একটি ভাইরাল পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, নতুন সংসদ ভবন (Parliament Building) তৈরি করার জন্য টাটা গোষ্ঠী (TATA Group) কেবল ১ টাকা নিয়েছে।
এছাড়াও দাবি করা হয়েছে যে, ভবনটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে মাত্র ১৭ মাস। কিন্তু এই দাবিটিও মিথ্যে। ভবনটি নির্মাণ করতে ১৭ মাসের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে।
বার্তাটি বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনেও (৭৭০০৯০৬৭৮৮) আসে।
এটি সোশাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবনটি পরিদর্শন করতে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই পোস্টটি করা হয়।
তথ্য যাচাই
সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশিত তথ্য থেকে বুম জেনেছে যে, নতুন সংসদ ভবনটি মোটেই বিনা পয়সায় বা এক টাকার বিনিময়ে নির্মিত হয়নি।
সরকারিভাবে টাটা গোষ্ঠীর কম্পানি টাটা প্রজেক্টস লিমিটেড ওই ভবন নির্মাণের বরাত পায়। তারা কাজটির জন্য ৮৬১.৯১ টাকার দর পত্র জমা দেয়। খবর থেকে জানা যায়, নির্মাণ শিল্পের আরও একটি বড় কম্পানি লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো-কে (এল & টি) হারিয়ে, কাজের বরাত জিতে নেয় টাটা প্রজেক্টস।
দরপত্রে উল্লেখ করা অঙ্ক ও সেই সংক্রান্ত তথ্য, সেপ্টেম্বর ২০২০-তে সরকার লোকসভায় পেশ করে। তার অংশবিশেষে বলা হয়:
(সি) সেন্ট্রাল ভিস্তার উন্নয়ন ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত উপদেষ্টার কাজের ভার দেওয়া হয় এইচসিপি ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড-কে। কেন্দ্রীয় পূর্ত বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, মান ও খরচের ভিত্তিতে টেন্ডার বিচার করার পদ্ধতি মেনে ওই কাজ দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ের ভিত্তিতে, নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়। দর পত্র দাখিলকারীদের মধ্যে এম/এস টাটা প্রজেক্টস লিমিটেড ৮৬১.৯১ টাকা চেয়ে সব চেয়ে কম দর দিয়েছে বলে বিবেচিত হয়।
ডিসেম্বর, ২০২১-এ দেওয়া আরও একটি জবাবে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো হয়। সেটি এখানে দেখুন।
প্রকল্পের নাম | আনুমানিক খরচ (কোটি) | এখনও পর্যন্ত খরচ (কোটি) | শেষ হওয়ার আনুমানিক সময় |
নতুন সংসদ ভবন | ৯৭১ | ৩৪০.৫৮ | অক্টোবর, ২০২২ |
সেন্ট্রাল ভিস্টা অ্যাভেন্যু পুনর্গঠন | ৬০৮ | ১৯০.৭৬ | ডিসেম্বর, ২০২১ |
কমন সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংস – ১,২,৩ | ৩,৬৯০ | ৭.৮৫ | নভেম্বর, ২০২৩ |
উপরাষ্ট্রপতির বাসভবন | ২০৮.৪৮ | ১৫ | নভেম্বর, ২০২৩ |
তাছাড়া, সূত্র ভিত্তিক এক লেখায় এনডিটিভি জানায়, প্রকল্পটির খরচ ৮৬১.৯১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১,২৫০ কোটি টাকা। টাটা প্রজেক্টস লিমিটেড ৪০% কাজ সম্পূর্ণ করার পর খরচের এই বর্ধিত হারের কথা জানা যায়।
জানুয়ারি, ২০২২ তে প্রকাশিত এনডিটিভির রিপোর্টে বলা হয় “সূত্রের কাছ থেকে জানা যায় যে, সরকারের বৃহত্তর সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পের মধ্যমণি, নতুন সংসদ ভবন তৈরির খরচ আরও ২৮২ কোটি টাকা বেড়ে যাবে।ডিসেম্বর ২০২০তে অনুষ্ঠিত ভূমিপূজার এক বছর পর, বাজেটে প্রস্তাবিত ৯৭৭ কোটি টাকার ওপর ওই ২৭% বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। টাটা প্রজেক্টস, যারা এই প্রকল্প রূপায়ন করছে, তারা ৪০% কাজ ইতি মধ্যেই সম্পন্ন করেছে।”
তাছাড়া টাটা প্রজেক্টের বাৎসরিক রিপোর্টে বলা হয়েছে তারা নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। কিন্তু তাতে কোথাও বলা হয়নি যে প্রকল্পটি তারা ১ টাকার বিনিময়ে সম্পন্ন করছে। তাদের সব বাৎসরিক রিপোর্ট এখানে দেখা যাবে।
প্রকল্পটি কি মাত্র ১৭ মাসে সম্পন্ন হয়?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১০ ডিসেম্বর, ২০২০তে প্রকল্পটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ বিষয়ে সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ঘোষণা এখানে পড়া যাবে।
লোকসভায় দেওয়া সরকারের জবাব থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্রাথমিক ভাবে, অক্টোবর, ২০২২ এই প্রকল্প শেষ করার সময় সীমা ধার্য করা হয়। কিন্তু সেই সময় সীমা পেরিয়ে গেছে। এখনও পুরনো সংসদ ভবনেই সংসদের অধিবেশন বসছে। ২০২৩-এর বাজেট অধিবেশন সেখানেই অনুষ্ঠিত হয়। এখানে তা দেখা যাবে।
অক্টোবর, ২০২২-এর সময়সীমা রক্ষিত হলেও, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় থেকে ২২ মাস পার হয়ে যেত। তবে, খবরে বলা হয়েছে যে, মোদীর পরিদর্শনে যাওয়া থেকে এটাই অনুমান করা হচ্ছে যে কাজটা শেষ হয়ে এসেছে এবং ওই ভবন শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে।
টাটা গোষ্ঠী ও রতন টাটার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে অনেক সময় ভুয়ো বার্তা ছড়ানো হয়।