একটি ভিডিওতে, ভারতের স্কুলগুলিতে হিন্দু ধর্মকে একটি বিষয় হিসেবে পড়ানো চালু করা নিয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে ব্রিটেনে হিন্দু ধর্ম (Hindu) বিষয়ক এক প্রফেসরকে। কিন্তু ভিডিওটি এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, উনি হলেন একজন মুসলমান (Muslim) ও ব্রিটেনের (Britain) মন্ত্রিসভার সদস্য।
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৭ সালের । ইউটিউব চ্যানেল 'হিন্দু অ্যাকাডেমি' ২০১৭ সালে ভিডিওটি আপলোড করে। ভিডিওটিতে যাঁকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ও হিন্দু স্টাডিজের প্রফেসর জয় লাখানি। উনি ওই চ্যানেলটির প্রতিষ্ঠাতাও।
ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "উনি ইউকে'র একজন মুসলমান মন্ত্রী। দেখুন উনি কি বলছেন। খুব আশ্চর্যজনক কথা। এক মিনিট সময় করে দেখুন।"
ভিডিওটির ০২.৩৫ সেকেন্ডের মাথায়, লাখানিকে জওহরলাল নেহরুর শিক্ষানীতির সমালোচনা করতে শোনা যায়। ভারতের স্কুল পাঠ্যক্রম থেকে হিন্দু ধর্মকে একটি বিষয় হিসেবে বাদ দিয়ে দেওয়ার জন্য উনি নেহরুকে দায়ী করেন। "ভারতে, কোনও এক বিচিত্র কারণে, তারা হিন্দু ধর্মকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে দেয়। ভারতের একটিও স্কুলে হিন্দু ধর্ম পড়ানো হয় না। এবং সেটা কীভাবে হল? ক্যামেরার সামনে আমি সোজাসাপ্টা কথা বলব। নেহরুর দৌলতে এমনটা হয়। ওই বোকা লোকটি ভাবলো পাঠ্যক্রম থেকে হিন্দু ধর্ম তুলে দেওয়া উচিৎ। কারণ ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। ভারত, যে দেশটি নাকি ধর্মনিরপেক্ষ, সেখানে হিন্দু ধর্মকে সিলেবাস থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হল।"
তিনি আরও বলেন, হিন্দু ধর্মকে সিলেবাসে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনেও (৭৭০০৯০৬৫৮৮) আসে।
একই ক্যাপশন সমেত ভিডিওটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নির খ্রিস্টধর্ম দীক্ষার দৃশ্য নয়
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভিডিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি মুসলমানও নন, ব্রিটেনের মন্ত্রীও নন। ইউকেবাসী প্রয়াত লাখানি ছিলেন একজন তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী ও বক্তা।
ইউকেবাসী ওই গুজরাটি, হিন্দু অ্যাকাডেমি নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালাতেন। হিন্দু ধর্ম সংক্রান্ত তাঁর বেশ কয়েকটি বই আছে। ৪ ডিসেম্বর ২০২০ তাঁর মৃত্যুর আগে, লাখানি ছিলেন ইটন কলেজের প্রথম হিন্দু বিষয়ের টিউটর। গিসিএসই ও এ-লেভেল-এ তাঁর হিন্দু ধর্মের ওপর ক্লাসগুলির জন্য খ্যাতি অর্জন করে ছিলেন।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত তাঁর অবিচুয়ারিতে প্রকাশিত ছবির সঙ্গে ভিডিওটিতে লাখানির মুখ মিলিয়ে দেখা হয়। তাছাড়া তাঁর অন্য ভিডিওগুলি, যেখানে উনি নিজের পরিচয় দিতেন, সেগুলিও দেখে বুম।
ইউটিউবে কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে দেখা যায় যে, ভাইরাল ভিডিওটি উনি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের চ্যানেলে আপলোড করেছিলেন।
লাখানি ব্রিটেনের একজন মন্ত্রী ছিলেন, সেই মর্মে কোনও তথ্য বুম দেখতে পায়নি।
ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি ২০১৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের একজন মুসলমান মন্ত্রী ছিলেন।
আরও পড়ুন: জয়পুরের ঘটনা বলে মিথ্যে দাবিতে ছড়াল জম্মু-কাশ্মীরের পাথর ছোঁড়ার ভিডিও