এক জমায়েতের মাঝে কিছু ব্যক্তির আগ্নেয়াস্ত্র (Firearms) নিয়ে উপস্থিত থাকার এক ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হয় তাতে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বেলডাঙায় (Beldanga) সাম্প্রতিক দাঙ্গার (Communal Violence) এক উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত দেখতে পাওয়া যায়।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটির পুরনো এবং তার সাথে মুর্শিদাবাদে হওয়া সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কোনও সম্পর্ক নেই।
গত ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত এই সময়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কার্তিক পুজোকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বেলডাঙা ও সংলগ্ন এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফ থেকেও এক বিবৃতি জারি করে বলা হয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে গ্রেফতার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সেই বিবৃতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি গুজব না ছড়ানোর অনুরোধও করা হয়।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়, "মুর্শিদাবাদ বেলডাঙা ঘটনা, হিন্দু মুসলিমের মারামারি"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
তথ্য যাচাই
ভাইরাল এই ভিডিওর বিষয়ে জানতে বুম প্রথমে তার কিছু কি-ফ্রেমকে রিভার্স সার্চ করে। ওই সার্চের মাধ্যমে আমরা ২০২২ সালের সমাজমাধ্যমে হওয়া কিছু পোস্ট খুঁজে পাই যেখানে এই একই ভিডিওর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকে ওই ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন তাতে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে সেসময় হওয়া হিংসার ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়।
এই একই ভিডিও ১০ জুন ২০২২ তারিখে একজন এক্স ব্যবহারকারী পোস্ট করে হিন্দিতে লেখেন, "এরা কানপুরের জিহাদি যারা আধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল আর পুলিশ শুধু কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছিল, এদের নিরাময় হল সরাসরি একবার গুলি চালনা, যদি দশ-বিশ জন মারা যায় তাহলেও এই লোকগুলো তাড়াতাড়ি হাল ছাড়বে না।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
কানপুর হিংসার প্রেক্ষাপট: কী ঘটেছিল?
২০২২ সালের ১১ জুন প্রকাশিত সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নবী মোহাম্মদকে নিয়ে পূর্বতন বিজেপি প্রবক্তা নূপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে উত্তরপ্রদেশের নানা অংশে হিংসার ঘটনা ঘটে। গোটা ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সেরাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ২২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে।
বিভিন্ন ইসলামিক রাষ্ট্রের তরফে নবীর বিরুদ্ধে করা নূপুর শর্মার মন্তব্যের প্রতিবাদ করা হলে তাকে দল থেকে বরখাস্ত হয় বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইন্ডিয়া টুডের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩ জুন, ২০২২ তারিখের কানপুর হিংসা মামলায় হাজি ওয়াসি নামক এক অন্যতম অভিযুক্তকে সেবছরের ৪ জুলাই গ্রেফতার করে পুলিশ। হিংসার সেই ঘটনায় অর্থসাহায্যের জন্য নির্মাতা হাজি ওয়াসি অভিযুক্তদের একজন বলে উল্লেখ করা হয় ওই রিপোর্টে।
এছাড়াও বলা হয়, কানপুর হিংসা মামলায় তার নাম প্রকাশের পর থেকেই পলাতক ছিলেন অভিযুক্ত ওয়াসি। এমতাবস্থায় পুলিশ ওয়াসির ছেলে আব্দুল রেহমানকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করার পর তাকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়।
ভাইরাল ভিডিওর সাথে করা দাবি নিয়ে ২০২২ সালে বুমের তথ্য যাচাই
আমরা সেসময় দেখতে পাই ভিডিওতে থাকা দৃশ্যের বিষয়ে ২০২১ সালের মে মাসে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ভাস্করের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের বরেইলিতে ভোজিপুরার টান্ডা গ্রামের বাসিন্দা সলিম কুরেশি ও জলীস বাঞ্জারার মধ্যে বচসা বাধে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সলিম কুরেশি জলীস বাঞ্জারার একটি দোকান ভাড়া নেয়। এরপর জলীস বাঞ্জারা কুরেশির বিরুদ্ধে গোমাংস বিক্রি করার অভিযোগ তুললে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন কুরেশি। পরে তা বচসায় পরিণত হয় এবং তাতে বন্দুক প্রদর্শন করার পাশাপাশি গুলিও চলে।
অন্যদিকে, তৎকালীন পুলিশ সুপার (গ্রামীন) রাজকুমার ভাস্করকে জানান, একই সম্প্রদায়ের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মাংসের দাম নিয়ে বচসাটি বাধে। ভোজিপুরা থানায় তা নিয়ে মামলাও দায়ের করা হয় বলে জানা যায়।