২০১৯-এ আয়োজিত কলকাতা 'প্রাইড ওয়াক' (Kolkata pride walk) এর সময় তোলা একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটিতে লিঙ্গ-সাম্য (gender rights) আন্দোলনের এক কর্মীকে সাহসী ভাবে শাড়ি পরে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নেটিজেনরা তাঁকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনের (Anti-CAA-Protests) সময় দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএননইউ)(JNU) ছাত্রী বলে ভুলভাবে সনাক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে যে, উনি হিন্দু সংস্কৃতির (hindu culture) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন।
ওই ব্যক্তির অদ্ভুত পোশাকের সমালোচনা করেছেন নেটিজেনরা। সেই সঙ্গে, তাঁরা আরও বলেছেন যে, জেএনইউ-র ছাত্রছাত্রীরা, যাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করেন, তাঁরা এই ভাবে সাড়ি, টিপ আর সিঁদুর পরার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ছবিটি একটি হিন্দি ক্যাপশন সমেত শেয়ার করা হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে, "এই ছবিটি দেখে আপনি কিছু বুঝতে পারবেন না। তাই বুঝিয়ে বলা প্রয়োজন। এঁরা হলেন জেএনইউর প্রগতিশীল ছাত্রছাত্রী। এঁরা শাড়ি পরা, টিপ লাগানো আর সিঁদুর পরার বিরুদ্ধে। এ সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয় না। পেছনে দেখুন। একটি ছেলে প্রথাগত পোশাক (গেরুয়া ধুতি, কুর্তা) পরে আছে। এবং তার নাকে নাকছাবি লাগানো রয়েছে। বোঝানো হচ্ছে এই পোশাক মেয়েদের জন্য। ছেলেদের এই পোশাকের বিরোধিতা করা উচিৎ। এই সব গিমিক দেখানো হয় সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভের সময়। সিএএ-র সঙ্গে এর কি সম্পর্ক? জেএনইউ-র শিক্ষার সঙ্গে এর কি সম্পর্ক? হিন্দু সংস্কৃতিকে কি প্রতিরোধ করা যায়? আজকের বামপন্থীদের এ এক মানসিক অসুখ।
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: ''फ़ोटो आपको समझ नही आएगा....हम समझाते है...ये #JNU के प्रगतिशील छात्र है इनका विरोध है कि हिन्दू महिलाएं साड़ी, बिंदी, ओर सिंदूर क्यो लगाती है...इसका विरोध करने सड़क पर निकले है...रुकिए रुकिए...कहानी अभी खत्म नही हुए...पीछे नजर घुमाईये..एक लड़का एक शास्त्रीय ड्रेस (भगवा धोती, कुर्ता) पहने है और नाक में बाली ओर मांग में सिंदूर डाले है...उसका यह विरोध है कि यह ड्रेस महिलाओं की है ओर इसका विरोध पुरुषों को करना चाहिए...आपको पता है ये नौटँकी कब की गई....#CAA के विरोध के समय.....अब आप सोचिये इसका CAA से क्या सम्बन्ध?? इसका JNU की पढ़ाई से क्या सम्बन्ध?? इसका #हिन्दू_संस्कृति से क्या विरोध??यह #मानसिक_विकृत है जिसे आज #वामपंथ कहते है'')
একই বক্তব্য সমেত ছবিটি টুইটারেও শেয়ার করা হচ্ছে। একটি টুইটে বলা হয়েছে, "জেএনইউ-র প্রগতিশীল ছাত্ররা হিন্দু মেয়েদের শাড়ি, টিপ ও সিঁদুর পরার বিরোধী। একটি ছেলে গেরুয়া ধুতি আর কুর্তা পরে আছে। তার নাকে নাকছাবি। ছেলেরা হিন্দু মেয়েদের বিরোধিতা করছে। জেএনইউ হিন্দু সংস্কৃতির বিরোধী। এটি এক ধরনের মানসিক বিকৃতি যাকে বামপন্থা বলা হয়।"
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে, সংবাদ ওয়েবসাইট 'খাস খবর'-এ প্রকাশিত একটি লেখা দেখতে পাওয়া যায়। লেখাটির সঙ্গে দেওয়া ছবিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তাঁকে পাঞ্চালী কর (Pancahli Kar) বলে সনাক্ত করা হয়। তিনি একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব, লিঙ্গ-সাম্য অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের কর্মী এবং কলকাতায় বসবাসকারী একজন বহুমুখী স্বরূপ নারীবাদী (intersectional feminist)। লেখাটির বিষয় ছিল, সোশাল মিডিয়ায় পাঞ্চালীর প্রথাভাঙ্গা ও বিতর্কিত পোস্ট।
বুম পাঞ্চালীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ছবিটি সিএএ-বিরোধী এক বিক্ষোভের সময় তোলা, সেই দাবি উনি উড়িয়ে দেন। উনি আরও বলেন যে, এটি হিন্দু সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদের ছবি নয়। "২০১৯ থেকে এই ছবিটি ঘুরছে। ওটি কলকাতার প্রাইড ওয়াকে তোলা হয়। হ্যাঁ, প্রাইড ওয়াকে সিএএ-বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। কারণ, প্রাইড এলজিবিটিকিউআইএ (LQBTQUIA+)-দের অধিকারের এবং সংখ্যাগরিষ্ঠবাদের চাপিয়ে দেওয়া নির্যাতনের বিরোধিতা করে। জেএনইউ-র সঙ্গে ছবিটির কোনও সম্পর্ক নেই।"
কলকাতা প্রাইড ২০১৯-এর ফেসবুক প্রোফাইলে আমরা তাঁকে একই পোশাকে দেখতে পাই।
কলকাতা প্রাইড ওয়াক প্রতি বছরই শহরে সংঘটিত হয়। সেই প্যারেডে বা পদযাত্রায় এলজিবিটিকিউআইএ+ মানুষদের চাহিদাগুলিকে তুলে ধরা হয়। ২০১৯ সালের ওই অনুষ্ঠানে সিএএ-বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু হিন্দু সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তি সহ ছড়াল মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের জন্মদিনে দিলীপ ঘোষের শুভেচ্ছা