RTI থেকে জানা গেছে গুজরাতের মোরবী জেলায় সেতু দুর্ঘটনায় মৃতদের দেওয়া ক্ষতিপূরণের থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্ঘটনা পরিদর্শনে আসায় বেশি খরচ হয়েছে দাবি করে সম্প্রতি এক ভুয়ো গুজরাতি সংবাদপত্রের আদলে তৈরি ছবি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল সেই সংবাদপত্রের ছবিটি ভুয়ো এবং এমন কোনও RTI-এর উত্তর সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সাকেত গোখলেও ভাইরাল সেই ছবি টুইট করলে আনন্দবাজার পত্রিকার তরফে সেই ভুয়ো দাবির ভিত্তিতে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটির শিরোনাম হিসেবে লেখা হয়, "'ক্ষতিপূরণের চেয়ে বেশি খরচ মোদীর মোরবী পরিদর্শনে'।
ডিসেম্বর ২, ২০২২ প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার ৭ নম্বর পাতার ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, "বিরোধীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সেই সময়কার মোরবী সফর ঘিরে প্রশাসনের ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছিল, তা তথ্যের অধিকার আইনে জানতে চাওয়া হয়েছিল। যে উত্তর পাওয়া গিয়েছে, তা বেশ কিছু স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।"
প্রতিবেদনটিতে আরও লেখা হয়, "তার ভিত্তিতেই আজ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সাকেত গোখলের করা টুইটে বলা হয়েছে, ১৩৫ জন মৃতের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে প্রশাসনের খরচ হয় পাঁচ কোটি টাকা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য রাতারাতি রাস্তা মেরামত করতে গিয়েই ১১ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। মোদী আসবেন বলে মোরবীর হাসপাতালের ভোল পাল্টাতে (রং করা, সাফাই, আহতদের জন্য নতুন শয্যা ও শয্যার চাদর, জলের কুলার বসানো) খরচ হয় ৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে তিন কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য আড়াই কোটি টাকা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট খাতে দু'কোটি টাকা এবং সফরের ছবি তোলানোর জন্য গুজরাত প্রশাসনের ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে ওই টুইটে দাবি করা হয়।"
এছাড়াও একই দিনে আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণেও এই খবরটি প্রকাশিত হয়।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সাকেত গোখলের করা টুইটটি নিচে দেখতে পাওয়া যাবে।
টুইটটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
প্রসঙ্গতঃ, আমরা ড্যাক্স প্যাটেল নামের এক টুইটার ব্যবহারকারী একই দাবি করে ভাইরাল সেই সংবাদপত্রের ছবিটি টুইট করেন বলে দেখতে পাই। ওই টুইটের নিচে অন্য এক টুইটার ব্যবহারকারী সংবাদপত্রের ছবিটি কোন প্রকাশনা সংস্থার জানতে চাইলে ড্যাক্স প্যাটেল নামের টুইটার ব্যবহারকারীটি জানান ছবিটি গুজরাত সমাচার পত্রিকার।
টুইটগুলির আর্কাইভ এখানে দেখতে পাওয়া যাবে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে এবিষয়ে জানতে কীওয়ার্ড সার্চ করে দেখে ভাইরাল হওয়া সংবাদপত্রের ছবিটি ভুয়ো এবং গুজরাত সমাচার অথবা ওই রাজ্যের অন্য কোনও পত্রিকায়ও এমন খবর প্রকাশিত হয়নি।
এছাড়াও আমরা ভাইরাল হওয়া খবরটির সত্যতা যাচাই করতে গুজরাত সমাচারের আহমেদাবাদ অফিসের সাথে যোগাযোগ করি। ওই পত্রিকার প্রধান রিপোর্টার মুকুল পাণ্ড্য এবিষয়ে বুমকে জানান সংবাদপত্রের এই ছবিটি ভুয়ো এবং গুজরাত পুলিশ এবিষয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।
পাণ্ড্য বুমকে বলেন, "আমরা ভাইরাল ছবিটি দেখেছি। গুজরাত সমাচারের কোনও সংস্করণেই এমন খবর প্রকাশিত হয়নি। অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ এটি তৈরি করে দাবি করে আমাদের পত্রিকায় এই খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা সত্যি নয়।"
তিনি আমাদের আরও জানান, "যদি আপনি ছবিটি লক্ষ্য করেন, তাহলে কোথাও গুজরাত সমাচার লেখা দেখতে পাবেন না। ওই ছবির সাথে আমাদের পত্রিকার ধরণশৈলীর মিল থাকলেও লেখার ফন্টটি কিন্তু আলাদা। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিতে এই বিষয়গুলি উল্লেখ করে আহমেদাবাদ পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলে জানিয়েছি।"
আহমেদাবাদ পুলিশের সাইবার সেলের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এক সরকারি সূত্র আমাদের নিশ্চিত করে যে ছবিটি নিয়ে তদন্ত চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র অফিসার বলেন, "ছবিটির বিষয়ে আমরা একটি স্বতঃপ্রণোদিত তদন্ত শুরু করেছি এবং ছবিটি পোস্ট করা ড্যাক্স প্যাটেল নামের এক টুইটার অ্যাকাউন্টেও আমরা নজর রেখেছি। গুজরাত সমাচার আমাদের জানিয়েছে তারা এই খবর প্রকাশ করেনি। বিস্তারিত জানার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি"।
মোরবী জেলার ম্যাজিস্ট্রেট জিটি পান্ড্যও বুমকে নিশ্চিত করে বলেন তার অফিসে এই ধরনের কোনও RTI দায়ের করা হয়নি।
পান্ড্য জানান, "এটি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং বানানো খবর। ছবিটি বলছে দীপক প্যাটেল নামের একজন এই বিশদ বিবরণের জন্য একটি RTI দায়ের করেছেন। কিন্তু আমাদের রেকর্ড দেখায়, কেউই খরচের বিশদ বিবরণ দেওয়ার জন্য RTI দায়ের করেননি।"
যদিও উল্লিখিত খরচগুলি সত্যি কিনা জানতে চাইলে জিটি পান্ড্য মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য যাচাই সংস্থা পিআইবি ফ্যাক্টচেকের তরফেও এই দাবিটি খণ্ডন করা হয়। তারা লেখে, "একটি RTI-এর উল্লেখ করে এক টুইটে প্রধানমন্ত্রীর মোরবী সফরে ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে দাবি করা হয়। দাবিটি ভুয়ো। এমন কোনও RTI জবাব দেওয়া হয়নি।"