পথ সচেনতার উদ্দেশ্যে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) উর্দুতে লেখা ২০১৯ সালের প্রচার ফ্লেক্স বোর্ডের (flexboard) ছবি ফের বিভ্রান্তিকর দাবিতে জিইয়ে উঠল। নেটিজেনদের একাংশ ছবিটি পোস্ট করে দাবি করেন সাইন বোর্ডে ইংরেজির পাশে সমান মর্যাদা পাচ্ছে উর্দু ভাষা কিন্তু বাংলা ভাষাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অভিযোগ করা হচ্ছে বাংলা ভাষা পশ্চিমবঙ্গে গুরুত্ব হারাচ্ছে। ল্যম্প পোস্টে টাঙানো ফ্লেক্স বোর্ডের ভাইরাল ছবিটিতে কলকাতা পুলিশের তরফে ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় বাইক আরোহীদের হেলমেট পরতে এবং পিছনের সিটে এক জনের বেশি কাউকে না চাপানোর জন্য সচেতন করা হচ্ছে। মূল ইংরেজিতে লেখা, "No Helmet No Cycle, One Moto Cyclist, One Pillion Rider" এবং তার নিচেই রয়েছে উর্দুতে লেখাটি।
ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "পুলিশের নোটিশ বোর্ড. হঠাৎ করে দেখলে বোঝা যায় না কোথাকার? হ্যাঁ এটা কলকাতা পুলিশের। বোর্ডে ইংরেজির পাশে সমান মর্যাদা পাচ্ছে উর্দু ভাষা। বাংলায় লেখা কোনও লাইন নজরে আসছে না। কোন দিকে এগোচ্ছে বাংলা !!! ভাবুন, ভাবা অভ্যাস করুন।"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
বুম দেখে ছবিটি ওই একই দাবি সহ ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে ভাইরাল হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মহিলা মোর্চার সভাপতি অগ্নিমিত্রা পালও ছবিটি একই দাবি সহ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
আরও পড়ুন: ইরাকের সম্পাদিত ছবি ছড়াল আফগান নারীদের পায়ে তালিবানের শিকল বেড়ি বলে
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে দেখে ছবিটি ২০১৮ সালের। পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ছাড়াও আরও অন্যান্য সরকারি ভাষা স্বীকৃত।
কলকাতা পুলিশ রাজনৈতিক সংগঠনের এক কর্মীকে সেসময় প্রত্যুত্তরে জানায়, "প্রশ্নই ওঠে না বাংলাকে উপেক্ষার। বাংলা ভাষাই ব্যবহার করি আমরা সচেতনতামূলক প্রচারে। কখনও কখনও অন্য ভাষাও ব্যবহার করা হয় বাংলার সঙ্গেই।"
বাংলা পক্ষ সংগঠনের প্রচিষ্ঠাতা ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায় ৯ জুন ২০১৮ তাঁর টুইটে কলকাতা পুলিশকে ট্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে থেকে বাংলা মুছে যাওয়ার অভিযোগ তেলেন। তিনি লেখেন, "@KolkataPolice কি সাইনবোর্ড থেকে বাংলা মুছে ফেলার অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত নিয়েছে? দিল্লি, হরিয়ানা, ইউপি, এমপি, বিহার, ছত্তিশগড়ের মতো হিন্দুস্তান অঞ্চলের যে কোন রাজ্যের পুলিশ বিভাগে বাংলা স্বাক্ষর পান যেখানে লক্ষ লক্ষ বাঙালি বাস করে?""
গর্গ চট্টোপাধ্যায়কে ১০ জুন ২০১৮ কলকাতা পুলিশ টুইট করে প্রত্যুত্তরে জানায়, "বাংলা ভাষা শুধু বাংলার নয়, দেশেরও গর্ব। প্রশ্নই ওঠে না বাংলাকে উপেক্ষার। বাংলা ভাষাই ব্যবহার করি আমরা সচেতনতামূলক প্রচারে। আমরা অন্য ভাষাও ব্যবহার করি বাংলার প্রাচীন বিবিধ ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য এবং রাজ্যবাসীর কথা মাথায় রেখে। #বাংলাআমারগর্ব"।"
কলকাতা পুলিশে ২০১৮ সালের জুন মাসের আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারীকে একই উত্তর দেন।
বুমের পক্ষে স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি ছবিটি কোথায় ও কবে তোলা হয়েছে। তবে বুম নিশ্চিত হয়েছে ছবিটি পুরনো।
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ভাষা
২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৬১ সালের সরকারি ভাষা আইন সংশোধন করে। এই আইন অনুযায়ী বাংলা ভাষার পাশাপাশি ১০ শতাংশের বেশি উর্দু, হিন্দি, ওড়িয়া, সাঁওতালি, পাঞ্জাবি ভাষাভাষী প্রধান জেলা মহাকুমা, ব্লক ও পৌর এলাকায় সংশ্লিষ্ট ভাষাকে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের গেজেট বিজ্ঞপ্তি দেখা যাবে এখানে। ২০১৮ সালের এই আইন আবার সংশোধন করে কামতাপুরি, রাজবংশী, কুরুমালি প্রভৃতি ভাষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিল পেশ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ২৮ অক্টোবর ২০১৮ এই বিল বিধানসভায় পাশ করে রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা আইন ২০১৮-এর পূর্ণাঙ্গ আইন দেখা যাবে এখানে।
১৯৬১ সালের রাজ্য সরকারের সরকারি ভাষা আইন অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াং এই তিন মহাকুমায় বাংলা ও নেপালি সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তেলেগু প্রধান অঞ্চল খড়গপুরে সংশ্লিষ্ট ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
আরও পড়ুন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ছড়াল আনন্দবাজারের সম্পর্কহীন লেখার শিরোনাম