একটি ভাইরাল ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে, সম্প্রতি ইন্দোরে (Indore), পুলিশ আর একজন আইনজীবী মিলে কমেডিয়ান বা কৌতুকশিল্পী মুনাওয়ার ফারুকিকে (Munawar Faruqui) মারধোর করে। কিন্তু ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর।
বুম জানতে পারে যে, ভিডিওটিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন ফারুকির এক বন্ধু। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে, ২ জানুয়ারি ২০২১-এ ফারুকিকে ইন্দোরে গ্রেপ্তার করা হলে, তাঁর বন্ধু তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান।
একজন বিজেপি এমএলএ-র ছেলে, ফারুকি ও আরও চারজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে নালিশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, ইন্দোর শহরে একটি অনুষ্ঠানে ফারুকি ও আরও চারজন হিন্দু দেবদেবী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেন। খবরে প্রকাশ যে, ২ জানুয়ারি, ফারুকি সহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
ফারুকি সহ এডউইন অ্যান্টনি, প্রখার বৈশ্য, প্রীতম বৈশ্য ও নলিন যাদবকে ভারতীয় দণ্ডবীধির ২৯৫এ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্য), ২৯৪ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কথা বলা), ২৬৯ (প্রাণহানিকর সংক্রমণ আটকানোর ব্যবস্থা না নেওয়া), ১৮৮ (সরকারি কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করা) ও ৩৪ (একটি যৌথ উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য একাধিক ব্যক্তির দ্বারা সংঘঠিত অপরাধ) ধারায় গ্রেফতার করা হয়।
ওই অস্বস্তিকর ভিডিওতে, সাদা জামা-পরা এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেলে বসে-থাকা সদাকত খানকে মারতে দেখা যাচ্ছে। আর তাঁর সামনে ও পেছনে দাঁড়িয়ে পুলিশ সেই ঘটনা দেখছে। খানকে গালিগালাজ করতেও শোনা যায় এক পুলিশকে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি খুঁটিয়ে দেখে। দেখা যায়, মোটরসাইকেলে বসে থাকা ব্যক্তিটির সঙ্গে মুনাওয়ার ফারুকির কোনও মিল নেই। আমরা ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে ফারুকির ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখি। কিন্তু কোনও মিল খুঁজে পাই না আমরা।
'মুনাওয়ার ফারুকি বিটেন' (মুনাওয়ার ফারুকিকে মারা হয়েছে) – এই কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে বেশ কয়েকটি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সার্চ করলে, আমরা হুসেন হায়দ্রি নামের এক ব্যক্তির একটি টুইট দেখতে পাই। ২ জানুয়ারি ২০২১-এ করা ওই টুইটে উনি ওই ভিডিওটি থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেন।
হায়দ্রির টুইটে বলা হয়, "মনে হচ্ছে মুনাওয়ার ফারুকির সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া এক ব্যক্তিকে পুলিশের ধরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও। পুলিশের সামনেই তাঁকে গালিগালাজ ও মারধোর করা হচ্ছে।"
উনি পরে টুইটটি আপডেট করেন। তাতে উনি বলেন, "আপডেট: যে ব্যক্তিকে চড়-থাপ্পড় মারা হচ্ছে, তাঁর নাম সদাকত খান। উনি মুনাওয়ারের বন্ধু। বম্বের একটি নির্মাণ কম্পানিতে সুপারভাইজারের কাজ করেন। ওনার মায়ের বাড়ি মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে। সেখানে উনি মুনাওয়ারের সঙ্গে কোর্টে দেখা করতে গিয়ে ছিলেন। এবং উনিও গ্রেফতার হন।"
এর পর আমরা 'মুনাওয়ার ফারুকি ফ্রেন্ড বিটেন' (মুনাওয়ার ফারুকির বন্ধুকে মার) – এই কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে সার্চ করি। তার ফলে, ওই ঘটনা সম্পর্কে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই আমরা।
ভিডিওটিতে যে ঘটনাটি দেখা যাচ্ছে, সেটি সম্পর্কে 'টাইমস অফ ইন্ডিয়া' লেখে যে, কোনও অভিযুক্তকে মারার কথা পুলিশ অস্বীকার করে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ বলে যে, ভাইরাল ভিডিওটিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন 'অভিযুক্তের বন্ধু'।
২ জানুয়ারি, 'এনডিটিভি খবর'-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, মুনাওয়ারের বন্ধু সদাকত জেলা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এবং তাঁকেই কৌতুকশিল্পী মনে করে একটি লোক তাঁকে মারধোর করে।
৪ জানুয়ারি, 'রিপাবলিক ভারত-এ' প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয় যে, জেলা আদালতের বাইরে, একজন আইনজীবী ফারুকির এক বন্ধুকে মারে।