখানে একটি ছেলে তার প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় উন্মাদের মতো হয়ে গেছে এবং এক বৃদ্ধ তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। আমরা দেখি, এই ভিডিওতে সান্ত্বনাদাতা বৃদ্ধটি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ভাইরাল ভিডিওতে মৌলবির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
'এবিসি প্র্যাংক' নামে একটি অ্যাকাউন্ট এই ভিডিওটি বানিয়েছে তাদের একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। চ্যানেলটি চালায় চন্দন কুমার রাওয়াল নামে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে চন্দন চৌধুরী নামেও পরিচয় দেয়।
আমরা এই চ্যানেলের আরও ভিডিও দেখি, যেখানে এই একই ব্যক্তিকে অন্য এক বৃদ্ধের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়, যিনি সন্তানসহ, বিবাহিত এক স্বামী-পরিত্যক্ত তরুণীকে 'রক্ষা করার' মানসে তাকে বিবাহ করেন।
আমরা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ওই বৃদ্ধ অভিনেতার ক্লোজ-আপ শট-এর স্ক্রিনশট পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে সব কটি বৃদ্ধই একই ব্যক্তি, যদিও তাঁরা আলাদা আলাদা ভূমিকায়, বিভিন্ন গল্পে অভিনয় করছেন।
বুম চন্দন রাওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করছে আলোচ্য ভিডিওর মৌলবির ছবি তারই তোলা কিনা এবং অভিনেতা বৃদ্ধের আসল পরিচয় জানার। রাওয়ালের উত্তর পেলেই এই প্রতিবেদনটি সেই অনুসারে হালনাগাদ করা হবে।
অতিরিক্ত রিপোর্টিং: সুজিত এ
আরও পড়ুন: "ফ্রিডম মার্চের" ভিডিও বিভ্রান্তি সহ ছড়াল "ভারত জোড়ো যাত্রা" বলে