সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে (UAE) ব্যাঙ্ক অব বরোদার (Bank of Baroda) একটি শাখার বাইরে গ্রাহকদের লম্বা লাইনের ছবি ভাইরাল করে ভুয়ো (false claim) দাবি করা হচ্ছে, ব্যাঙ্কের প্রধান আধিকারিক আদানিদের (Adani) ঋণ দেওয়া বহাল রাখবে ঘোষণা করায় আমানতকারীরা ব্যাঙ্ক থেকে তাঁদের আমানত তুলে নেওয়ার জন্য লাইন দিয়েছেন।
বুম দেখে ভাইরাল দাবি ভুয়ো এবং ব্যাঙ্কের বাইরের ওই লাইনের সঙ্গে আদানি-হিন্ডেনবার্গ (Hindenburg Research) বিতর্কের কোনও সম্পর্কই নেই।
ছবিতে আবু ধাবির আল-আইনে অবস্থিত ব্যাঙ্ক অব বরোদার শাখাটি ২২ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে গ্রাহকদের আমানত তুলে নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। আবু ধাবিরই অন্য একটি শাখায় এই শাখার কাজকর্ম হস্তান্তরিত হতে চলেছে।
গৌতম আদানি পরিচালিত আদানি গোষ্ঠীর এই বছরটা ভালো কাটছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ গবেষণা সংস্থা গত কয়েক দশক ধরে এই গোষ্ঠীর শেয়ার দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেখিয়ে শেয়ার-বাজারকে প্রতারণা ও বিপথগামী করার অভিযোগ আনার পরেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর হু-হু করে পড়তে থাকে| শেয়ার বাজারে আদানি গোষ্ঠীর লোকসানের বহর দাঁড়ায় ১ লক্ষ কোটি ডলার এবং গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যবসায়ী থেকে নেমে প্রথম ২০ জনের বৃত্তেও ঠাঁই পাচ্ছেন না।
এত কিছুর পরেও এই ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকেই ব্যাঙ্ক অব বরোদার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সঞ্জয় চাঢাকে বলতে শোনা যায় যে, এর পরেও তাঁদের ব্যাঙ্ক গৌতম আদানিকে ঋণ দিতে প্রস্তুত এবং আদানিদের শেয়ার ঘিরে বাজারের অস্থিরতা দেখে তাঁরা আদৌ বিচলিত বা উদ্বিগ্ন নন। ভাইরাল ছবিটি এই প্রেক্ষাপটেই| এ ব্যাপারে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে।
ফেসবুকে এই দীর্ঘ লাইনের ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, “আদানিদের জালিয়াতির ঘটনা উন্মোচিত হওয়ার পরেও ব্যাঙ্ক অব বরোদার সিইও তাদের ঋণ দেওয়া অব্যাহত রাখবে ঘোষণা করার পর আমানতকারীরা আবু ধাবির আল-আইন শাখা থেকে তাঁদের আমানত তুলে নেওয়ার জন্য লাইন দিয়েছেন। অপরাধীদের সংসদে নির্বাচিত করার এই হচ্ছে পরিণাম।”
এরকম একটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে।
টুইটটি দেখুন এখানে।
টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি ভুয়ো এবং ভাইরাল হওয়া ছবিটার সঙ্গে আদানি-হিন্ডেনবার্গ বিরোধের কিংবা ব্যাঙ্ক অব বরোদার সিইও-র তরফে আদানিদের টাকা ধার দেওয়া সংক্রান্ত বিবৃতির কোনও সম্পর্ক নেই।
বরং আমরা একটি ফেসবুক পোস্টের ‘জবাব’ অংশে রিজ কুরেশি নামের এক ব্যক্তির উল্লেখে পাই যে, আল-আইন থেকে ব্যাঙ্ক অব বরোদার শাখাটি আবু ধাবিরই অন্য ঠিকানায় স্থানান্তরিত হচ্ছে বলে এই শাখাটি ঝাঁপ ফেলে দিচ্ছে।
কুরেশির পোস্ট-এর ক্যাপশনে লেখা, “সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ব্যাঙ্ক অব বরোদার আল-আইন শাখাটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং সেটি আবু ধাবিতে স্থানান্তরিত হচ্ছে... সোশাল মিডিয়ায় আদানিদের নিয়ে যে খবর রটছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক নেই।”
শাখাটির প্রধান ম্যানেজার মহেশ নায়ডুর গ্রাহকদের উদ্দেশে লেখা একটি বিজ্ঞপ্তির স্ক্রিনশটও খুরেশি তুলে দিয়েছেন, যাতে আল-আইন শাখার বর্তমান আমানতকারীদের আমানতগুলি ২৩ মার্চ থেকে আবু ধাবির শাখাটিতে স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ার আশ্বাস রয়েছে।
বুম ব্যাঙ্ক অব বরোদার যাচাই করা টুইটারঅ্যাকাউন্টে ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি বিবৃতিও দেখেছে, তাতে ভাইরাল পোস্টের দাবিটিকে ভুয়ো বলে নস্যাৎ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে ব্যাঙ্কের মুখপাত্র জানাচ্ছেন, “এক বছর আগেই ব্যাঙ্ক অব বরোদা একটা বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আল-আইনের শাখাটি বন্ধ করে দেওয়ার, সম্প্রতি ব্যাংকের সদর-দফতর থেকে যার অনুমোদনও মিলেছে। তদনুযায়ী ব্যাঙ্কের আল-আইন শাখাটি আগামী ২৩ মার্চ, ২০২৩ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ব্যাঙ্কের কাজকর্ম যাতে মসৃণভাবে চলতে পারে, সে জন্য বর্তমান আমানতকারীদের সব আমানতই আবু ধাবির অন্য শাখাটিতে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হচ্ছে।”
আমানতকারীদের উদ্দেশে আরও বলা হয়েছে যে, কেউ যদি এই স্থানান্তরের কারণে তাঁর আমানত বন্ধ করে দিতে চান, তবে ২২ মার্চ-এর আগেই তিনি তা করতে পারেন, এ জন্য তাঁকে কোনও পেনাল্টি দিতে হবে না। এই কারণেই লোকে ব্যাংকের সামনে লাইন দিয়েছে। বিবৃতিতে সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো গুজবে কান না-দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে।
ভাইরাল ছবিতে দেখানো ব্যাঙ্কটি ঠিক কোথায়, গুগল ম্যাপস-এ বুম সেটাও নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছে l ছবিটিতে ব্যাঙ্ক অব বরোদার আল-আইন শাখার সাইনবোর্ডের পাশেই ভিআইপি জেরক্সিং অ্যান্ড স্টেশনারি লেখা বোর্ড গুগল ম্যাপসে দেখানো হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ছবির সঙ্গে গুগল ম্যাপস-এর ছবির তুলনা নীচে দেওয়া হলো।
২৫ ফেব্রুয়ারি এই ছবিটাই সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে বসবাসকারী তাসিল নামে এক ব্যক্তি টুইট করেন, যিনি জানান, তিনি যখন কাছাকাছি একটি বইয়ের দোকানে অন্য কাজে গিয়েছিলেন, তখন ব্যাংকের সামনে গ্রাহকদের ওই দীর্ঘ লাইন তাঁর চোখে পড়েছিল।
বুম তাসিল নামে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করেন যে তিনিই ছবিটি তুলেছিলেন।