সংবাদসংস্থা পিটিআই (PTI) রবিবার (Misreporting) ত্রুটিপূর্ণ রিপোর্ট করে যে, ২০০৮ সালে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির প্রতিবাদে সংসদে আনা অনাস্থা ভোটে মনমোহন সিংহের (Manmohan Singh) ইউপিএ (UPA) সরকারকে বাঁচিয়ে দিতে যে ৬ জন রাজনীতিকে রূপান্তরিত দাগি দুষ্কৃতী ভোট দিয়েছিলেন, আতিক আহমেদ (Atiq Ahmad) তাঁদের অন্যতম।
গত ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে আতিক যখন তাঁর ভাই আসিফ আহমেদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন আততায়ীরা তাঁর উপর গুলিবর্ষণ করে। আতিক ও আসিফকে যখন ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনই সাংবাদিকের ছদ্ম পরিচয় দিয়ে আসা তিন আততায়ী গুলি চালায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ৩ আততায়ী সানি সিংহ, লাভকেশ তিওয়ারি এবং অরুণ মৌর্যকে গ্রেফতার করা হয়।
পিটিআই-এর প্রতিবেদনটি উদ্ধৃত করেছে এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে, আজ তক, অমর উজালা, এবিপি লাইভ, এশিয়া নেট নিউজ, টিভি নাইন হিন্দি, টিভি নাইন মারাঠি, জনসত্তা, এবং দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট অপ ইন্ডিয়া, তৎক্ষণাৎ প্রচার করে।
আবার টুইটারে যখন এক সাংবাদিক পিটিআই-এর এই মারাত্মক ভুলটা ধরিয়ে দেন, তখন পিটিআই পরের দিনই এর সম্পূর্ণ বিপরীত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সংস্কার করা পিটিআই-এর ওই দ্বিতীয় প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়, “‘ভারতীয় রাজনীতির বাহুবলীরা বুলেট থেকে ব্যালটে’—এই বইটি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে রবিবার পিটিআই রিপোর্ট করেছিল যে আতিক আহমেদ তার মূল্যবান ভোটটি কোণঠাসা ইউপিএ সরকারকে বাঁচাতে প্রয়োগ করেছিল। তবে সংসদের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এই রিপোর্টটা ভুল ছিল।”
উল্লেখ্য, জনৈক রাজেশ সিংহ-এর লেখা উপরোক্ত বইটি থেকেই ওই ভুল তথ্য পিটিআই আহরণ করে।
বুম নিজে থেকে অবশ্য বইটির ওই দাবি যাচাই করে দেখেনি।
বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিআই লিখেছিল— “২০০৮ সালে আস্থা ভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে মরিয়া মনমোহন সিংহ পরিচালিত সরকার দেশের সবচেয়ে কুখ্যাত ৬ জন রাজনীতিকে পরিণত অপরাধীর সমর্থন পাওয়ার আর্জি জানায়। এদের মধ্যেই একজন ছিলেন আতিক আহমেদ, যিনি সে সময় উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত সমাজবাদী পার্টির সাংসদ, যাঁর ইয়া বড় গোঁফ এবং যিনি সাফারি সুট পরতে ভালবাসেন। তত দিনে রাজনীতি এবং অপরাধ জগত, উভয় ক্ষেত্রেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলা আতিক ইউপিএ-কে সমর্থনে তাঁর কর্তব্যে অবহেলা করেননি।”
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই ২০০৮ সালের জুলাই মাসে ইউপিএ সরকারকে আস্থা ভোটে আতিকের সমর্থন দেওয়ার খবরটি ভুয়ো। বস্তুত, লোকসভার নথিতে দেখা যাচ্ছে, আতিক বরং আস্থা-ভোটে কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছিলেন।
সোমবার এই ভুয়ো খবরটি সর্বপ্রথমে টুইট করে পর্দাফাঁস করেন সাংবাদিক আরিশ ছাবরা মারফত।
২০০৮ সালে আস্থা-ভোট ইউপিএ সরকারই জিতেছিল
২০০৮ সালের ৮ জুলাই ইউপিএ সরকারের সমর্থনকারী বাম জোটের সিপিআই, সিপিআইএম, ফরোয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তির প্রতিবাদে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। এ ব্যাপারে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে এবং এখানে।
এর ফলে ইউপিএ সরকার লোকসভায় প্রয়োজনীয় গরিষ্ঠতা ২৭২টি আসন থেকে ৪৪টি কমে যায়। আস্থা-ভোটে জয়-পরাজয় এত নির্ণায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে, অসুস্থ এমনকী জেলবন্দি সাংসদদেরও ভোট দেওয়াতে নিয়ে আসা হয়, জানাচ্ছে বিবিসি। আস্থা-ভোটে জিততে ইউপিএ সরকার মুলায়ম সিংহ যাদবের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টিরও সাহায্য প্রার্থনা করে।
শেষ পর্যন্ত দুই দিনের ঝোড়ো অধিবেশনের পর ২২ জুলাই ইউপিএ সরকার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ২৭৫টি ভোট পায়, বিরুদ্ধে পড়ে ২৫৬টি ভোট।
লোকসভার নথি বলছে, আতিক আহমেদ ইউপিএ-এর বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছিলেন
লোকসভার ডিজিটাল লাইব্রেরিতে বুম আস্থা-ভোটে ভোটাভুটির নথি খুঁজে দেখেছে। আপনারাও দেখতে পারেন এখানে।
২১ জুলাই ড. মনমোহন সিংহ প্রস্তাবিত আস্থা-ভোটের উপর মন্ত্রিপরিষদে আলোচনার বিবরণী এবং ভোটাভুটির সংসদীয় ছবিটা নীচে দেখতে পারেন।
নথিতে দেখা যাচ্ছে, আতিক আহমেদ ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন এবং বিরোধী ভোটারদের তালিকাতেই তাঁর নাম রয়েছে।
সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় সমাজবাদী পার্টি আতিককে বহিষ্কারও করে
২০০৮ সালের বিভিন্ন সংবাদ-প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করায় সমাজবাদী পার্টি আতিক আহমেদ সহ ৬ জনকে দল থেকে সে সময় বহিষ্কারও করেছিল। এই বহিষ্কৃতরা ছিলেন জয় প্রকাশ (মোহনলালগঞ্জ), এস পি সিংহ বাঘেল (জলেশ্বর), রাজনারায়ণ বুধোলিয়া (হামিরপুর), আফজল আনসারি (গাজিপুর), আতিক আহমেদ (ফুলপুর) এবং মুনাব্বর হাসান (মুজফ্ফরনগর)। ২০০৮ সালের ২৫ জুলাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ কথাই জানানো হয়। আরও জানতে পড়ুন এখানে।