দিল্লির এক পৃথক ঘটনায় একদল উত্তেজিত জনতার কিছু যুবককে বেধড়ক মারধর করা ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে ক্যাপশন সহ ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে ওই যুবকরা উত্তরপ্রদেশের লোনিতে (Loni) এক বয়স্ক মুসলিম ব্যক্তিকে মারধর ও পরে তাঁর দাড়ি কেটে নেওয়ায় অভিযুক্ত।
বুম দেখে, ভিডিওটি দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরা এলাকায় তোলা। সেখানে তোলাবাজির অভিযোগে স্থানীয় মানুষরা ওই যুবকদের আক্রমণ করেন। ভিডিওটির সঙ্গে ৫ জুন উত্তরপ্রদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। সেখানে আবদুল সামাদ সৈফি নামের সত্তর বছরেরও বেশি বয়সের এক মুসলমান ব্যক্তিকে কিছু লোক মারধোর করে ও তাঁর দাড়ি কেটে দেয়। ওই ঘটনার ওপর একটি নির্বাক ভিডিও ফেসবুক ও টুইটারে ব্যাপক ভাবে শেয়ার করে দবি করা হয় যে, সেটি একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা।
বুম গাজিয়াবাদের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরা নিশ্চিত করে বলেন যে, ঘটনাটি ওই জেলার হাজিপুর ভেটায় ঘটে। তার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পুলিশ ছ'জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। তাঁরা হলেন, পারভেস গুজ্জর, কাল্লু গুজ্জর, হিমাংশু, আদিল, আরিফ ও মুশাহিদ। তাঁরা সকলেই ওই এলাকার বাসিন্দা। তদন্ত শুরু হওয়ার পর তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে – পারভেস গুজ্জর, কাল্লু গুজ্জর ও আদিল। বাকিরা এখনও অধরা রয়ে গেছে। ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্কের কথা পুলিশ অস্বীকার করে। কিন্তু আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বারবারই ওই দাবি করেছেন।
এই পটভূমিতে, ভা্ইরাল ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে যে, লোনির ঘটনায় পলাতক তিন অভিযুক্তকে ধরে স্থানীয় মানুষজন নির্মম ভাবে মেরেছেন।
ভাইরাল ক্লিপের হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "দাড়ি কাটার অভিযোগে তিন অভিযুক্তকে জনতা পিটিয়েছে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: दाडी काटने वाले 3 आरोपी को पकड कर जनता तबीयत से मारा)
ভিডিওটিতে হিংসার দৃশ্য আছে। তাই সেটিকে আমরা এই প্রতিবেদনে দেখাচ্ছি না।
ফেসবুক পোস্টটি দেখতে পাবেন এখানে। বিবেচনা করে তবেই দেখুন।
একই মিথ্যে ক্যাপশন সহ ভিডিওটি একাধিক ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি খুঁটিয়ে দেখে। তার ফলে, একটি মোটরবাইকের নম্বর নজরে আসে। তাতে দিল্লির (ডিএল) রেজিস্ট্রেশন দেখা যায়।
সেটিকে সূত্র ধরে আমরা হিন্দি শব্দ 'भीड़ ने दिल्ली में चोर को पकड़कर मारा' কি-ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে সার্চ করি।
বাংলায় ওই হিন্দি কি-ওয়ার্ডগুলির মানে দাঁড়ায় 'দিল্লির জনতা চোর ধরে পেটায়'।
১৩ জুনে করা একটি ফেসবুক পোস্ট আমরা দেখতে পাই। সেটির হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয, "দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরায় শোরগোল শোনা যায় – ধর ধর, মার মার, এসে গেছে চোর। সবজি বিক্রেতাদের কাছে থেকে জোর করে টাকা তুলতে আসা ৩ রঙবাজকে ধরার পর লাঠি-ডাণ্ডা দিয়ে জমিয়ে মার।"
(হিন্দি ক্যাপশন: दिल्ली जहांगीरपुरी में मच गया शोर, पकड़ो-पकड़ो मारो-मारो आ गए चोर. सब्जी बेचने वाले से रंगदारी वसूलने आए 3 लोगों को भीड़ ने पकड़ा, लाठी-डंडों से जमकर की पिटाई)
এরপর আমরা কি-ওয়ার্ড হিসেবে হিন্দি শব্দ 'भीड़ ने दिल्ली जहांगीरपुरी में चोर को पकड़कर मारा' ব্যবহার করে ইউটিউবেও সার্চ করি। তার ফলে, ১৩ জুন, ওই ঘটনার ওপর 'নিউ নেশন'-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই।
নিউ নেশন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিওটিতে যে ব্যক্তিকে মার খেতে দেখা যাচ্ছে, তিনি সবজি বিক্রেতাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা তুলছিলেন।
বুম এরপর জাহাঙ্গিরপুরার সহকারী পুলিশ কমিশনারের অফিসে ফোন করে। তিনি ভাইরাল দাবিটি উড়িয়ে দেন।
তিনি বুমকে বলেন গাজিয়াবাদের ঘটনার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
"দু'তরফের লোকেরা একে অপরকে চেনে। এটা মোটেই কোনও সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। এতে কিছু টাকাপয়সার বিষয় জড়িয়ে আছে। অভিযুক্তরা টাকা তুলতে এলে, তাদের মারা হয়। দু পক্ষের লোকজনকেই ধরা হয়েছে," অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার বুমকে বলেন। উনি আরও বলেন, লোনিতে আবদুল সামাদ সৈফিকে ঘিরে যে ঘটনা ঘটে, তার সঙ্গে এই ঘটনাটির কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনার বিদায়ের দৃশ্য দাবি করে ভাইরাল চলচ্চিত্রের অংশ